ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাজিমাত করতে পারেন যারা...

প্রকাশিত: ০০:২৬, ২০ অক্টোবর ২০২১

বাজিমাত করতে পারেন যারা...

আন্দ্রে রাসেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ॥ ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের মন্ত্রই এমন। সব সময় হাসি-তামাশা, নাচ-গানে মত্ত থাকেন বেশিরভাগ ক্রিকেটার। তবে অন্যদের চেয়ে এদিক থেকে বেশি এগিয়ে তারকা অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। লড়াকু এই ক্রিকেটারের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ভরপুর। টি২০ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুকুট ধরে রাখার মিশনে রাসেল হতে পারেন দলটির সেরা অস্ত্র। অলরাউন্ডার হওয়ার সুবাদে দলের প্রাণভোমরা তিনি। কখনও ব্যাটিংটা মনের মতো না হলেও, বল হাতে সেটা পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। আবার কোনদিন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ঘায়েল করতে না পারলে, ব্যাট হাতে সেটা পুষিয়ে দেন। সাম্প্রতিক সময়ে নিজের পারফরমেন্সের গ্রাফটাকে আরও ঊর্ধ্বমুখী করেছেন রাসেল। জস বাটলার (ইংল্যান্ড) ॥ টি২০ বিশ্বকাপের আগের ছয় আসরে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের জনকরা পল কলিংউডের নেতৃত্বে ২০১০ শিরোপা জিতেছিল। ওই সাফল্যের পর অবশ্য রঙিন পোশাকে বড়ই বিবর্ণ হতে থাকে ক্রিকেটের জনকরা। ২০১১ ও ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের গ্রæপ পর্ব থেকে বিদায় সেটারই স্বাক্ষ্য দেয়। তবে সেই ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেরে একঝাঁক তরুণ সাহসী ক্রিকেটার নিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইংলিশরা। এদের মধ্যে শীর্ষ নাম জস বাটলার। মারমার কাটকাট ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু থেকেই সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে বেশ নামডাক কুড়াতে থাকেন বাটলার। যে কোনো পজিশনে নেমে হাত খুলে খেলার সামর্থ্য থাকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই দলের নিয়মিত সদস্যদের একজন হয়ে উঠেছেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। বোলারদের তুলোধুনো করতে তার যেন জুড়ি মেলা ভার। চলমান বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা তারকা হতে পারেন বাটলার। মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া) ॥ টি২০ মূলত ব্যাটসম্যানদের খেলা হলেও অনেক সময় নিজ দক্ষতায় বোলাররাও ম্যাচের গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিয়ে থাকেন। এমনই এক তারকা মিচেল স্টার্ক। এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সাফল্যের অনেকখানিনির্ভর করছে তার গতি ঝড়ের ওপর। অস্ট্রেলিয়ার ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার পথে বল হতে বড় অবদান রেখেছিলেন স্টার্ক। হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। বিশ্বমঞ্চে সেবার প্রথম আলোড়ন তুললেও, স্টার্কের নাম-খ্যাতি-যশ ছড়িয়ে পড়ে আরও আগেই। বর্তমান বিশ্বে প্রতিনিয়ত ঘণ্টায় যে গুটিকয়েক বোলার ১৪০ এর বেশি কিলোমিটার গতিবেগে বল করে যেতে পারেন তাদের একজন স্টার্ক। কখনও কখনও ১৫০ প্লাস গতিতেও ছুড়তে থাকেন বল। তাতে ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো নাজেহাল হয়ে পড়েন। এবারের বিশ্বকাপ শুরুর আগে আইপিএল খেলেননি স্টার্ক। নিজের সেরাটা জমিয়ে রাখতেই হয়ত তার এ কৌশল। জমিয়ে রাখা শক্তি দিয়ে অসিদের হয়ে বিশ্বকপের মঞ্চে রাঙাতে চাইবেন বাঁহাতি এই পেসার। জসপ্রিত বুমরাহ (ভারত) ॥ ২০০৭ সালে টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত। এরপর হওয়া পাঁচ আসরে আর ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারেনি উপমহাদেশের ক্রিকেট পরাশক্তিরা। এবারের সপ্তম আসরের আয়োজক ছিল ভারতই। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে আসরটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে আইসিসি। যেখানে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন বুনছে ভারত। এই মিশনে তারকায় ঠাসা দলটির প্রাণভোমরা হতে পারেন তারকা পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। শুরুতে নতুন বল কিংবা শেষের পুরনো বল-যখনই বুমরাহর ডাক পড়ে, তখনই নিজের মুন্সিয়ানা দেখান তিনি। এছাড়া ইন-সুইং, আউট-সুইং, রিভার্স-সুইং, ইয়র্কার, বাউন্সার-এক পেসারের পারফেক্ট কম্বিনেশন যেন এই বুমরাহ। ভারতীয় অধিনাক বিরাট কোহলির হাতে মোহাম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো আরও মানসম্পন্ন পেসার থাকলেও, বুমরাহই হবেন নিশ্চিত করে তুরুপের তাস। শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান) ॥ যুগে যুগে পাকিস্তানের ক্রিকেটে এসেছে বিশ্বখ্যাত তারকা পেসার। এদের মধ্যে অন্যতম ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার, ফজল মাহমুদ, মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমিররা। এখন সেই ধারায় কিছুটা ভাটা পড়লেও বেশ কয়েকজন প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার পুরনো দিনের স্মৃতি জাগ্রত করছেন। এর মধ্যে অন্যতম নাম শাহিন শাহ আফ্রিদি। দীর্ঘকায় এই পেসারের সাফল্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে এবার পাকিস্তানের টি২০ বিশ্বকাপ ভাগ্য। ২১ বছর বয়সী শাহিনের মাত্র তিন বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চির এই পেসারের ২০১৮ সালে পাকিস্তানের হয়ে তিন ফরম্যাটেই অভিষেক হয়। এরপর থেকেই জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। পরের বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলেও ছিলেন। বিশ্বমঞ্চে প্রথমবার খেলতে নেমে শাহিনের পারফরম্যান্সে সবার চোখ রীতিমতো ছানাবড়া হয়ে যায়। পাকিদের হয়ে পাঁচটি ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন প্রতিশ্রæতিশীল এই পেসার। রশিদ খান (আফগানিস্তান) ॥ বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম চৌকষ তারকা রশিদ খান। আফগানিস্তানের তারকা এই অলরাউন্ডার বিশ্বকাপে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে রশিদের জনপ্রিয়তা। সেটা মাঠে বল হাতে তার দেখানো জাদুকরী পারফরমেন্সের কারণে। ভয়ঙ্কর সব গুগলি, ফ্লিপার, প্রথাগত লেগি স্পিন আর আর্ম বলে বাঘা বাঘা খেলোয়াড়দের বশ করে বিশ্ব ক্রিকেটের পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে বেশি সময় লাগেনি তার। এ কারণে ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে রশিদকে নিয়ে কাড়াকাড়ি। শুধু টি২০ নয়, অন্য দুই ফরম্যাটেও সফলতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন রশিদ। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়ে প্রথমবার আইসিসির কোনো বৈশ্বিক আসরে খেলেন এই স্পিনার। আফগানিস্তান কোন ম্যাচ না জিতে গ্রæপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও, রশিদ ছিলেন সমহিমায় উজ্জ্বল। নিয়েছিলেনন আসরে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১ উইকেট। ধারাবাহিকতার মূর্ত প্রতীক রশিদকে অবশ্য বড় একটা ধাক্কাকে সঙ্গী করেই এবারের বিশ্বকাপে খেলতে হচ্ছে। সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ॥ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেরই বড় তারকা সাকিব আল হাসান। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারও তিনি। এবারের বিশ্বকাপে তার সাফল্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতা। তবে প্রথম রাউন্ডে স্কটল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের হারে সাকিবের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হচ্ছে। এরপরও ওই ম্যাচে দুই উইকেট নিয়ে টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহের বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন সাকিব। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ টিকে থাকলে আরও কিছু গৌরবময় রেকর্ডের মালিক বনে যেতে পারেন তিনি। আর ৮ উইকেট পেলেই আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়বেন সাকিব। বর্তমানে আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের মালিক পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহিদ আফ্রিদি। ৩৪ ম্যাচে ৩৯ উইকেট নিয়েছেন আফ্রিদি। আর ২৬ ম্যাচে সাকিবের শিকারে সংগ্রহ ৩২ উইকেট। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় সপ্তমস্থানে আছেন সাকিব। বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি অফিসিয়াল প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে হারের লজ্জা পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে ছিলেন না সাকিব। কিন্তু প্রথম রাউন্ডে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হারের জন্য অনেকটাই দায়ী মাগুড়ার ছেলে। টুর্নামেন্টে টাইগাররা টিকে থাকলে শুরুর এই হতাশা সাকিব দূর করতে পারেন কিনা সেটাই দেখার।
×