ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সম্প্রীতি বজায় রাখুন

প্রকাশিত: ২১:৪১, ১৯ অক্টোবর ২০২১

সম্প্রীতি বজায় রাখুন

রবিবার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মাঝিপাড়া গ্রামের এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেনÑ এমন অভিযোগ তুলে একদল লোক সেখানে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করে। সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে পুলিশ মাঝিপাড়া গ্রামের ওই তরুণের বাড়িসহ আশপাশের বাড়িতে নিরাপত্তা দেয়। তখন উত্তেজিত শত শত লোক ওই গ্রামের পাশের বড়করিমপুর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গ্রামজুড়ে টহল দিচ্ছেন পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ভেবেছিলেন প্রতিমা বিসর্জনের পর দুর্গোৎসব শেষে আর মন্দিরে বা পূজাম-পে হামলা হবে না। ইতোমধ্যে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা গ্রহণের প্রভাব পড়বে। হিংস্র শ্বাপদ তার লেজ গুটিয়ে ফের গর্তে লুকাবে। কিন্তু রংপুরে যে বর্বর তা-ব চলেছে রবিবার রাতে, তাতে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশের সংখালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে তাদের ভিটেমাটি ছাড়া করতে চাইছে। তাদের হীন অভিপ্রায় হলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকারকে বিব্রত করা, বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করা। অতীতে দেখা গেছে এদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রতিবেশী দেশটিতে। সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমানরা বিপন্ন বোধ করেন এবং উভয় দেশেরই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো জ্বালাও-পোড়াওয়ের একটা ইস্যু পেয়ে যায়। ফলে শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। যার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে দুই দেশেরই সাধারণ নাগরিকদের মনোজগতে। ফলস্বরূপ কূটনৈতিক সম্পর্কে আঁচড় পড়ে। আমরা আশাবাদী, এবার তা হবে না কোনভাবেই। কোন দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সব নাগরিকের সার্বিক সুরক্ষার দায় সরকারের। দেশের সংখ্যাগুরু মানুষের ওপরও অনুরূপ দায় বর্তায়। সে কারণেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটানো হলে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক শক্তিকেও রুখে দাঁড়াতে হয়। এখানে দল মত ধর্ম নির্বিশেষ মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি বজায় রাখাটাই বড় কথা। এজন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে সব পক্ষকেই। সেইসঙ্গে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দায়িত্ব এখানে বিরাট। বাড়িঘর জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো ধ্বংসাত্মক অপকর্ম এবং লুটপাটের মতো জঘন্য অপরাধ দমনের জন্য আগেভাগেই সতর্ক হতে হবে। ঘটনা ঘটানোর আগেই দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করা চাই। এক্ষেত্রে গোয়েন্দাদেরই তথ্য দেয়ার কথা। এখন পর্যন্ত দেশের যেসব অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, সবখানে প্রতিটি হামলার পেছনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী লোকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি সারা দেশের হিন্দু নগরিকদের জান-মাল রক্ষায় সার্বিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতে দেখা গেছে এসব পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পাশে সহায়ক শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা গেলে গুটিকতক সাম্প্রদায়িক সরীসৃপের পক্ষে একটিও কুকর্ম করা সম্ভব নয়। মানুষের সম্মিলিত শক্তিই সবচেয়ে বড় সামাজিক শক্তি, যা মানুষের বিপন্নতায় যথার্থ সহায় হয়ে ওঠে। রংপুরসহ দেশের যেসব এলাকায় সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার যারা হয়েছেন তাদের পাশে আমাদের অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা গভীর সহানুভূতি জানাই। সেইসঙ্গে হামলাকারী সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তদের জানাই তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা। জনকল্যাণমূলক সরকার নিশ্চয়ই স্বল্পতম সময়ের ভেতর অগ্নিকা-ে পুড়ে যাওযা বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা নেবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেবে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক অপরাধীই আইনের জালে অচিরেই ধরা পড়বে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সাম্প্রদায়িক ও অশুভ শক্তিকে পরাভূত করে এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর রক্ত স্নাত এ দেশে তাদের কালো ছায়া কোনভাবেই আমরা দেখতে চাই না।
×