ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

মার্ক রিবুর ক্যামেরায় একাত্তরের দুর্লভ ছবি

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ১৭ অক্টোবর ২০২১

মার্ক রিবুর ক্যামেরায় একাত্তরের দুর্লভ ছবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আলো-ছায়ার খেলায় দৃশ্যমান হয়েছে জলাধারের ওপর ছড়িয়ে সকালের ¯িœগ্ধ আলো। আর ওই জলাশয়ের সামনেই উঁকি দিচ্ছে এক টুকরো ভূখ-। সেখানে ফজরের নামাজরত অবস্থায় দেখা যায় দুই ব্যক্তিকে। দুই হাত তুলে মোনাজাত করা দুই ব্যক্তির একজনের আসনের পাশে রাখা রয়েছে রাইফেল শত্রুর নিশ্বাস কেড়ে নেয়া রাইফেল। আরেকটি ছবিতে একজন মুক্তিযোদ্ধা স্লোগান দিচ্ছেন। তাকে ঘিরে গোল হয়ে আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা। বেশিরভাগের কাঁধেই ঝুলছে রাইফেল। ছবিটি মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বজ্রশপথের কথা। আরেকটি ছবিতে একজন দর্জি লাল-সবুজ বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা সেলাই করছেন। তাকে ঘিরে হাসিমুখে বাংলার সাধারণ জনতা। এই ছবিগুলো তুলেছেন বিশ^খ্যাত ম্যাগনাম আলোকচিত্রশিল্পী মার্ক রিবু। বিখ্যাত এই আলোকচিত্রীর ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ : শোক ও সকাল’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে শোভা পেয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ কিছু ছবি। ফরাসি আলোকচিত্রী মার্ক রিবুর তোলা মুক্তিযুদ্ধের অপ্রকাশিত ছবির প্রদর্শনী শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ : শোক ও সকাল’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার উদ্যোগে আর ’লা’সেসিও লেসামি দ্য মাখ রিব্যো’ এবং গিমে মিউজিয়ামের সহযোগিতায় আয়োজিত হয়েছে। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ইতোপূর্বে অপ্রকাশিত একগুচ্ছ আলোকচিত্র। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে পঞ্চাশটি আলোকচিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীটি যৌথভাবে কিউরেটিং করেছেন মফিদুল হক এবং লরেন ড্রুরে। মার্ক রিবু স্বল্প কয়েকজন আলোকচিত্রীর মধ্যে অন্যতম, যারা যুগপৎ উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে ছবি তোলার অনুমতি পেয়েছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে পেন্টাগনের সামনে আন্দোলন চলাকালীন তার তোলা ‘ফুল হাতে একজন তরুণী’র ছবি শান্তির আন্তর্জাতিক প্রতীকে পরিণত হয়। এভাবে রিবু বিশ্বের নানা দেশ ঘুরে ক্যামেরাবন্দী করেছেন বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের ছবি। সেই ¯্রােতধারায় একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম দৃষ্টি আকর্ষণ করে মার্ক রিবুর। তিনি ১৯৭১ সালের নবেম্বরের শেষদিকে কলকাতায় আসেন। শরণার্থী শিবির এবং মুক্তাঞ্চলে ঘুরে দেখেন। ৩ ডিসেম্বরে যখন ভারত-পাকিস্তান সর্বোতভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তখন তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থিত অগ্রসরমান ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তার অভিযাত্রা শুরু হয় জামালপুর-শেরপুর থেকে। তারপর প্রমত্তা ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে তিনি প্রত্যক্ষ করেন জামালপুরের বিজয়সূচক যুদ্ধ; যা তিনি বিস্তৃতভাবে ক্যামেরাবন্দী করেন। তিনি ছিলেন প্রথম সাংবাদিকদের অন্যতম, যারা ঢাকায় প্রবেশ করে এই নগরীর মুক্তিকে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। এসব ছবির অধিকাংশই আজ পর্যন্ত অপ্রকাশিত ছিল। শনিবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, সম্মানিত অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যঁ মারা সু, আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের পরিচালক ফসোয়া গুজে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক ও সারা যাকের। প্রদর্শনীটি চলবে ১৬ নবেম্বর ২০২১ পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। প্রদর্শনীটি দ্বিতীয় বারের মতো আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার লা গ্যালারিতে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে প্রদর্শিত হবে। ফরাসি আলোকচিত্রী মার্ক রিবু প্রথম প্রজন্মের ম্যাগনাম আলোকচিত্রীদের অন্যতম। এই ফরাসি আলোকচিত্রীর ১৯৫৩ সালে তোলা ইফেল টাওয়ারের ওপর কাজে ব্যস্ত একজন রংমিস্ত্রির ছবি লাইফ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালে মার্ক রিবু ১৯৫৩ হতে ১৯৭৭ সালের ভেতর তার ধারণ করা ১৯২টি আলোকচিত্রের মূলপ্রিন্ট প্যারিসের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টকে (সেন্টার জর্জ পম্পেদু) দান করেন। তার আলোকচিত্র অনেক মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা অর্জন করেছে এবং অন্যান্য অনেক জায়গার মতোই প্যারিস, নিউ ইয়র্ক, সাংহাই এবং টোকিওর জাদুঘর ও গ্যালারিগুলোতে প্রদর্শিত হয়েছে। মার্ক রিবু ২০১৬ সালে প্যারিসে ৯৩ বছর বয়সে মারা যান। জাদুঘরের নবরূপে ‘সুইজারল্যান্ড কর্নার’ চালু ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, জাতীয় জাদুঘরের বিশ্ব সভ্যতা গ্যালারিতে নবরূপে চালু হলো ‘সুইজারল্যান্ড কর্নার’। কর্নারটিতে থাকবে সুইজারল্যান্ডের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা সমাহার। সুইস আইকনিক ভূদৃশ্য, প্রকৃতির নিকট ফিরে যাওয়া, রন্ধন ঐতিহ্য, নক্সার ঐতিহ্য, সুইস টেক্সটাইল শিল্প, সুইজারল্যান্ডের অনুপ্রেরণা, গরুর ঘণ্টা বাজানো, সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ, সুইস ভাষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের শতাধিক সংগ্রহ রয়েছে এই কর্নারে। ঢাকার সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের আয়োজনে ও জাদুঘরের সহযোগিতায় শনিবার এই কর্নারের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ও বেসরকারী সংগঠন ‘ফ্রেন্ডশিপ’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রুনা খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুইজারল্যান্ড একটি চমৎকার, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ দেশ। এটি কোন দেশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় না ও কোন সামরিক জোটেরও সদস্য নয়। বাংলাদেশও সে রকম একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ দেশ। আশা করছি, দুই দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত আরও প্রশস্ত হবে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
×