ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১৯ অক্টোবর ২০২১

বাংলাদেশের টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ওমান আহামরি কোনো দল নয় যে তাদের মোকাবেলা করাটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখতে হবে। কিন্তু এক হারে বদলে গেছে দৃশ্যপট। স্কটল্যান্ড-ধাক্কার পর অনেক স্বপ্ন নিয়ে টি২০ বিশ^কাপে পা রাখা বাংলাদেশ শিবির যেন বিধ্বস্ত যুদ্ধের ময়দান। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের চোখে মুখে হতাশা। এতদিন ধরে এত প্রস্তুতি, ঘরের মাঠে স্পিনিং ট্র্যাক বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কুহেলিকার জয়! অনেক কিছুই নতুন করে সামনে উঠে আসছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট কি তবে ভুল পথে হাঁটছে? প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা এবং আয়ারল্যান্ডের কাছে হারকে পাত্তা না দেয়া টাইগারদের আত্মগরিমা এক লহমায় চুপসে গেছে। সামান্যতম কল্পনায়ও আসেনি শুরুটা এত বাজে হতে পারে। রাউন্ড ওয়ানের প্রতিটি গ্রুপে চারটি করে দল। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের বাকি দুটি ম্যাচে জিতলেও সুপার টুয়েলভ নিশ্চিত বলা যাবে না। কারণ আরও দুই দলের সামনে থাকছে সমান জয়ের সুযোগ। প্রতিপক্ষ ওমান যেখানে উদ্বোধনী ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনিকে (পিএনজি) উড়িয়ে দিয়ে আত্মবিশ^াসী, সেখানে মাহমুদুল্লাহদের মাথায় টিকে থাকার দুশ্চিন্তা, আজ হারলেই সব শেষ! আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়। স্কটল্যান্ডের কাছে হারের পর প্রশ্ন উঠছে ২০০৭ থেকে এ পর্যন্ত সব কটি (সপ্তম) বিশ^কাপে খেলা বাংলাদেশ টি২০ ক্রিকেটে আদৌ কি এগিয়েছে? ১২তম ওভারে ৬ উইকেটে ৫৩ রান করা একটা দল কিভাবে ১৪০ রানের ‘চ্যালেঞ্জিং’ স্কোর গড়ে ফেলল। শুরুতে দুর্ধর্ষ মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনরা বল হাতে শেষ দিকে কেন ওভাবে ভেঙে পড়ল? টি২০তে ১৬০-১৭০ যেখানে স্বাভাবিক স্কোর সেখানে এই রানও কেন করতে পারলেন না মাহমুদুল্লাহরা? অধিনায়ক নিজে অবশ্য ব্যাটিং ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখছেন। তিনি বলেছেন, ব্যর্থতার গোটা দায় ব্যাটসম্যানদের। এভাবে চলতে থাকলে সামনে কী হয়, তাও জানা নেই তার। অনেকটা যেন দিকভ্রান্ত নাবিক। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে যখন কথা বলছিলেন, পাশ থেকে ভেসে আসা স্কটিশ ক্রিকেটারদের উল্লাসে, গানে বারবার থেমে যাচ্ছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠ, মুখটাও হয়ে উঠেছিল ফ্যাকাসে। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান যেখানে এলিটদের সঙ্গে সরাসরি সুপার টুয়েলভে খেলছে, সেখানে অনেকটা বাছাইয়ের আদলে রাউন্ড ওয়ানে পুঁচকে সব দলের সঙ্গেও পেরে উঠছে না টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশ। আমিরাতের বিপক্ষে আজ ফেবারিট টাইগাররা, কিন্তু জয়ের নিশ্চয়তা কোথায়! মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার সময়টুকুও তো হাতে নেই। স্কটল্যান্ডের কাছে হার কিছুতেই হজম করতে পারছেন না ভক্তরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাই সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের ছিঁড়েছুড়ে ফেলছেন সমালোচকেরা। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের চোখে অবশ্য এই হার অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ বিশ^কাপে যাওয়ার আগে ম্যানেজমেন্ট কেবল জয়ের বিষয়টিই ভেবেছিল, আর কিছু নয়। তাই তো মিরপুরের উইকেটকে স্পিন ট্র্যাকে রূপ দিয়ে ব্যাটসম্যানদের জন্য করে তোলে বধ্যভূমি। ফলে বড় শট খেলতেই ভুলে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। টি২০ বিশ^কাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের রেকর্ড বড্ড ম্লান। স্কটল্যান্ডের সঙ্গে এই ম্যাচটিসহ মোট ২৬ ম্যাচে জয় মাত্র ৫টি। বলার মতো মাত্র একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। আয়ারল্যান্ড, হংকংয়ের মতো দলের কাছে হারের অতীত আছে। এবার সেই লজ্জায় যুক্ত হলো স্কটল্যান্ড। সম্প্রতি দুর্বল জিম্বাবুইয়ে, খর্ব শক্তির অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিলান্ড দলের বিরুদ্ধে জয়ে বাংলাদেশের অনুরাগীদের মনে স্বপ্নের ফানুস জন্মেছিল। বাংলাদেশের এই দলটি সাতজন আনকোরা নবীন খেলোয়াড় নিয়ে দেশের মাটিতে টি২০ অনুপযোগী উইকেটে খেলে গাছে। সেই উইকেটে খর্ব শক্তির অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় নিয়ে টি২০ বিশ্বকাপে খেলতে গেছে। তবে সেই সিরিজ দুটোতেও কিন্তু ব্যাটসম্যানরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তানের মতো পরিণত দলগুলো যখন অভিজ্ঞ টি২০ বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটার নিয়ে দল সাজিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তামিমের মতো অভিজ্ঞ এবং দেশসেরা ওপেনারকে নিয়ে সাপলুডু খেলেছে। পাকিস্তান শেষ মুহূর্তেও দলে পরিবর্তন এনেছে। অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরেছেন শোয়েব মালিকের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। অথচ বাংলাদেশ ক্রমাগত ব্যর্থ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বিকল্প নিয়ে ভাবা হলো না? এই ভাবনার সময় কোথায়? কারণ, সবাই ব্যস্ত ছিল বিসিবি সাধারণ সভা এবং সাজানো নির্বাচন নিয়ে! লিটন দাস, নাঈম শেখ, সৌম্য সরকার কেউ ছন্দে নেই। বিকল্প নিয়েও কেউ ভাবেনি। তামিমকে তো বলতে গেলে নিজে থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। দলে ১৫ জনের মধ্যে বিকল্প ব্যাটসম্যান শুধুমাত্র আনকোরা শামীম পাটোয়ারি। এখনও শামীম বিশ্বকাপে খেলার মতো যোগ্য হয়ে ওঠেননি। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় মুশফিক ফর্মে নেই। বাকি দুটি খেলা এখন বাংলাদেশের মরণপণ যুদ্ধ করতে হবে। নেট রান রেটের সমীকরণও মাথায় রেখে খেলতে হবে। পাপুয়া নিউ গিনি হয়তবা সহজ প্রতিপক্ষ। ওমান কিন্তু শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তার ওপর তারা স্বাগতিক দল। বাংলাদেশ ভালো খেলে বড় ব্যবধানে জিতুক, এটাই চাইব। কিন্তু এই দল নিয়ে সুপার-১২ এর ভরসা যে এখন পাচ্ছি না।
×