ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেদনা আর আনন্দের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৬ অক্টোবর ২০২১

বেদনা আর আনন্দের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উলুধ্বনি, শাঁখ আর ঢাকের বাদ্যে মুখরিত বুড়িগঙ্গা। মঙ্গলধ্বনির সঙ্গে থেকে থেকে শোনা যাচ্ছে হাজার মানুষের আহ্বান ‘আসছে বছর আবার হবে, মা তুমি আবার এসো’। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রতিমাসজ্জিত নৌকা নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে এ’তীর থেকে ও’তীর। শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো বুড়িগঙ্গা যেন এক মহা উৎসবে রূপ নিয়েছে। এর আগে ‘ধান-দূর্বার দিব্যি, মা তুমি আবার এসো’...বাঙালী হিন্দু ভক্ত কণ্ঠের এমন আকুতির ভেতর প্রতিমা বিসর্জনে বিদায় হলো দেবী দুর্গার। শান্তিজল গ্রহণে আড়ম্বরেই শেষ হলো বাঙালী হিন্দুদের সাংবাৎসরিক সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের দশমীতে শুক্রবার মণ্ডপে মণ্ডপে বিহিতপূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি। অতঃপর দেবীর বিসর্জন আর শান্তিজল গ্রহণ। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, টানা পাঁচদিন মাটির প্রতিমারূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে দুর্গা ফিরে গেছেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। সকালে বিহিতপূজার পর ভক্তের কায়মনো প্রার্থনা- মহামারী করোনা থেকে নিষ্কৃতি পাক এই পৃথিবী। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় জাগরূক হোক সকল মানুষ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রতিবাদে এবার কাক্সিক্ষত সিঁদুর খেলা থেকে বিরত ছিলেন হিন্দু রমণীরা। গত বছরের মতো এ বছরও করোনা পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে দর্পণ ও প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। শুধুমাত্র পূজা মন্ডপগুলোর কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে দর্পণ ও প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। এদিন বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। একদিকে বিদায়ের বেদনা অন্যদিকে উৎসব আনন্দে দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা। বিকেল ৩টার পর থেকে রাজধানীর সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে দেবী দুর্গার বিসর্জন শুরু হয়। শাহজাহানপুর থেকে আসা বাংলাদেশ রেলওয়ে পূজা কমিটির প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীর বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর অন্যান্য পূজামন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। করোনা থেকে মুক্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ সব ধরনের মঙ্গল কামনা ও অশুভকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। দুপুরের পর পর রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকা থেকে একে একে আসতে থাকে প্রতিমাবহনকারী বিভিন্ন শোভাযাত্রা। প্রতিমাগুলো নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হয় বুড়িগঙ্গা নদীতে। তারপর মঙ্গলধ্বনি, উলুধ্বনি, শাঁখ আর ঢাকের ধ্বনিতে দেবী প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় বুড়িগঙ্গায়। আবারও মঙ্গলবার্তা নিয়ে আগামী বছর যেন মা দুর্গা আগমন করেন বিসর্জনকালে সেই প্রার্থনা করেন ভক্তরা। বিসর্জনের আয়োজনের সঙ্গে আসা তাঁতিবাজারের সুমন্ত সাহা বলেন, মা দেবী দুর্গা যেন অশুভ শক্তির বিনাশ করে সবাইকে ভালো রাখেন। পাশাপাশি তিনি যেন দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের মধ্যদিয়ে পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করেন। এমনটাই আমার প্রার্থনা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত জানান, শুক্রবার জুমার দিন হওয়ায় দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিসর্জনের জন্য কোন প্রতিমা মন্ডপ থেকে বের করা হয়নি। আমরা ৩টার পর থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্বটি শুরু করি। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, দেবী দুর্গা এবার এসেছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়া এমন একটি বাহন যা যুদ্ধের সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঘোড়ার পায়ের শব্দও যুদ্ধেরই ইঙ্গিত দেয়। তাই পঞ্জিকা মতেই ঘোটকে আগমন মানেই ছত্রভঙ্গের কথাই বলা হয়। অর্থাৎ এই সময়ে যুদ্ধ, অশান্তি, হানাহানির সম্ভাবনা থাকে। পঞ্জিকা বলছে, মা দুর্গার এবার দোলায় গমন। দোলায় গমনের ফলাফল হলো মড়ক লাগা। ১০ অক্টোবর রবিবার সারাদেশের পূজামন্ডপে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙ্গার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। মন্ডপেন্ডমন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী এবং ১৫ অক্টোবর দশমীর মধ্যদিয়ে সমাপ্ত ঘটে শারদীয় দুর্গাপূজার। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারাদেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি ও ২০২০ সালে ৩০ হাজার ২১৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। এটি গত বছরের চাইতে ১ হাজার ৯০৫টি বেশি। এবছর ঢাকা মহানগরীর পূজার সংখ্যা ২৩৮টি। যা গতবছর থেকে ৪টি বেশি ছিল।
×