ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উলিপুরে মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আটক ১৮

প্রকাশিত: ২০:২২, ১৪ অক্টোবর ২০২১

উলিপুরে মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আটক ১৮

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আইন শৃংখলা রক্ষায় কুড়িগ্রামের উলিপুরে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার গভীর রাত থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তারা টহল দিচ্ছে। এদিকে উলিপুরের ৩টি ইউনিয়নের ৭টি মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৮জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কুড়িগ্রামের ২২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল জামাল হোসেন জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের চাহিদার ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে বুধবার দিবাগত রাত ২টায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েনের প্রস্তুতি রয়েছে। উলিপুর থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, এখন পর্যন্ত ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ কারো নাম জানাতে না চাইলেও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, আটকৃতদের মধ্যে একজন জামায়াত নেতাসহ কয়েকজন বিএনপির সমর্থক রয়েছেন। কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এমপি অধ্যাপক এমএ মতিন অভিযোগ করেছেন, একটি রাজনৈতিক দলের ইংগিতে অন্ধ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি উলিপুরের শান্তিপুর্ণ পরিবেশের বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরো জানিয়েছেন, দলীয় কর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি সত্বেও একের পর হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিশোরপুরে পুলিশকে ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলনা। বরং হামলার সময় পুলিশের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয় ভূমিকা ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় দুই দফায় কুমিল্লার ঘটনার জেরে উলিপুর বড় মসজিদ থেকে একদল মুসল্লি শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর রাত ১০টা পর থেকে মন্দিরে মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসীরা জানান, হামলাকারীদের বেশীরভাগই যুবক ছিল। পশ্চিম কালুডাঙ্গা ব্রাহ্মনপাড়া দূর্গা মন্দিরের পুরোহিত জীবন কৃষ্ণ চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, রাত সাড়ে দশটার দিকে সাত দরগাহ বাজারের দিকে থেকে জঙ্গি মিছিল নিয়ে এসে প্রায় ১ হাজার থেকে ১২'শ মানুষ এসে মন্দিরে হামলা ও অগ্নি সংযোগ চালায়। এতে প্রতিমাসহ পূজার সব কিছু ধ্বংস করে দেয়। হোকডাঙা ভারতপাড়া সর্বজনীন দূর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক কমলেন্দু রায় জানান, রাত বারোটার দিকে লাঠি সোটা নিয়ে একদল লোক এসে মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর চালায়। এছাড়াও পাশের বাড়িতে হামলা করে তারা। নেফরা শ্রী শ্রী দূর্গা মন্দিরের সভাপতি নিপেন রায় বলেন, রাত এগারটার দিকে প্রায় ৫ থেকে ৭‘শ লোক এসে মন্দিরের গ্রিল টিন, প্রতিমা ও পাশের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে। এরপর খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এছাড়াও পশ্চিম কালুডাঙ্গা সর্বজনীন দূর্গা মন্দির, থেতরাই ফাসিদাহ বাজার সার্বজনীন দূর্গামন্দির, হাতিয়া পুরাতন অনন্তপুর বাজার সার্বজনীন দূর্গামন্দির, হাতিয়া ভবেশ নম:দাস পাড়া দূর্গা সর্বজনীন মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর চালায় তারা। এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম.এ মতিন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ওয়ালিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, উলিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টুসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
×