ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পীরগঞ্জে বাড়িঘর আগুন

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া সেই তরুণ আটক ॥ আরও ৪২ গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৯ অক্টোবর ২০২১

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া সেই তরুণ আটক ॥ আরও ৪২ গ্রেফতার

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ যার ফেসবুকে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে রংপুরে জেলেপল্লীর বাড়িঘর পোড়ানো হয় সেই তরুণকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার জয়পুরহাট থেকে তাকে ধরা হয় বলে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন। তবে এই তরুণকে আটকের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। ফেসবুকে এক হিন্দু তরুণ ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ পোস্ট দিয়েছেন অভিযোগ তুলে রবিবার রাতে পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ায় জেলেপল্লীতে উত্তেজনা ছড়ানো হয়। এর আগের খবরে বলা হয়, পীরগঞ্জের বড়করিমপুর গ্রামের সবার চোখে-মুখে এখন আতঙ্কের ছাপ। গ্রামটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বসতবাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর থেকে বাসিন্দারা আতঙ্কে সময় পার করছেন। রংপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র‌্যাব ও বিজিবির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪২ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জেলা ছাত্রলীগ ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সূত্র জানায়, রবিবার রাতের ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে গেছে ২৬টি বাড়ির সবকিছু। হামলাকারীরা লুট করে নিয়ে গেছে টাকা-পয়সা, সোনা, গরুসহ ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র। হামলায় বাড়িঘর হারিয়ে সকলে আশ্রয় নিয়েছে একটি মন্দিরে। রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার জানান, দুর্বৃত্তরা যখন মাঝিপাড়া গ্রামে হামলা চালোনোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়, তখন আশপাশের গ্রাম থেকে কিছু মানুষ এসে এসব নিরীহ মানুষদের ওপর হামলা করে তাদের বাড়িঘর, সোনাদানা, টাকা-পয়সা, গরু-ছাগলসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। হামলায় নেতৃত্ব দেয়া ২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিরোদা রানী রায় বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সংখ্যালঘু পরিবারের এক যুবকের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে কসবা হিন্দুপল্লীতে সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বিনা উস্কানিতে নিরীহদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি মেরামত করা হবে। সরকারী সকল সহযোগিতা দেয়া হবে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামের লোকজনের ভাষ্য, পাশের মাঝিপাড়া গ্রামের পরিতোষ রায় নামের এক কিশোর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে একদল লোক সেখানে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে। ঘটনা আঁচ করতে পেরে সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে পুলিশ মাঝিপাড়া গ্রামের পরিতোষের বাড়িসহ আশপাশের বাড়িতে নিরাপত্তা দেয়। তখন উত্তেজিত শত শত লোক ওই গ্রামের পাশের বড়করিমপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধর্মীয় সেøাগান দিয়ে বসতবাড়িতে ঢুকে দুর্বৃত্তরা গ্রামজুড়ে তা-ব চালায়। এ সময় তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে মারধর করে। প্রাণ বাঁচাতে নারী-পুরুষ ও শিশুরা বাড়ি ছেড়ে পাশের ধানখেতে আশ্রয় নেয়। দুর্বৃত্তরা তখন একের পর এক বাড়ি আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, হামলাকারীরা গ্রামের বাড়িঘরে ঢুকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তা-ব চালালেও পুলিশের ভূমিকা দৃশ্যমান ছিল না। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর পুলিশ গ্রামে গেলে ধানখেতে আশ্রয় নেয়া লোকজন বাড়িতে ফেরেন। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে প্রশাসন ॥ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা প্রশাসনসহ সরকার দলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হামলায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, যার নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সে একটি দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা বলে জানান তিনি। রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলছেন, নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে জন্য পুলিশ রাত থেকে অভিযান চালিয়ে আসছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যতদিন এ এলাকায় শান্তি ফিরে না আসবে, ততদিন ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে জানান রংপুর বিভাগের এই পুলিশ কর্মকর্তা। রংপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ ॥ সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করে রংপুর নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ।
×