ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দমন করতে হবে

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ১৭ অক্টোবর ২০২১

দমন করতে হবে

শুক্রবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয়া দুর্গোৎসব। তবে তার আগে সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে কুমিল্লা। নগরীর একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবমাননার খবর ছড়িয়ে দিয়ে কুমিল্লাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে সহিংস ক্ষোভের প্রকাশ ঘটানো হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এরই জের ধরে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়, যেটির অভিপ্রায় ছিল সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি। একই দিনে চট্টগ্রাম শহর ও নোয়াখালীর চৌমুহনী শহরে কয়েকটি পূজামণ্ডপে ঘটে ভাংচুরের ঘটনা। বৃহস্পতিবারও দেশের কয়েকটি স্থানে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এসবই অনাকাক্সিক্ষত ও উদ্বেগজনক। যদিও সরকারের দ্রæত কঠোর ভ‚মিকা গ্রহণের ফলে চিহ্নিত অপশক্তি বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা ভারত সরকারের প্রশংসা অর্জন করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের সুমহান ঐতিহ্য। এ দেশের মানুষ নিজ নিজ ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এ দেশে বিদ্যমান। সিংহভাগ মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও বকধার্মিক ও কাÐজ্ঞানহীনদের কারণে কখনও কখনও দেশের সুনামও কলঙ্কিত হয়ে ওঠে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে অটুট রাখতে হবে। ইসলাম বিশ্ব মানবতার ধর্ম, কল্যাণ ও শান্তির ধর্ম। এ ধর্ম কখনই অন্য ধর্মের উপাসনালয় কিংবা বাড়িঘরে হামলা করার অনুমোদন দেয় না। এবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসবের সময় উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করায় সক্রিয় ভ‚মিকা রেখেছে সরকার। এমনটাই ছিল প্রত্যাশিত। উল্লেখ্য, বিএনপি শাসনামলে তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বহুবার হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তাদের ধর্মকর্ম পালনে বাধা দান এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে তখন। গত তিনদিন দেশের কয়েকটি স্থানে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলাকালে বিএনপির একাধিক নেতার বক্তব্য ছিল বিভ্রান্তিকর, যা মানুষকে বিস্মিত করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুক্রবার বলেছেন. বিএনপি নতুন করে সা¤প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে এবং সহযোগিতা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপব্যবহারের বহুল উদাহরণ দেখা যায় জাতীয় সঙ্কটকালে। পক্ষান্তরে দেশের গণমাধ্যম বিশেষত প্রিন্ট মিডিয়া দায়িত্বশীলতার পরিচয় রেখে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবারও ডিজিটাল মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়েছে চক্রান্তকারীরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দ্রæততম সময়ের মধ্যে তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যা প্রশংসনীয়। ফেসবুক-ইউটিউবে ভুল তথ্য দিয়ে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানো তিন শতাধিক আইডি বন্ধ করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি দিয়েছে পুলিশসহ একাধিক সংস্থা। কুমিল্লার ঘটনার পর বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত এসব আইডি শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুক্রবার পর্যন্ত দুই শ’ আইডি বন্ধ করেছে বিটিআরসি। এই সক্রিয়তা সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেয়া যে প্রতিরোধ করেছে; তা নিয়ে দ্বিমত নেই। আমরা বারবার বলে আসছি, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে সাম্প্রদায়িক ও অশুভ শক্তিকে পরাভ‚ত করে এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর রক্তস্নাত এ দেশে তাদের কালোছায়া কোনভাবেই আমরা দেখতে চাই না।
×