ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশীর অবৈধ বাস

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ১৭ অক্টোবর ২০২১

বিদেশীর অবৈধ বাস

বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণে আসার সঙ্গত কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পর্যটন, পেশাগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক। নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত তারা এদেশে অবস্থান করেন এবং প্রয়োজন শেষে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু এদেশে থেকে যাবার উদ্দেশ্য নিয়ে যারা জাল ভিসা ও জাল আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন, তাদের উদ্দেশ্য যে মন্দ, সেটি সহজেই অনুমেয়। জনকণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে কুড়ি হাজার বিদেশী অবৈধভাবে বসবাস করছেন। সবচাইতে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এর ভেতর তিন হজার বিদেশীরই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ, তারা আত্মগোপন করে আছেন। তাদের কোন বৈধ উপার্জন থাকার কথা নয়। ফলে অবৈধ আয়েই তাদের জীবনযাপন চলছে। অবৈধ আয়ের সঙ্গে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তিন হাজার নাম-পরিচয়হীন বিদেশী অপরাধী এদেশে নানা অপকর্ম করে চলেছেন। তাদের নিজেদের পক্ষে অপরাধ পরিচালনা অসম্ভব। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের এদেশীয় সহযোগী রয়েছে। এদেশের নাগরিকদের সহায়তা ছাড়া এই তিন হাজার বিদেশী নাগরিকের পক্ষে বাংলাদেশে বসবাসও অসম্ভব। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশী নাগরিকদের জাল ভিসা ও জাল আমন্ত্রণপত্র নিয়ে বাংলাদেশে এসে লাপাত্তা হয়ে যাবার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। তাদের বেশিরভাগই নাইজিরিয়াসহ আফ্রিকান নাগরিক। আবার অবৈধভাবে জাল ভিসা ও আমন্ত্রণপত্রে ঢাকায় এসে বসবাস করছেন আরও প্রায় ২০ হাজার বিদেশী নাগরিক। নিরদ্দেশ হওয়া ও অবৈধ এসব নাগরিককে বার বার তলব করেও তাদের কোন সাড়া না পাওয়ায় অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের মধ্যে প্রায় ১৬টি দেশের নাগরিক রয়েছেন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এসব বিদেশী কখন, কিভাবে কী উদ্দেশ্যে এ দেশে ঢুকেছে- তার সঠিক তথ্য নেই সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে। এমনকি তাদের সঠিক সংখ্যাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কোন কর্মকর্তার জানা নেই। এমনটি হবে কেন? জাল ভিসায় বিদেশীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের বিদ্যমান ভিসার মেয়াদ শেষের আগেই তা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ, মেয়াদের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে সংশ্লিষ্ট আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের (বেসরকারী) বিরুদ্ধে ভিসার বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী অর্থদণ্ড আরোপের কথা বলা হয়েছে। তাতে পরিস্থিতির কতটুকু উন্নতি হবে অনুমান করা কঠিন। ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা অবৈধ বিদেশীদের তথ্য প্রদানের আহ্বান জানিয়ে একটি হটলাইন চালু করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এটিএম কার্ড জালিয়াতি, মাদক ব্যবসা, জাল মুদ্রা তৈরি ও প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বিদেশী নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে। এমনটি চলতে পারে না। জনকণ্ঠ বছর দেড়েক আগে সম্পাদকীয়তে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিল যে, অনুমোদনহীনভাবে বিদেশী অপরাধীরা বাংলাদেশে অবস্থান করছে বছরের পর বছর, কেন ও কিভাবে সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো ব্যবস্থা মোটেও কাম্য নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হলে আজকে কুড়ি হাজার বিদেশী নাগরিক অবৈধভাবে এদেশে অবস্থান করতে পারতেন না। সেইসঙ্গে ‘নিখোঁজ’ তিন হাজার ‘অপরাধী’ও দেশের মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিত না। দেশবাসীর প্রত্যাশা, বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থা আরও বেশি দায়িত্বশীল এবং পেশাদারিত্বের পরিচয় রাখতে সমর্থ হবে।
×