ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুড়িগ্রামে মাতৃহীন অসহায় তিন শিশুর অনিশ্চিত জীবন

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ১৭ অক্টোবর ২০২১

কুড়িগ্রামে মাতৃহীন অসহায় তিন শিশুর অনিশ্চিত জীবন

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামে মাতৃহীন অসহায় তিন শিশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন নানী জামিলা বেগম।তিন শিশুর ভরনপোষণ করতে পারছেন না সহায় সম্বলহীনবিধবা নানী। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের জীবন। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মাকে হারিয়ে নিরন্তর কাঁদছে শিশু তিনটি। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের মোরছিয়ালপাড়া গ্রামের মৃত আজগার আলীর মেয়ে ময়নার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী মোগলবাসা ইউনিয়নের মোসলেম উদ্দিনের সাথে। কিছুদিন সংসার ভাল কাটলেও স্বামী ভরনপোষণ না দেয়ায় চলে আসেন বাবার বাড়িতে। বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে বোঝা না হয়ে বেঁচে নেন দিনমজুরীর কাজ। কাজ করে ছেলে মেয়েদের লালনপালন করছিলেন তিনি। হঠাৎ ময়না অসুস্থ হয়ে পরলে বন্ধ হয় দিন মজুরীর কাজ। পরে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে জানতে পারেন তিনি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর অবশেষে গত ২১ দিন আগে মৃত্যু হয় তার। এতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে চার সন্তান যদিও বড় মেয়েকে শিশু অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দায় সেরেছিলেন মা।বাকি তিন ছেলে মামুন (১১), জাহাঙ্গীর আলম ( ৫) ও যোবাইদুল (৩)বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন মাকে হারিয়ে কেঁদে চলেছে। অথচমা ময়না বেগম ক্যান্সার রোগে ভুগেও তাদের খাওয়া পড়া করছিলেন। অন্যদিকে কোন সন্তানের খবর রাখছেন না পাষাণ বাবা। এখন বাধ্য হয়ে অসহায় তিন শিশুকেনিজ হেফাজতে নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছেন নানী জামিলা বেগম (৫৭)। তবে পড়ালেখা করার বদলে অভাবের কারণে বড় শিশু সন্তান মামুন এখন আশেপাশে ছোটখাট কাজের সন্ধান শুরু করেছে। শিশু হবার কারণে প্রতিদিন জুটছেনা কাজ। নানি জামিলা বেগম জানান, আমার নিজের খাবার জোগাতে পারি না। নেই কোন জমিজমা। অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবন বাঁচাই। এদর খাবার জোগাই কিভাবে? এদের বাবা আগে থেকে তাদের খোঁজখবর রাখতো না।এই শিশুদের কিভাবে খাওয়াবো পড়াবো জানি না। শিশু তিনটির দুঃখ দুর্দশা দেখে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় মেহের জামাল, আতিকুর রহমান ও রফিকুজ্জামানসহ কয়েক ব্যক্তি। তারা শিশুদের জন্য নানী জমিলা বেগমকে কিছু অর্থ সহায়তা করেছেন। স্থানীয় আতিকুর ও মেহের জামাল বলেন, স্বামী পরিত্যক্ত ময়না বেগম কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তার ছোট ছোট তিন ছেলে সন্তান রয়েছে।খেয়ে না খেয়ে নানির বাড়িতে দিনাতিপাত করছে তারা। এটা জেনে আমরা কয়েকজন মিলে সামান্য অর্থ সহায়তা করেছি। তাতে কয়েকদিন ভালো খেতে পারলেও পরে তাদের খাবার থাকবে না। তাই সমাজের দানশীল ও বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে হয়তো শিশু ৩টির অনিশ্চিত জীবন রক্ষা পাবে। একই গ্রামের কাজিয়াল হোসেন বলেন, ময়নার মৃত্যুর পর খুবই কষ্টে আছে তার অবুঝ শিশুরা। আমরা কতটুকু করতে পারবো জানিনা। সরকারিভাবে শিশুদের কোন ব্যবস্থা করা হলে অনেক ভালো হতো। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন,শিশুদের দুর্দশার কথা শুনে ব্যক্তিগতভাবে আমি কিছু সহায়তা করেছি। এ মুহুর্তে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ নেই।দানশীল ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নিকট অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।
×