ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পা থেকে মাথা পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূল্যবোধে সজ্জিত হতে হবে ॥ ইনু

প্রকাশিত: ১৮:১১, ১৯ অক্টোবর ২০২১

পা থেকে মাথা পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূল্যবোধে সজ্জিত হতে হবে ॥ ইনু

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি বলেছেন, সারাদেশের ৩২ হাজার মন্ডপে নিরাপত্তা দিয়ে আক্রমণ আটকাতে পারলো সরকারের প্রশাসন। সেই একই প্রশাসন মাত্র ৫০ টা জায়গায় হামলা আটকাতে পারলো না। তাহলে এখানে নিশ্চয়ই প্রশাসনের অদক্ষতা কিংবা গাফিলতি রয়েছে। অথবা প্রশাসনের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক কর্মচারীর ইচ্ছেকৃত নিস্ক্রিয়তাই দায়ী। প্রশাসনের ভিতরে খন্দকার মোশতাক চক্র এখনো ক্রিয়াশীল। এখনো প্রশাসন পরিস্কার নয়। এখনো উপরে অসাম্প্রদায়িক সরকার, আর প্রশাসনের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক চক্র চক্রান্ত করে চলেছে। এসব অবশ্যই তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় এধরণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূল্যবোধে সজ্জিত হবে। মঙ্গলবার(১৯ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় রংপুরের পীরগঞ্জে হামলার শিকার করিমপুর কসবার জেলে পল্লী পরিদর্শণ শেষে পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের হলরুমে জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। হাসানুল হক ইনু এমপি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলেও রাজনীতির মাঠে সক্রিয়। যখন আমরা সামরিক শাসনের ধারা থেকে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধের অসম্প্রদায়িক ধারায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করছি। তখন সরাসরি রাজাকারের সমর্থনে বিএনপির নেতৃত্বে উপর্যুপরি সাড়ে বারো বছর ধরে কথনও জঙ্গি তান্ডব, কথনও হেফাজতের উত্থান, কথনও আগুন সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। ওদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তাই তারা মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে। সেজন্য আক্রমণের সংখ্যাটা বেড়ে যাচ্ছে। জঙ্গী জামাত ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীদের মাথায় একটা রাজনৈতিক ছাতা ধরে রেখেছে বিএনপি। যতক্ষণ এই ছাতা ধরে রাখবে ততক্ষণ বাংলাদেশে জঙ্গী উৎপাদন-পুনুরুৎপাদন হবে এবং জঙ্গী আক্রমণের আশংকাও থেকে যাবে। সারাদেশে পুজা মন্ডপে হামলার দুটো কারণ ব্যাখা করে তিনি আরো বলেন, একটি হচ্ছে আফগানিস্থানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের ফলে সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে উপমহাদেশে উৎসাহ তৈরী হয়েছে। জঙ্গীদের মাঝে তথাকথিত জোশ তৈরী করেছে। বাংলাদেশের জঙ্গীদের মাঝেও একটা উৎসাহ উৎসাহ ভাব দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ বিএনপি একটা রাজনৈতিক প্রস্তাব মাঠে ছেড়েছে। সেই প্রস্তাবটা অত্যন্ত বিপদজনক। শেখ হাসিনার সাংবিধানিক সরকারকে হঠিয়ে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন বর্জনের প্রস্তাব। রাজনৈতিক অস্বাভাবিক সরকার গঠনের প্রস্তাবের ছাতার তলে সাম্প্রদায়িক হামলা একই সূত্রে গাথা। অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার কর্মসূচীকে জোরদার করার জন্য হিন্দু কার্ড খেলা হচ্ছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরীর জন্য সংখালঘুদের বাড়ীঘরে হামলা, আগুন দেয়া, পুজা মন্ডপে হামলা চালানো হচ্ছে। একটা দাঙ্গা দাঙ্গা ভাব তৈরীরও চেষ্টা চলছে। ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য সেখানেও হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলা ঠিক হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে নয়, এই হামলা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হামলা, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হামলা। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, এই হামলার পিছনে সুগভীর ষড়যন্ত্র আছে। অন্য অপরাধীদের যেভাবে মোকাবেলা করা হয়, ঠিক একই কায়দায় রাজনৈতিক মোল্লাদেরও মোকাবেলা করতে হবে। এদেশের মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের যে সদ্ভাব আছে , এটাই শক্তি। এই শক্তির উপর দাড়িয়ে অসম্প্রদায়িক সরকার তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে। যারা মনে করছেন অসাংবিধানিক সরকারের দ্বিতীয় ধাপে তালেবানি সরকার কায়েম করবেন, সেই স্বপ্নটা দিবাস্বপ্নই থাকবে। এটা পাকিস্তান নয়। বাংলাদেশে আর যাই হোক কখনও তালেবানি সরকার কায়েম হবে না। গত ত্রিশ বছর আমরা এরচেয়েও খারাপ অবস্থা অতিক্রম করে এসেছি, এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছি। প্রসাশনের ভিতরে সাম্প্রদায়িক কর্মচারীদের ইচ্ছাকৃত অন্তর্ঘাতের বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ভিতরে বিভিন্ন স্তরে সাম্প্রদায়িক, জামাত-শিবির এবং জঙ্গীবাদের অনুপ্রবেশের ব্যাপারেও আওয়ামী লীগের নেত্রীকে নজর দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যেভাবে কঠোর হয়ে জঙ্গী দমন করতে সক্ষম হয়েছে, ঠিক একইভাবে কঠোর হয়ে নিজ দলেও শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।
×