উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান অভিযাত্রায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রবৃদ্ধির সূচকগুলোর লক্ষ্যমাত্রায় খুব বেশি দূরে নয়। করোনা সংক্রমণে সৃষ্ট দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। বৈশ্বিক ঘুরে দাঁড়ানোর অর্থনীতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ। উন্নত বিশ্ব এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো পুষিয়ে নেয়ার কর্মপ্রচেষ্টাকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতির নতুন আঙ্গিকে তৈরি হওয়ার অনন্য অভিগমন বিচার বিশ্লেষণে নিয়ে এসে তথ্যউপাত্ত খাঁড়া করছে। প্রতিটি দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির আলোকে আইএমএফ এক গবেষণা প্রতিবেদনও প্রস্তুত করেছে। সংস্থাটির বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে উঠে আসে বাংলাদেশ ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ৪.৬ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৬.৫ শতাংশে। দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ সমৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের।
গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট প্রবৃদ্ধি আসবে ৬.৪ শতাংশ। মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির এই সামান্য হেরফের আমলে না নিয়েও বলা যায় বাংলাদেশ নতুনভাবে অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে জোর কদমে এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জিডিপি নিয়েও প্রতিবেদনে তথ্য প্রকাশ করা হয়। ১৩০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটিতে উন্নয়ন মান নির্ণয় করা আরও চ্যালেঞ্জের বিষয়। প্রতিবেদনে অনুযায়ী ভারত জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশের চেয়ে পেছনে রয়েছে। আইএমএফের তথ্যমতে, মোট দেশজ উৎপাদনে বাংলাদেশ ভারতকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, গত দুই বছর ধরেই উৎপাদন অর্থনীতির নিরিখে বাংলাদেশ ভারতের চাইতে এগিয়ে।
‘মহামারীর সময় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে আরও জানা যায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এই প্রবৃদ্ধি গড়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫.৯ শতাংশ। গতবার যা মাইনাস ৩.১ শতাংশ ছিল। বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলো বিভিন্ন উপায়ে এগিয়ে গেলেও অপেক্ষাকৃত পেছনে পড়তে থাকে উন্নয়নশীল দেশগুলো। অনুন্নত রাষ্ট্রগুলো প্রবৃদ্ধিকে সেভাবে বেগবান করতে হিমশিম খাচ্ছে। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, উন্নত বিশ্ব করোনা অতিমারীকে যেভাবেই হোক সামলানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। টিকাদান কর্মসূচীকেও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া দেশের তুলনায় সর্বজনীন করার প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলো আগামী ২/৩ বছরেও সেখানে পৌঁছানোর কোন ইঙ্গিত এখনও অবধি দিতে পারেনি। অর্থাৎ মহামারীকে অর্থনীতির খাত থেকে বিযুক্ত করতে ব্যর্থ হলে প্রবৃদ্ধিও দায়সারা গোছের হবে, সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে প্রভাব ফেলবে অতি সামান্যই। মহামারী তার যাত্রাপথ দীর্ঘায়িত করার বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় অপেক্ষাকৃত পেছনে থাকা দেশগুলো তার মাসুল দেবে প্রবৃদ্ধির হারের নিরিখে। এর ফলে হরেক রকম সমস্যাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আইএমএফের এই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ জিডিপির দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে মালদ্বীপ। বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ভারতের চেয়ে। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশ সরকারের প্রণোদনা, গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার এবং করোনার টিকা সাধ্যমতে গণমানুষের মাঝে সম্প্রসারিত করা। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনার নির্মম আঘাত সহ্য করেও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকছে এর চেয়ে বড় সফলতা আর কিছু নয়। এর ধারাবাহিকতাকে সুষ্ঠু সমন্বয় করে আরও বেগবান করাই সময়ের অপরিহার্য দাবি।
শীর্ষ সংবাদ: