ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিছিয়ে পড়া চুয়াডাঙ্গা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৯ অক্টোবর ২০২১

পিছিয়ে পড়া চুয়াডাঙ্গা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে

রাজীব হাসান কচি চুয়াডাঙ্গা ॥ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভারত সীমান্তবর্তী জনপদ চুয়াডাঙ্গা জেলা। এ জেলার উত্তর-পশ্চিমে মেহেরপুর, উত্তর-পূর্বে কুষ্টিয়া, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে ঝিনাইদহ এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বেষ্টিত। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়কপথে দূরত্ব ২১৫ কিলোমিটার। মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, কুমার ও নবগঙ্গা নদীর পলল সমৃদ্ধ অববাহিকায় গড়ে ওঠা এ জনপদের আয়তন ১ হাজার ১৭০ দশমিক ৮৭ বর্গকিলোমিটার। আবাদি জমির পরিমাণ ৯৪ হাজার ২২০ হেক্টর। সে হিসাবে এ জেলার অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এখানে রয়েছে কেরু এ্যান্ড কোম্পানির মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠান। ভারত উপমহাদেশ বিভক্তির পূর্বে চুয়াডাঙ্গা ছিল নদীয়া জেলার অধীন একটি মহাকুমা শহর। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট বিভক্তির পর হয় কুষ্টিয়া জেলার অধীন একটি মহাকুমা। ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গা জেলায় উন্নীত হয়। সেসময় চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর থানা নিয়ে শুরু হয় জেলার কার্যক্রম। সম্প্রতি দর্শনাকে থানার মর্যাদা দেয়ায় বর্তমানে থানার সংখ্যা ৫টি হলেও উপজেলা পূর্বের ৪টি থানা। পৌরসভা ৪টি ও ইউনিয়ন ৩৮টি। এখানকার মোট জনসংখ্যা ১১ লাখ ২৯ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯ এবং মহিলা ৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৬ জন। জেলায় সংসদীয় আসন ২টি। মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গাবাসীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। এ জেলার মানুষ অন্যান্য জাতীয় আন্দোলনের মতো ভাষা আন্দোলনেও পিছিয়ে থাকেনি, বরং গৌরবময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। দেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী চুয়াডাঙ্গার স্বাধীনতাকামী বীর মুক্তিযোদ্ধারা দখলদার পাকিস্তানী হানাদারদের কবল থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ৭ ডিসেম্বর এ অঞ্চল মুক্ত করেন। তাছাড়া বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত এই জেলা শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশকে করেছে সমৃদ্ধ। ভারতের চলচ্চিত্রের অন্যতম বিখ্যাত অভিনেতা অশোক কুমার, লালন সঙ্গীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত খোদা বক্স শাহসহ অনেক গুণীজনের জন্ম হয়েছে এ জেলায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও নীল বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়া এ জেলা উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ছিল সারাদেশের মধ্যে পিছিয়ে। কিন্তু বর্তমান সরকারের ৩ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে পাল্টে যেতে থাকে এখানকার দৃশ্যপট। জেলার ৪টি উপজেলা এখন উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মহাসড়কে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী আলী আজগর টগর ২০০৮ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই তাদের নির্বাচনী এলাকায় উনয়ন কাজে হাত দেন। চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন দফতর সূত্রে জানা যায়, এসব উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- সদর হাসপাতালের ১০ তলা ভিতের ৬তলা নতুন ভবন, আধুনিক মানের স্টেডিয়াম, টিটিসি ভবন, জেলা নির্বাচন অফিস, জেলা যুব উন্নয়ন কমপ্লেক্স, কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বিএমআরই, সদর থানায় ৬ তলা অফিসার্স মেস, কমলাপুর পিটিআই ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, জেলা এবং ৪ উপজেলায় ৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, পোস্ট অফিস ভবন, জেলা কৃষি বিপণন ভবন, জেলা সরকারী গণগ্রন্থগার ভবন, ২ হাজার ৫০০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি গুদাম, মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, চুয়াডাঙ্গা নামে খুলনা বিভাগের প্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ১৪ মার্চ। সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির একক প্রচেষ্টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি ভাড়া করা ভবনে ৫টি অনুষদের অধীনে ৫টি বিভাগে ২০ জন শিক্ষক ও ৫২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ৮টি বিভাগের ১৯টি ডিসিপ্লিনে ১,৪৭৪ জন শিক্ষার্থী এবং ৫৬ জন শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস-চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থেকে-খেয়ে, অল্প খরচে যাতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সে চিন্তা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। তিনি জানান, এখান থেকে ইতোমধ্যেই সম্মানে ৬৯০ এবং মাস্টার্সে ৩৭০ জন শিক্ষার্থী সফলতার সঙ্গে শিক্ষাজীবন শেষ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন। এ শিক্ষানুরাগী আরও বলেন, বর্তমানে শহরের কুলচারা মৌজায় প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে ৫০ বিঘা জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ পুরোদমে চলছে। কেরু এ্যান্ড কোম্পানি ॥ চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় ১৯৩৮ সালে স্থাপিত হয় জেলার একমাত্র ভারি এ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন চলার ফলে কারখানাটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়া এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান সরকার ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএমআরই করে ২০১৫-১৬ মাড়াই মৌসুম শুরু করে। মিলটি ২০২০-২১ মৌসুমে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ দশমিক ৭৮০ টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৮৮৩ টন চিনি উৎপাদন করে। এ সময় কেরুর খামারসহ ৪ হাজার ৬২৭ একর জমিতে আখ আবাদ হয়েছিল। ডিস্টিলারি কারখানায় ৪২ দশমিক ৭০ লাখ প্রুফ লিটার স্পিরিট, ১ দশমিক ৫৮ লাখ কেস ফরেন লিকার এবং ১৬ হাজার ৯০৪ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন হয়েছে। চিনি কারখানার উৎপাদিত বাই প্রোডাক্ট ফিল্টার কেক এবং ডিস্টিলারির তরল বর্জ্য স্পেন্টওয়াশ সংমিশ্রণে অণুজীব দ্বারা ডি-কম্পোস্টের মাধ্যমে এ্যারোসন পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। এ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৭০ টন জৈব সার উৎপাদিত হয়েছে। মিলটিতে ১ হাজার ৪৯১ জন জনবল কর্মরত আছেন। লাভজনক ও অপার সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের পর এ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে। যার পরিমাণ ৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ॥ কৃষির ওপর নির্ভরশীল এ জেলার আয়তন ১ লাখ ১৭ হাজার ৪১০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদি জমি ৯৪ হাজার ২২০ হেক্টর। এসব জমিতে ভুট্টা ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর, আউশ ধান ৪৩ হাজার ১৭৫ হেক্টর, বোরো ধান ৩৫ হাজার ৭৪৬ হেক্টর, শীতকালীন সবজি ৮ হাজার ৪৫৭ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন সবজি ১৩ হাজার ৭২৫ হেক্টরসহ অন্যান্য ফল-ফসলের চাষ হয়। এ কারণে বর্তমান সরকার কৃষির উন্নয়নে ব্যাপক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং চলমান রয়েছে। সড়ক বিভাগ ॥ বর্তমান সরকারের আমলে ৯৫ কোটি ৬ লাখ ৩ হাজার ৯৩৪ টাকা ব্যয়ে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক, ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩৫ টাকা ব্যয়ে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা-জীবননগর-কোটচাঁদপুর-কালীগঞ্জ সড়ক, ৮ কোটি ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৯ টাকা ব্যয়ে আমতলি-তৈলটুপি ও বামুন্দি-হাটবোয়ালিয়া সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে ২২ কোটি ৪৬ লাখ ১৭ হাজার ৮৭৩ টাকা ব্যয়ে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, ১০৫ কোটি ৩১ লাখ ৩৪ হাজার ১০৬ টাকা ব্যয়ে দর্শনা-মুজিবনগর আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৩৭ কোটি ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৮৪ টাকা ব্যয়ে গলায় দড়ি ও হাটবোয়ালিয়া সেতু নির্মাণ প্রকল্প। পাইপ লাইনে রয়েছে ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা ব্যয়ে চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প, ২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দর্শনা-জয়নগর বর্ডার চেকপোস্ট সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া-পোড়াদহ-আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে বাঁকসরলীকরণসহ উন্নয়ন প্রকল্প এবং ৩শ’ ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা-জীবননগর-কোটচাঁদপুর-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ॥ শেখ হাসিনা সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রামীণ সড়ক, হাট-বাজার অবকাঠামো, ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ সানা জানান, ৩ কোটি ৬০ লাখ ৯ হাজার টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ সড়ক ও হাট-বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন, ১ কোটি ৯০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান, ৫ কোটি ৩০ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উনয়ন, ১৬ কোটি ২৮ লাখ ৪ হাজার ৬৯৮ টাকা ব্যয়ে ইউনিয়ন সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন, ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে জেলা অবকাঠামো উন্নয়ন, ৩০ কোটি ৩৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩৬ টাকা ও ৪২ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে পল্লী অবকাঠামো উনয়ন, ১ কোটি ৬৮ লাখ ১৮ হাজার ৪৬৫ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন, ৬৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ যোগাযোগ-হাটবাজার উন্নয়ন ওর্ াসন, ২৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা মেরামত ও সংরক্ষণ, ২০ কোটি ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে সাসটেইনেবল রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এবং ৭ কোটি ৫৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি জানান, এ ধরনের অসংখ্য প্রকল্প চলমান এবং পাইপ লাইনে রয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন ॥ মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে জেলার ৪টি উপজেলায় ৩৫৪টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ নজরুল ইসলাম সরকার জনকণ্ঠকে জানান, জেলায় মোট ১ হাজার ১৩২টি পরিবারকে শনাক্ত করা হয়, যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২ শতক করে সরকারী খাস জমিসহ ১ম পর্যায়ে ১৩৪টি পরিবারকে ঘর করে দেয়া হয়েছে। যার নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২য় পর্যায়ে একই পরিমাণ জমিসহ ঘর উপহার দেয়া হয়েছে ১৭৫টি পরিবারকে। যার নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২০ পরিবারকেও সমপরিমাণ জমিসহ গৃহ দান করা হয়েছে। যার নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৩৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বেসরকারী উদ্যোগে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আমফানে গৃহহারা ১৫টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। যাতে ব্যয় হয়েছে ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ সময় ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে ৫শ’ ৩১ একর সরকারী কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা ॥ ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যা করার দাবি এ অঞ্চলের মানুষের। এ লক্ষ্যে ১০তলা ভিতের ৬তলা বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭তলা নির্মাণের কাজ চলছে। ওই ভবনে চিকিৎসাসেবার কার্যক্রমও শুরু করা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডাঃ এএসএম মারুফ হাসান জানান, সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ করে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও ৩১-৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এখানে ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের কাজ চলছে। তিনি জানান, করোনাকালে সাজেদা ফাউন্ডেশন সদর হাসপাতালে ৬ শয্যার আইসিইউ ও ৮ শয্যার এইচডিইউ স্থাপন করে ৪৮ জন জনবল নিয়োগ করেছিল। বর্তমানে তারা জনবল তুলে নিলেও এই সেবা চালু আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৯৯ সালে এ জেলার বাঘা-বাঘা চরমপন্থী-সন্ত্রাসীরা আত্মসমর্পণ করে। এরপর থেকে অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছে একসময়ের রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত চয়াডাঙ্গা জেলাবাসী। বর্তমানে ৫টি থানা, ১টি পুলিশ ফাঁড়ি, ১টি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ও ২৯টি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছেন। জেলার ৫টি থানায় স্থাপন করা হয়েছে নারী-শিশু-বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সার্ভিস ডেস্ক। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। সদর থানা চত্বরে ৪ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ৬তলা বিশিষ্ট অফিসার্স মেস ভবন যেগুলো এখন দৃশ্যমান। চলমান রয়েছে ২ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬তলা ভিত বিশিষ্ট তিনতলা দর্শনা স্থলবন্দর ভবন, ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ৬তলা ভিতের ২তলা ইন্সপেক্টর কোয়ার্টার, ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে জীবননগর থানায় একই ধরনের কোয়ার্টার এবং ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সদর পুলিশ ফাঁড়ির ৬তলা ভিতের ৩য় থেকে ৫মতলার নির্মাণ কাজ। পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকার পর্যাপ্ত জনবল ও যানবাহনের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি উন্নয়ন করেছে রাস্তা-সেতু ও ফোন যোগাযোগ ব্যবস্থার। ফলে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, নেত্রী বলেছেন গ্রাম শহর হবে। তার সদিচ্ছা আছে বলে এ কথা বলেছেন। রাষ্ট্রের কর্ণধর, রাষ্ট্রের প্রধান সমস্ত কিছুর উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় নিয়ে যদি কার্যকর করেন তাহলে শুধু চুয়াডাঙ্গা নয় সারাদেশে উন্নয়নের গতিধারা আরও বেড়ে যাবে। সারাদেশে সেটাই দেখা যাচ্ছে। সারা পৃথিবী স্বীকার করছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। দেশ স্বাধীনের পর গোটা রাষ্ট্র আমরা পেয়েছিলাম একটি ‘পুড়ে যাওয়া বাড়ি’। ওই বাড়ি আগের মতো ফিরিয়ে আনা কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সাড়ে ৩ বছর শাসনামলে এদেশের জন্য অনেক কিছুই করে গেছেন। যা কল্পনাতীত। তারই উত্তরসূরি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশের উন্নয়ন কাজগুলোই করে যাচ্ছেন। যার প্রতিফলন ঘটছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়।
×