ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

আজহার ও কায়সারের রিভিউ শুনানির অপেক্ষায়

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ১৭ অক্টোবর ২০২১

আজহার ও কায়সারের রিভিউ শুনানির অপেক্ষায়

বিকাশ দত্ত ॥ যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার এটিএম আজারুল ইসলামকে আপীল বিভাগ মৃত্যুদ- প্রদান করেন। অন্যদিকে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি প্রধান ও কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদণ্ট প্রদান করেন আপীল বিভাগ। এরপর দুই আসামিই মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে রিভিউ করেছেন। করোনার কারণে রিভিউয়ের চূড়ান্ত শুনানি আটকে রয়েছে। এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উচ্চ আদালতে অবকাশ চলছে। অবকাশ শেষে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেই যুদ্ধাপরাধী মামলার রিভিউ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া বর্তমানে আপীল বিভাগে আরও ২৭টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলোরও শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আদালতের তালিকায় এলে অবশ্যই আমরা শুনানি করব। আজাহারুল ইসলাম ও সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের রিভিউ খারিজ হলে একমাত্র পথ থাকবে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন। রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করলে তাদের ফাসির রজ্জুতে ঝুলতে হবে। এদিকে ট্রাইব্যুনাল ও আপীল সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে মারা যাওয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিন আসামির আপীল এ্যাবেটেড (চূড়ান্তভাবে সমাপ্তি ঘোষণা) করেছে আপীল বিভাগ। এই তিনটি নিয়ে আপীল বিভাগে ১৩টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। কারাগারে মৃত্যুবরণ করায় এ্যাবেটেড এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে ৬টি মামলা। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলবদর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে দুটি ধাপে বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এখন চূড়ান্ত ধাপ রিভিউ শুনানির জন্য রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ অপেক্ষা করছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছেন শীঘ্রই এ মামলাগুলোর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে আপীল বিভাগে আরও বর্তমানে ২৭টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে আপীল বিভাগে আরও ১০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৬টিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম ও আব্দুস সুবহানের মৃত্যু হওয়ায় তাদের মামলা এ্যাবেটেড মাধ্যমে আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তিন আসামি হলেন- টাঙ্গাইলের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা (আর পি সাহা) ও তার ছেলে হত্যাকা-সহ তিনটি গণহত্যার অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মাহবুবুর রহমান, কিশোরগঞ্জের মোসলেম আলী প্রধান ও মৌলভীবাজারের আকমল আলী তালুকদার। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে আজহারকে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেন। আর অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ সংক্রান্ত ৫ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর জেল ও ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। এছাড়া ১ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল। পরে আজহারুল ইসলাম খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপীল করা হয়। ওই আপীলের ওপর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বিভাগ। আপীলের রায়ে বিচারপতিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে আজহারের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখা হয়। পাশাপাশি ৬ নম্বর অভিযোগের দ- বহাল রাখেন আপীল বিভাগ। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়। অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার মৃত্যুদ- থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করা হয়েছে। ২০২০ সালের ৩১ অক্টোবর এই রিভিউ আবেদন করা হয়। ১৮ গ্রাউন্ডে কায়সারের মৃত্যুদ-ের রিভিউ আবেদন করা হয়েছে। এর আগে ২২ অক্টোবর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের আদেশ প্রদান করে ট্রাইব্যুনাল । তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, মুক্তিপণ আদায়, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন এবং ষড়যন্ত্রের ১৪টি প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি অভিযোগে ফাঁসি, ৪টিতে আমৃত্যু কারাদ-, ৩টিতে ২২ বছরের কারাদ- ও দুটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করলে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বিভাগ মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে কায়সারের করা আপীল আংশিক মঞ্জুর করে এ রায় দেয়া হয়।
×