ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদেরও আছে কক্সবাজার-সুন্দরবন

প্রকাশিত: ২১:৪০, ১৭ অক্টোবর ২০২১

আমাদেরও আছে কক্সবাজার-সুন্দরবন

২০১৩ সালের আগস্ট মাস। কয়েকজন সাংবাদিক গিয়েছিলাম ভিয়েতনামে হা-লং বে দেখতে। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে এই হা-লং বে’র কথা। ২০১২ সালে সপ্তমাশ্চর্য ফাউন্ডেশন এটিকে বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তমাশ্চর্যের মধ্যে একটি বলে স্বীকৃতি দেয়। মূলত হা-লং বে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেই সময় থেকেই। বাংলাদেশেরও দুটি স্থান এই প্রতিযোগিতায় টিকেছিল অনেকদূর। প্রথমে ছিল কক্সবাজার এবং সুন্দরবন, পরে প্রতিযোগিতায় অনেক দূর এগিয়েছিল সুন্দরবন। শেষ পর্যন্ত সুন্দরবনের স্থান না হলেও সপ্তমাশ্চর্যে স্থান করে নেয় হা-লং বে। এই স্থানটি পরিদর্শনে আমরা বেশি আগ্রহী ছিলাম এ কারণেই। হা-লংয়ের দূরত্ব ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় থেকে ১৭০ কিলোমিটার। গাড়িতে করে সময় লাগে চার ঘণ্টা। কখনও গ্রাম আবার কখনও ব্যস্ত শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে দৃষ্টিনন্দন হাইওয়ে। চার লেনের সুন্দর রাস্তা। মাঝখানে আইল্যান্ড। রাস্তার দুই ধার এবং আইল্যান্ডে ফুলের বাগান। নানা জাতের, নানা রঙের ফুল ফুটে আছে বাগানে। রাস্তার দুই ধারের প্রাকৃতিক নৈসর্গ। রাশি রাশি ধানক্ষেত। প্রচুর পাহাড়-পর্বত-বন। মেঘ-রোদের লুকোচুরি খেলা। কাছাকাছি পৌঁছতেই চোখে পড়ল উপসাগরের অপার সৌন্দর্য। দূরে পানির ওপর ভেসে আছে ছোট-বড় অনেক সবুজ দ্বীপ। সবুজ গাছের ছাউনিতে দ্বীপগুলো খণ্ড খণ্ড সবুজের টুকরো বলেই মনে হয়। পাথর বাঁধানো ঘাট। সুন্দর ঝকঝকে কাঁচের দেয়ালে নির্মিত অভ্যর্থনা কক্ষ। ঝকঝকে বিশ্রামাগার, টয়লেট। ছোট-বড় কয়েক শ’ বোট অপেক্ষা করছে পর্যটকদের জন্য। কোনটি ছেড়ে যাচ্ছে, কোনটি ফিরে আসছে। হা-লং বে উত্তর ভিয়েতনামের উত্তর-পূর্ব কোণে চীন সাগরের একটি উপসাগর। এর মোট আয়তন ১৫৫৩ বর্গকিলোমিটার। নানা আকারের প্রায় দুই হাজার পাথরের দ্বীপ রয়েছে এতে। দ্বীপের সংখ্যা ছোট-বড় ৭৭৫টি। অধিকাংশই লাইম স্টোনের। প্রতœতত্ত¡¡বিদদের ধারণা, প্রায় পাঁচ কোটি বছর ধরে ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে পাথরের দ্বীপগুলো। দৃষ্টিনন্দন লাইম স্টোনের দ্বীপগুলোর কঠিন বুক চিরে জন্ম নিয়েছে সবুজ শ্যামলিমা। শান্ত এবং গভীর নীল উপসাগরের পানি। অসংখ্য সবুজ দ্বীপ। দূরের সবুজ দ্বীপগুলো ক্রমশ ছোট হতে হতে যেন নীল আকাশের সঙ্গে মিশে গেছে। যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজ-নীলের ছড়াছড়ি। সাগর আর আকাশের নীলে সবুজ দ্বীপগুলো মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। হাজার বছর ধরে সাগরের বুকে জেগে থেকে দ্বীপগুলো সৌন্দর্য বিতরণ করছে কোটি কোটি প্রকৃতিপ্রিয় মানুষের মধ্যে। এটি কোন ভ্রমণ কাহিনী নয়। ভিয়েতনামের একটি পর্যটন কেন্দ্রের বর্ণনা মাত্র। ভিয়েতনাম দিয়ে শুরু করলাম এ কারণে যে, এই দেশটি আমাদের মতোই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে হাঁটছে দ্রæত। কৃষি ও শিল্পে উন্নয়নের পাশাপাশি দেশটি গুরুত্ব দিচ্ছে পর্যটন শিল্পের দিকে। হা-লং বে তাদের সযতেœ লালিত এমন একটি পর্যটন কেন্দ্র। বিশ্বের সব দেশ থেকে পর্যটকরা আসে হা-লং বে’র সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ভিয়েতনামে রয়েছে এমন আরও অনেক পর্যটন কেন্দ্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যবহৃত অনেক স্থানও তারা গড়ে তুলেছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে। বিশ্বের লাখ লাখ পর্যটক ভিয়েতনামে যায় এগুলো উপভোগ করার জন্য। ২০১৯ সালে এক কোটি ৮০ লাখ বিদেশী পর্যটক ভিয়েতনাম পরিভ্রমণ করেছে। প্রকৃতির লীলাভ‚মি বাংলাদেশে এমন সৌন্দর্যের অভাব নেই। আমাদের আছে মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। আছে কক্সবাজারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ বালির সমুদ্র সৈকত। সুন্দরবনের মতো সাগর-বৃক্ষের অপার সৌন্দর্যও আছে আমাদের। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-উপত্যকায় ডুবে থাকা যায় কয়দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দ্রæত এগিয়ে চলেছি অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে। ভিয়েতনামের মতোই কৃষি এবং শিল্পে আমাদের জিডিপি। আমরা শুধু পিছিয়ে আছি পর্যটন খাতে। বিশেষ করে বিদেশী পর্যটক আমাদের দেশে আসে খুবই কম। ২০১৯ সালে আমাদের দেশে বিদেশী পর্যটক এসেছে মাত্র তিন লাখ ২৩ হাজার। অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ পর্যটক। এক হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যায়। ২০০০ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৩/৪ লাখ। বর্তমানে পর্যটন খাত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে অনন্য অবদান রাখছে। এই খাতে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ, পরোক্ষভাবে ২৭ লাখ। এই পরিসংখ্যান খুবই আশাপ্রদ। সমস্যা হচ্ছে এই বিশাল সংখ্যার মধ্যে বিদেশী পর্যটক খুবই নগণ্য। বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতে পারলে বৃদ্ধি পাবে বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন। বড় হবে আমাদের অর্থনীতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি বাংলাদেশের সেই সামর্থ্য রয়েছে। শুধু নিতে হবে কিছু সঠিক পরিকল্পনা। এক সময় থাইল্যান্ডের মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল পর্যটন। এই শিল্পের মাধ্যমে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে তারা শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে অবকাঠামো গড়ে তুলে তারা ব্যাপক উন্নয়ন করেছে কৃষি খাতে। এখনও থাইল্যান্ডের মোট আর্থনীতির তিরিশ ভাগ জুড়ে আছে পর্যটন। বছরে প্রায় আড়াই কোটি বিদেশী পর্যটক দেশটি ভ্রমণ করে। একইভাবে ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। বিশ্বের বন্দর হিসেবে পরিচিত রাষ্ট্রটি শরিক হয়েছে উন্নত বিশ্বের কাতারে। এখনও এদের মোট জাতীয় আয়ের পঞ্চাশ ভাগ আসছে পর্যটন থেকে। পর্যটকদের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় শহর হচ্ছে দুবাই এবং ব্যাংকক। অন্যান্য জনপ্রিয় শহরের মধ্যে রয়েছে প্যারিস, কুয়ালালামপুর, নিউইয়র্ক, ইস্তান্বুল, রোম, টোকিও ইত্যাদি। দুবাই প্রতি বছর আয় করছে ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ব্যাংকক ২০ বিলিয়ন। ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করতে আন্তর্জাতিকমানের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সেক্টর যেমন-পরিবহন, হোটেল, মোটেল, রেস্তরাঁ, রিসোর্ট, এয়ারলাইন্সসহ অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম থেকে পৃথিবীর অনেক দেশ প্রতিবছর প্রচুর রাজস্ব আয় করছে। এটি অন্য যে কোন বড় শিল্প থেকে পাওয়া আয়ের চেয়ে বেশি। আমাদেরকেও এই কাতারে শরিক হতে হলে বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই হবে। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পর্যটন শিল্প। বিনিয়োগ করতে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে কাজ করতে এসে অনেক বিদেশী নগরিককে মাসের পর মাস এই দেশে থাকতে হচ্ছে। সপ্তাহান্তে সমৃদ্ধ পর্যটন কেন্দ্রই পারে তাদের চাঙ্গা করতে। এমন একটি ঘাটতির কথা প্রায়ই শোনা যায়। পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতির চিত্র। আমাদের কি আছে অপূর্ব সৌন্দর্যের আধার বাংলাদেশে প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যের অভাব নেই। পৃথিবীর দীর্ঘতম বালির সমুদ্র সৈকত আমাদের। বর্তমান সরকার কক্সবাজারকেন্দ্রিক নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, এই মেরিন ড্রাইভ চট্টগ্রাম পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। ১২০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ছাড়াও নতুন তিনটি আন্তর্জাতিকমানের পার্ক তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। কক্সবাজার লাগোয়া মহেশখালীতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ট্যুরিস্টদের সহজ যাতায়াতে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে গড়ে তোলা হচ্ছে আন্তর্জাতিকমানে। অদূর ভবিষ্যতে এই বিমানবন্দর হবে আঞ্চলিক হাব। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে ট্রেন লাইন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সহজ চলাচলে তৈরি হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে ট্যানেল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট রয়েছে আমাদের। ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার সুন্দরবন হতে পারে বিশ্বের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ কেন্দ্র। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান হিসেবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য সুন্দরবনকে পৃথিবীর অন্য যে কোন পর্যটন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্ররূপে উপস্থাপন করেছে। জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, নদী ও খাল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্যা দ্বীপমালা। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও চিত্রা হরিণ, কুমির, ডলফিন এবং নানা ধরনের পাখি এই বনভ‚মির বৈচিত্র্য বাড়িয়েছে। সঠিক পরিকল্পনায় সুন্দরবন হয়ে উঠতে পারে ভিয়েতনামের হা-লং বে থেকে আরও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র। সুন্দর ব্যবস্থাপনায় আসতে পারে লাখ লাখ বিদেশী পর্যটক। পর্যটনের আরেক সম্ভাবনার নাম পার্বত্য অঞ্চল। এই এলাকায় পর্যটনের মূল উপকরণ সবুজে ঘেরা পাহাড়। ঋতুভেদে এই এলাকার রূপ বদলায়। শীতে কুয়াশা এবং মেঘে ঢাকা পাহাড়ে সোনালি মিষ্টি রোদ যে কার মন ভরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বর্ষায় চারদিক জেগে ওঠে সবুজের সমারোহ। পাহাড় ফিরে পায় তার নতুন যৌবন। ঝর্ণা, হ্রদ কিংবা নদীগুলো সাজে নতুন রূপে। এই অঞ্চলের মানুষের ভিন্নধর্মী জীবনাচরণ পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। এছাড়া আমাদের রয়েছে সিলেট। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রানী সিলেট অঞ্চলের চা বাগান পর্যটকদের মন জুড়ানোর জন্য যথেষ্ট। জাফলং, স্বচ্ছ জলরাশির লালাখাল, পাথর-জলের মিতালির বিছনাকান্দি, পাহাড় ভেদ করে নেমে আসা পাংথুমাই ঝর্ণা, রাতারগুল, হাকালুকি এবং কানাইঘাটের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য বিশ্বের সকল দেশের পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওড় অঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠতে পারে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। আমাদের রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এর বৈশিষ্ট, হচ্ছে একই সৈকত থেকে সুর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। কি করতে হবে আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশই প্রকৃতির দান। নতুন করে তেমন কিছুই করার প্রয়োজন নেই। শুধু দরকার সঠিক পরিকল্পনায় কেন্দ্রগুলো সাজানো এবং যথাযথ পরিচর্যা। প্রকৃতিনির্ভর বিশ্বখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে বাংলাদেশ কিছুতেই পিছিয়ে নেই। বর্তমান সরকারের বেশ কিছু উদ্যোগ এই স্থানগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এখন পর্যটন কেন্দ্রগুলো পরিভ্রমণ করছে। এখন আমাদের প্রয়োজন বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করা। এজন্য সবার আগে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বিদেশীদের উপযোগী করে তুলতে হবে। ১. অবকাঠামো- কক্সবাজার বা সেন্ট মার্টিনে অবকাঠানো গড়ে উঠেছে, আরও হচ্ছে। কুয়াকাটাও এগিয়েছে অনেকটা। সুন্দরবন, পার্বত্য অঞ্চল এবং সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে আরও অবকাঠামো প্রয়োজন। ২. নিরাপত্তা- পর্যটনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিরাপত্তা। বাংলদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই সক্ষমতা অর্জন করেছে। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই এটি প্রমাণ হয়েছে। সারা বছরে একটি মাত্র দুর্ঘটনাই গোটা দেশের পর্যটন শিল্পের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিদেশীরা যতক্ষণ নিরাপদ ভাবতে না পারবে তারা কিছুতেই এসব এলাকায় ভ্রমণে যাবে না। ৩. বিনোদন শুধু প্রকৃতিতে সন্তুষ্ট থাকেন না পর্যটকরা। প্রকৃতি খুব বেশি সময় কাউকে ধরেও রাখতে পারে না। এজন্য বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে বহুমুখী বিনোদনের ব্যবস্থা। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ তাদের সমুদ্র সৈকতগুলোকে সাজিয়েছে এক্যুরিয়াম, ড্রাইভসহ নানা বিনোদনে। পাহাড়ে রয়েছে ক্যাসিনো, ক্যাবলকারসহ নানা আয়োজন। বিশ্বের প্রায় সব পর্যটন কেন্দ্র ঘিরেই রয়েছে বর্ণাঢ্য সব আয়োজন। বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হলে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখতেই হবে। এজন্য বানাতে হবে এক্সক্লুসিভ জোন। বিশ্বের সব দেশেই এ ধরনের এক্সক্লুসিভ জোন রয়েছে, যেখানে সেই দেশের নাগরিকদের প্রবেশ নিষেধ। ৪. যোগাযোগ প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রের সঙ্গে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে বিষয়টির দিকে নজর দিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই কক্সবাজার ও কুয়াকাটা যাওয়ার পথ আরও সহজ হয়ে যাবে। সিলেটের যোগাযোগও বেশ উন্নত। সুন্দরবনের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি আরও একটু নজর দিতে হবে। ৫. ইতিবাচক প্রচার সবকিছুর আয়োজন শেষ হলে আমাদের জোর দিতে হবে প্রচার কাজে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। এখন আর আমরা শুধু দারিদ্র্য ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ নই। আমাদের আছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ট্যানেল, এক্সপ্রেসওয়ের মতো অনেক সাফল্য। এখন আমাদের পর্যটন শিল্প সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা অনেক সহজ। একই সঙ্গে এই শিল্পের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে নজর দিতে হবে। সঠিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারবে। লেখক : ডেপুটি এডিটর, জনকণ্ঠ
×