ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুদের ফাঁদে হাজতবাসে মান্নান

প্রকাশিত: ০০:১৪, ১৭ অক্টোবর ২০২১

সুদের ফাঁদে হাজতবাসে মান্নান

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ মাছ ধরার জন্য মহাজনের কাছ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দাদন এনেছিলেন মান্নান। পাঁচ বছরে তিন লাখ নয় হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। এরপরও সুদের মহাজন আরও সাত লাখ টাকা দাবি করছেন। আর এ দাবিতে থানায় মামলাও করেছেন। সে মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে দরিদ্র জেলে আবদুল মান্নান চৌকিদারকে। গৃহকর্তা আবদুল মান্নান জেলে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের চোখে-মুখে কেবলই হতাশা। তাদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। এ ঘটনা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের। মৎস্য পেশায় নির্ভরশীল জেলে আবদুল মান্নান চৌকিদারের (৪৫) স্ত্রী, তিন ছেলেসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। সাগরে মাছ ধরা পড়লে মুখে হাসি ফোটে। মাছ না পেলে মুখ হয় মলিন। দেড় বছরের বেশি সময় করোনা মহামারী এবং সাগরে আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় মান্নান চৈৗকিদার ধারদেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। এর মধ্যেই ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় তীরে ফিরে সুদের জালে ফেঁসে যান। জানা গেছে, নতুন জাল-ট্রলার গড়তে পাঁচ বছর আগে দুই কিস্তিতে কোড়ালিয়া গ্রামের মেজবাহউদ্দিন মিজু হাওলাদারের মাধ্যমে রিপা আক্তার নামের এক মহিলা সুদের কারবারির কাছ থেকে মান্নান চৌকিদার এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। আবদুল মান্নানের ছেলে জুলহাস ও অনিকের দাবি, এ পর্যন্ত তারা তিন লাখ ৯ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু সুদ ব্যবসায়ী রিপা আক্তার আরও সাত লাখ টাকা দাবি করছেন। যা দিতে না পারায় সুদের টাকা নেয়ার সময় খালি স্ট্যাম্পে যে স্বাক্ষর রাখা হয়েছিল, সে স্ট্যাম্পেই নৌকা ভাড়া দেয়ার ভুয়া চুক্তিপত্র তৈরি করেন রিপা আক্তার। এতে তিনি নৌকার মালিকানা দাবি করেন। গত ১২ অক্টোবর রাঙ্গাবালী থানায় আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। মামলায় নৌকাটি ভাড়া দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়। সেদিনই জেলে আবদুল মান্নানকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর থেকেই আবদুল মান্নান জেলে আছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, আগুনমুখা নদী তীরের কোড়ালিয়া লঞ্চঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ভেতরে একটি পুরনো টিনশেড ঘরে বসে মান্নানের স্ত্রী ঝুমুর বেগম কাঁদছেন। ঘরে খাবার নেই। নেই বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। ঝুমুর বেগম বলেন, হেরা দলিলে লেখছেÑট্রলার ভাড়া দিছে। আরও ৭ লাখ টাকা পাইবে। এসব লেইখা মামলা দিছে। স্বামীকে জেলে দিছে। আমি এ্যাহোন অসহায় হয়ে পড়ছি। না খাইয়া দিন কাটাইতাছি। কেমনে হ্যারে ছাড়ামু, জানি না। হাতে কোন টাকাপয়সা নাই। সুদের ব্যবসায়ী রিপা আক্তার বলেন, আমি নৌকা ভাড়া দিছি ছোট খালার বাড়িতে বসে। স্ট্যাম্প সবকিছু নিয়ে আসছে। চার মাসের টাকা দিছে। আর টাকা দেয় নাই। পরে আমি সালিশসহ সকলকে জানালাম। পরে আমি থানার আশ্রয় নিলাম। এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার অফিসার ইনচার্জ দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, যদি এরা মনে করে যে জাল করছে স্ট্যাম্প। তাহলে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। রিপার বিরুদ্ধেও ইচ্ছা করলে মামলা করতে পারবে। তবে জাল যাচাই করা এক্সপার্টের ব্যাপার।
×