ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কি আশায় বাঁধি খেলাঘর!

প্রকাশিত: ০০:২৮, ২০ অক্টোবর ২০২১

কি আশায় বাঁধি খেলাঘর!

আগের ৬ বিশ্বকাপে অনেক আশার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় ন্যুব্জ করা মাথা নিয়ে বিমর্ষ বদনে ফিরতে হয়েছে। যদিও শুরুটা হয়েছিল ইতিহাসের প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে স্বপ্নের মতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো পরাক্রমশালী দলকে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সেবার সুপার এইটে ওঠাই এখন পর্যন্ত টি২০ বিশ্বকাপের সব আসর খেলা বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। টি২০ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভোর দলকে হারিয়ে দেওয়া আফতাব আহমেদ, মোহাম্মদ আশরাফুল ও সাকিব আল হাসানরা তারপর আরও ৫ বিশ^কাপ খেলেছেন, আর কোন টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারাতেই পারেনি। উল্টো হারের গøানি সঙ্গী হয়েছে ২০০৯ সালে আয়ারল্যান্ড ও ২০১৪ সালে হংকংয়ের মতো আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের বিপক্ষে। টি২০ ক্রিকেটে ১৫ বছর পেরিয়ে যাওয়া আইসিসির পূর্ণ সদস্য বাংলাদেশ দল গত ২১ বছর ধরে টেস্ট অঙ্গনেও বিচরণ করছে। তাই এবারই প্রথম বিশ^কাপে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিতে যাওয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অতীতের সব ব্যর্থতা মুছে দিয়ে সেরা অর্জন এনে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন মিশনে যাওয়ার আগে। সেটা বলার মতো রসদ পেয়েছিলেন টানা ৩ সিরিজে জিম্বাবুইয়ের পাশাপাশি পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারানোর কারণে। এবার বিশ্বকাপ মঞ্চে নেমেই জোর ধাক্কা খেয়েছে অতি আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। এবার আরেক সহযোগী সদস্য দেশ স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে মিশন শুরু। প্রাথমিক রাউন্ড পেরোনোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। পরের দুই ম্যাচে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে শুধু জিতলেই চলবে না, ব্যবধানটা হতে হবে বড় এবং অপেক্ষায় থাকতে হবে বাকি ম্যাচের ফলাফলের জন্য। সেই প্রত্যাশা কি পূরণ হবে এবার? টি২০ ক্রিকেটে যেখানে চার-ছক্কার বৃষ্টি হওয়ার কথা সেখানে মান্ধাতা আমলের ধীর ব্যাটিংয়ে প্রথম ম্যাচ হেরে বাংলাদেশ দল এখন যে বার্তা দিচ্ছে, তা হচ্ছে- কি আশায় বাঁধি খেলাঘর? অশনি সঙ্কেত পাওয়া গেছে এবার টি২০ বিশ^কাপের অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচেই। খর্বশক্তির দলে পরিণত হওয়া শ্রীলঙ্কার কাছে শেষ কয়েক ওভারের বেহাল বোলিংয়ে প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচেও হেরে যায় বাংলাদেশ। আর মাত্র কিছুদিন আগে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আয়ারল্যান্ডের কাছে সহজ আত্মসমর্পণ ৩৩ রানে। এ দুই ম্যাচে হারের পরও সতর্ক হয়নি বাংলাদেশ দল। যুক্তি ছিল- নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, অপরিহার্য অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান খেলেননি এবং আরেক অপরিহার্য পেসার মুস্তাফিজুর রহমান এক ম্যাচে অনুপস্থিত ছিলেন। তাই আত্মবিশ্বাসে বিন্দুমাত্র চিড় ধরেনি বাংলাদেশ দলের। তাছাড়া সঙ্গী ছিল ওমানের আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে ওমান একাদশের বিপক্ষে ৬০ রানের জয় তুলে নেওয়ার মেকি তৃপ্তির ঢেকুর। প্রাথমিক রাউন্ডের ভেন্যুতে এ জয় এসেছে বলেই এমন তৃপ্তি! অথচ ওমানের মূল দলটিই যেখানে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টায় আছে, সেখানে তাদের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে জয় পাওয়াকে বড় করে দেখাটাই কাল হয়েছে। স্কটিশরা বলে-কয়ে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ব্যবধানটা যদিও ৬ রানের, কিন্তু সেটি পিছিয়ে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ দলকে ৯ বছর আগে। ২০১২ সালেও স্কটদের কাছে একমাত্র টি২০ ম্যাচে দ্য হেগে ৩৪ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। এই ম্যাচের আগে স্কটিশ কোচ অনেক বুঝে-শুনেই মানসিক খেলাটা খেলেছেন, ঘোষণা দিয়েছেন- ওমান কিংবা পাপুয়া নিউগিনির চেয়ে বড় মাপের দল নয় বাংলাদেশ। কারণ তারা সবাই এখন প্রাথমিক রাউন্ড খেলবে। আর অফিসিয়াল দুই প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও স্কটিশরা প্রায় সমশক্তির হল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষে সহজ জয় পায়। সবমিলিয়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা দলটি শেষ পর্যন্ত এবার বাংলাদেশের বিশ^কাপ মিশনকে দুঃশ্চিন্তার কালো চাদরে ঢেকে দিয়েছে অনাহূত পরাজয়ের কালিমা লেপন করে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরুর পরও অনেকে ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ডের ইতিহাস টেনে আনছেন। সেবারও প্রাথমিক রাউন্ডে হংকংয়ের মতো দলের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে এরপরও উঠে যায় সুপার টেনে। কিন্তু আগেই আফগানিস্তান ও নেপালের বিপক্ষে ভাল ব্যবধানে জিতে যাওয়ায় সেবার ৪ দলের মধ্যে শীর্ষস্থানে থাকা কঠিন হয়নি। এবার শীর্ষ ২ দলের সুযোগ সুপার টুয়েলভে খেলার। সেজন্য পরের দুই ম্যাচে জিতলেই হবে। শেষ পর্যন্ত তা এখন সত্য হওয়ার জন্য অপেক্ষায়ই করতে হবে দুরু দুরু বুকে। স্বাগতিক ওমান শুরুটা করেছে সেরা একটি দলের মতোই। বাছাইয়ের সেরা পাপুয়া নিউগিনিকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে। তাই প্রথম ম্যাচ শেষে আপাতত প্রাথমিক রাউন্ডের ‘বি’ গ্রæপে সেরা দুই দল ওমান ও স্কটল্যান্ড। এ দুই দলের একজনকে হটিয়ে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে এখন পরের দুই ম্যাচেই ভাল ব্যবধানে জিততে হবে। কারণ ওমান যদি স্কটদের, স্কটরা যদি পিএনজিকে হারিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে সমীকরণের মারপ্যাঁচে পড়তে হবে। তখন বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড ও ওমানের পয়েন্ট হবে সমান ৪ করে। রানরেটে এগিয়ে থাকা শীর্ষ ২ দল যাবে সুপার টুয়েলভে। ২০০৭ সালে প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেই আসর থেকেই খেলছে বাংলাদেশ। প্রথম আসরেই সুপার এইটে উঠে নিজেদের সেরা সাফল্য পেয়েছে টাইগাররা। ১২ দলের মধ্যে অষ্টম হয় সেবার। এরপর ২০০৯, ২০১০, ২০১২ সালের ৩ আসরেই গ্রæপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ দল। ২০১৪ সালে স্বাগতিক দল হিসেবে খেলেছে বাংলাদেশ। সেবারই প্রথম ১৬ দলের টুর্নামেন্ট হয়েছে। এ আসর থেকেই শুরু হয় প্রাথমিক রাউন্ডের প্রচলন। ২০১৪ ও ২০১৬ সালের দুই আসরেই বাংলাদেশ প্রাথমিক রাউন্ড পেরিয়ে সুপার টেনে খেলেছে। ৫ বছর বিরতি দিয়ে আবার আরেক টি২০ বিশ্বকাপ। এবার কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে ফরমেটে। এবার হবে সুপার টেনের পরিবর্তে সুপার টুয়েলভ। আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য সেই সেই পর্বে সরাসরি খেলবে নির্দিষ্ট সময়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আটে থাকারা। বাকি ৪ দল আসবে প্রাথমিক রাউন্ডের দুই গ্রæপ থেকে। ইনজুরি সমস্যায় নিজে থেকে নাম প্রত্যাহার করায় দলটিতে নেই অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। একেবারে প্রথমবার এই বিশ্বকাপ খেলবেন ৮ ক্রিকেটার। আর এটি নিয়ে ৭ বিশ^কাপই খেলা মুশফিকুর রহিম, সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর ওপর যত আশা-ভরসা সবার। প্রথম ম্যাচে তার প্রতিফলন দেখানে পারেননি তারা। যদিও এ ৩ জনই পারফর্ম করেছেন, কিন্তু অভিজ্ঞতা দিয়ে দলকে জিতিয়ে ফিরতে পারেননি। টি২০ বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে গত ৬ আসরে ২৫ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে মাত্র ৫ জয়ের বিপরীতে আছে ১৯ পরাজয় এবং একটি ম্যাচ হয় পরিত্যক্ত। তবে সুপার এইট, সুপার টেন পর্বে (প্রাথমিক রাউন্ড ব্যতীত) কোন ম্যাচই টি২০ বিশ্বকাপে জিততে পারেনি বাংলাদেশ দল। আর সে কারণে ভাল কোন সাফল্য আসেনি। এবারও শুরুটা আশাব্যঞ্জক হয়নি সেমিতে খেলার উচ্চাশা প্রকাশ করা বাংলাদেশ দলের। এখন চ্যালেঞ্জ প্রাথমিক রাউন্ডের গন্ডি পেরিয়ে লজ্জা এড়ানোর!
×