ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২২:০৬, ১৯ অক্টোবর ২০২১

ঢাকার দিনরাত

কাগজে বেশ ঘটা করেই হেমন্তের আগমনী সংবাদ ছাপা হয়েছে। সত্যি কথা যদি বলি, আমি এবার শরতের আমেজই পাইনি। শীত শীত অনুভূতি দূরে থাক, রীতিমতো প্রখর গরমের ভেতরেই সিদ্ধ হয়ে চলেছি। শনিবার, অর্থাৎ শরতের শেষ সন্ধ্যায়, হেমন্ত আসার আগের দিন ঢাকার তাপমাত্রা ছত্রিশ ছুঁইছুঁই অবস্থা ছিল। এটা কি অস্বাভাবিক নয়? ঢাকার মানুষ এখন ঋতুবৈচিত্র্যের স্বাদ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। তবু তাদের আদিখ্যেতা আছে। শরতে একবার কাশবনে যাওয়া চাই, সেলফি তোলা চাই। সে যাক, কবিতায় অবশ্য চিরন্তন হেমন্ত আছে। কবি জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’। হেমন্তের চিত্র কবিতায় এমন- সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা নামে/ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল/পৃথিবীর সব রং মুছে গেলে পা-ুলিপি করে আয়োজন/তখন গল্পের তরে জোনাকির রং ঝিলিমিল/ সব পাখি ঘরে আসে সব নদী ফুরায় এ জীবনের সব লেন দেন/থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।’ সান্ধ্যবৃষ্টিতে ফ্লাইওভারের নিচে শনিবারের কথা বলছিলাম। সেদিন সন্ধ্যার আগে জনকণ্ঠ ভবন থেকে বেরিয়ে কফিশপে বসেছিলাম বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে। বন্ধু চলে গেল। রাস্তায় বেরুতে না বেরুতেই দেখি মৃদু বৃষ্টি। এই মৃদু বৃষ্টি তীব্রতা নিতে বেশি দেরি করল না। ছুটে গেলাম ফ্লাইওভারের নিচে। দেখতে দেখতে ফ্লাইওভারের নিচটা বৃষ্টিতে ভিজতে না-চাওয়া মানুষে ভরে গেল। রিক্সার ওপরে দুই পা তুলে দেয়া রিক্সাচালক, ভবঘুরে, একেলা পথচারী, দু-তিনজন বন্ধুর গ্রুপ, ভাসমান দোকানি, কে নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশের জিপও এসে জুটল। ভ্রাম্যমাণ বাদাম বিক্রেতা, ফুটপাথের চা-দোকানি আর ঝালমুড়িঅলার পসার জমে উঠল অল্প সময়ের ভেতর। ঢাকা হচ্ছে মহাব্যস্ত মানুষদের অর্থোপার্জনের জায়গা। এখানে অখ- অবসরও যে মেলে আচমকা, তার প্রমাণ এই সান্ধ্যবৃষ্টি। বাধ্যতামূলক অবসর, তবে মধুর যাপনই বটে। সামাজিক- পারিবারিক হিসাব-নিকাশ ভুলে মানুষ গল্পে মেতে ওঠে। সবাই সুখী যেন, কারো কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই। ওদিকে বাজারে আগুন, কোথাও কোথাও পূজাম-পে উত্তেজনার আগুন, দিনভর গরমের আঁচ- সব যেন এক নিমেষে দূরে সরে যায়। ম্লান হয়ে যায়। সবকিছু ছাপিয়ে কেবল নিজের মুখোমুখি হওয়া। যারা একেলা, তারাও একফাঁকে কারু সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয়। চেয়ে চেয়ে বৃষ্টি দেখার মানুষও কম নেই। সারাদিনের গরম ও ক্লান্তির পর এই বৃষ্টি অনেককেই যে নির্ভার এক স্বস্তিময় বন্দরে নিয়ে যায় স্বল্প সময়ের জন্য, এটি অনুভব করা যায়। ফ্লাইওভার বিরাট কংক্রিটের ছাদ হয়ে শূন্যে ঝুলে থাকে। তার নিচে জনা পঞ্চাশেক ঢাকাবাসী হয়ত মনে মনে প্রস্তুতি নেয় পরদিনের কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণের। আবার সেই যানজট, রোদের প্রখরতা আর বাড়তি আর্দ্রতার মধ্যে নিমজ্জন। উৎসব ও উদ্বেগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে কুমিল্লার একটি পূজাম-পে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রেখে দেয়ার জের ধরে দেশের কয়েকটি জেলায় যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসব বানচালের অপচেষ্টা চলবে এমনটি বেশির ভাগ মানুষেরই ধারণায় ছিল না। সুযোগসন্ধানী অপশক্তির অভিপ্রায়ই ছিল সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে উদ্বেগাকুল করা। এতে তারা অনেকটাই সফলতা পেয়েছে। ঢাকাসহ অনেক স্থানে প্রতিবাদী সমাবেশ হয়েছে। চট্টগ্রামে তো সুবিশাল মিছিল হয়েছে। বলা দরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের সুমহান ঐতিহ্য। এ দেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এ দেশে বিদ্যমান। সিংহভাগ মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও বকধার্মিক ও কা-জ্ঞানহীনদের কারণে কখনও কখনও দেশের সুনামও কলঙ্কিত হয়ে ওঠে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে অটুট রাখা চাই। ইসলাম বিশ্ব মানবতার ধর্ম, কল্যাণ ও শান্তির ধর্ম। এ ধর্ম কখনই অন্য ধর্মের উপাসনালয় কিংবা বাড়িঘরে হামলা করার অনুমোদন দেয় না। এবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসবের সময় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করায় প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা ছিল প্রত্যাশিত। সব ধর্মের সব মানুষের সম্মিলনে সামাজিক প্রতিরোধই অপশক্তিকে সমুচিত জবাব দিতে সক্ষম। সেটিরই কিছুটা অভাব প্রত্যক্ষ করছি আমরা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, পূজামণ্ডপে হামলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি। সমাবেশে গৌরব একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহীন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা করে যাচ্ছে একটি সম্প্রদায়। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে যে ষড়যন্ত্র করে আসছে আজ হিন্দুদের মন্দির ভাংচুর, হামলার মাধ্যমে তাদের সেই আস্ফালন আবার আমরা দেখলাম। আমরা যারা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি আমাদের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বিএনপি জামায়াতের এই আস্ফালন আমাদের জন্য সত্যিই লজ্জার। কাছাকাছি সময়ে শাহবাগে দেশের বিভিন্ন স্থানের পূজামণ্ডপে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং ভক্ত-দর্শনার্থী হত্যার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তারা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় দ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন। মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তারা রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। সন্ধ্যার আগে শাহবাগ চৌরাস্তায় মোড়ে কিছু সময়ের জন্য অবরোধ করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধে অবরোধ তুলে নিয়ে মিছিলটি প্রেসক্লাবের সমানে গিয়ে শেষ হয়। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলনকান্তি দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র্র ভৌমিক, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি, অধ্যাপক তাপস মণ্ডল, অধ্যাপক চন্দ্র্রনাথ সরকার, শ্যামল রায়, রঞ্জন কর্মকার প্রমুখ। সম্প্রচারে জি বাংলা ও স্টার জলসা দুই সপ্তাহের ভেতর ছোটপর্দায় প্রত্যাবর্তন করল এ দুটি চ্যানেল। তবে বিজ্ঞাপনমুক্ত হয়ে। সেটিই প্রত্যাশিত ছিল। সদিচ্ছা থাকলে যে উপায় হয়, তারই উদাহরণ এটি। বিজ্ঞাপনমুক্ত বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারে সরকারের কড়াকড়ির মধ্যে ১ অক্টোবর ক্যাবল অপারেটর ও ডিটিএইচ বাংলাদেশে সব বিদেশী চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল। এর মধ্যে ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর ক্লিন ফিড চ্যানেল হিসেবে প্রথম সম্প্রচারে আসে জি বাংলা। তার পরদিনই সম্প্রচারে এল স্টার জলসা। চ্যানেল দুটি বাংলাদেশের দর্শকদের একটি অংশের কাছে বেশ জনপ্রিয়। চ্যানেলে প্রচারিত সিরিয়ালগুলো দেখে থাকেন অনেকে। জি বাংলা বিজ্ঞাপনের সময় চ্যানেলের অন্য অনুষ্ঠানের প্রোমো দেখাচ্ছে। তবে স্টার জলসা প্রোমোও দেখাচ্ছে না। বিজ্ঞাপন বিরতির সময় একটি ঘোষণা দিয়ে রাখছে। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘সম্মানিত গ্রাহক, বিজ্ঞাপন বিধিনিষেধের জন্য বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে। বিজ্ঞাপন বিরতি শেষে অতি শিগগিরই আমরা মূল অনুষ্ঠানে ফিরে আসছি। আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।’ তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, জি বাংলা, স্টার জলসাসহ এখন বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা এইচডি, ডিডব্লিউ, কেবিএস ওয়ার্ল্ড, এআরআই র্যাংগ টিভি, এনএইচকে ওয়ার্ল্ড, সিজিটিএন, রাশিয়া টুডে, ফ্রান্স ২৪, লোটাস, ট্রাভেল এক্সপি এইচডি, আল কোরআন, আল সুন্না, ট্রাভেল এক্সপি ও দূরদর্শন টেলিভিশন বাংলাদেশের দর্শকরা দেখতে পাচ্ছেন। এর সবই ক্লিন ফিডে প্রচারিত হচ্ছে। মানববর্জ্য ও সেপটিক ট্যাঙ্ক উত্তরায় এগার নম্বর সেক্টরে স্যুয়েরেজে লাইনের কাজ আবারও শুরু হয়েছে। গত বছর থেকেই ধারাবাহিকভাবে এই কাজ চলছে। একেক এলাকার একেকটি রাস্তা, মানে আবাসিক এলাকার ভেতরকার গলিপথের ওপর এই খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। রাস্তার মাঝ বরাবর বেশির ভাগ অংশ খুঁড়ে ফেলা মানেই ওইসব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। সবাইকে হেঁটে চলতে হবে। এটি বিড়ম্বনাও বটে। ছয় মাসের জন্য এই বিড়ম্বনা। সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটির কথা মনে আসে সেটি হলো যদি এখানকার কোন ভবনের কোন ব্যক্তিকে জরুরীভাবে হাসপাতালে নিতে হয় তাহলে এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারবে না এখানে। তাহলে কি অবস্থা হবে? আল্লাহ না করুক, কোথাও আগুন লাগলে পাশের রাস্তায় ফয়ার ব্রিগেডের গাড়ি দাঁড় করিয়ে সুদীর্ঘ পাইপলাইন দিয়ে পানি ছিটাতে হবে। এছাড়া ভিন্ন উপায় নেই। আমরা পরিকল্পনাহীনভাবেই যে শহরটাকে বাড়িয়ে ফেলেছি, বাছবিচারহীনভাবে নাগরিক অত্যাবশ্যক সুবিধাসমূহকে পাশ কাটিয়ে সংকীর্ণ সড়কের দুই পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছি- এসবই এখন নাগরিক যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে। তবে এই বিরাট কর্মযজ্ঞ সমাপ্ত হওয়ার পর পুনরায় নতুন রাস্তা নির্মাণ শেষে এই জায়গার চেহারাই বদলে যাবে। বাইরের চেহারার কথা বলছি। মাটির নিচের চেহারা একপর্যায়ে সমস্যাকীর্ণ হবে এতে কোন সন্দেহ রাখি না। কেননা বেশির ভাগ বাড়ির মানববর্জ্য (মলমূত্র) সরাসরিই এসব নতুন ভূগর্ভস্থ নর্দমায় এসে পড়বে। অথচ কেবল তরল বর্জ্যই ওতে পড়ত যদি প্রতিটি ভবনে সেপটিক ট্যাঙ্ক থাকত। ঢাকা শহরের ৯৫ শতাংশ বাড়িতেই সেপটিক ট্যাঙ্ক নেই। এই তথ্য দিয়েছেন স্বয়ং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র। শনিবার ‘পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) সেক্টরে ৫০ বছরের অর্জন ও ভবিষ্যত করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার তিনি এ তথ্য দেন। বলেন, এটি নিশ্চিত করার জন্য বাড়িমালিকদের উদ্যোগ গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। আমরা জানি সেপটিক ট্যাঙ্ক হলো মল-মূত্র জমা রাখার জন্য ভূগর্ভে নির্মাণ করা আধার বিশেষ। সেপটিক ট্যাঙ্ক স্যুয়েরেজের প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করে। মলমূত্রের সলিড অংশ হতে তরল অংশ আলাদা করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে রাখে। কঠিন পদার্থ নিচে জমা হয় এবং তরল ড্রেনেজ সিস্টেমে চলে যায়। স্ট্যান্ডার্ড হলো, স্ট্রমওয়াটার ড্রেইন বা স্যুয়েরেজ লাইনে যা যাবে তা হতে হবে ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ তরল। তা না হলে তলানি পড়ে পড়ে স্ট্রমওয়াটার ড্রেইন বা স্যুয়েরেজ লাইন আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। যার অবশ্যম্ভাবী কুফল অল্প বর্ষাতেই জলজট এবং জলাবদ্ধতা। ১৭ অক্টোবর ২০২১ [email protected]
×