ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে

আন্তর্জাতিক রুটে ২৪ ধরনের মাদক আসছে দেশে

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ১৪ অক্টোবর ২০২১

আন্তর্জাতিক রুটে ২৪ ধরনের মাদক আসছে দেশে

শংকর কুমার দে ॥ ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ ও ‘গোল্ডেন ক্রিসেন্ট’ অঞ্চল মাদক চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট। বাংলাদেশে মাদক পাচারের জন্য আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক চোরাচালানি চক্র। এই চক্র আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে ২৪ ধরনের মাদক পাচার করছে বাংলাদেশে। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানিরা নিয়ে যাচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। অবৈধ মাদক আমদানির জন্য প্রতি বছর দেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার কারণে মাদকাসক্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। দেশের ৫ শতাধিক মদকাসক্তের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে তাদের ১৫০ টাকার মাদক লাগে। এই হিসাবে একজন মাদকাসক্ত বছরে ৫৪ হাজার ৭৫০ টাকার মাদক সেবন করে। দেশের ৭০ লাখ মাদকাসক্ত বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার মাদক সেবন করে। এসব মাদকের পুরোটাই অবৈধভাবে দেশে আসছে। আর পাচার হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল অঞ্চলভুক্ত মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবা। গোল্ডেন ক্রিসেন্টভুক্ত অঞ্চল আফগানিস্তান তালেবানদের দখলে যাওয়ার পর এখন আফিম মাদকে অনুপ্রবেশ ঘটে ছয়লাব হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে সরকার। অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ মাদকের চাহিদা থাকায় গাল্ডেন ট্রায়াঙ্গল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্ট ব্যবহার করে মাদক আসা বন্ধ হচ্ছে না। সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আফিম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত আফগানিস্তান। আফিম দিয়ে নানা ধরনের ক্ষতিকর মাদক তৈরি করে নানা কায়দায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করছে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্র। বাংলাদেশে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন আর গাঁজার বাইরেও অন্তত ২৪ ধরনের মাদক সেবন করে মাদকসেবীরা। মাদকগুলো কোন সীমান্ত দিয়ে আসছে, কীভাবে আসছে? এসবের তথ্য ফুটে উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে এখন পর্যন্ত ২৪ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে। আর এসব মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশী মদ, বিদেশী মদ, বিয়ার, রেক্টিফাইড স্পিরিট, ডিনেচার্ড স্পিরিট, তাড়ি, প্যাথেডিন, বুপ্রেনরফিন (টি ডি জেসিক ইঞ্জেকশন), ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ (জাওয়া), বুপ্রেনরফিন (বনোজেসিক ইঞ্জেকশন), মরফিন, আইচ পিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল-ইথাইল কিটোন। মাদকের মাফিয়া পরিচিত বড় ব্যবসায়ীদের কেউ ধরা পড়ে না। অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। বিদেশ থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদক ব্যবসা। মাদকের প্রবেশপথ হিসেবে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ৩২টি জেলাকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, টাকি, বশিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁও, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রানাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদীয়া, মালদাহ, বালুরঘাট, আরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট এবং দিনাজপুরে মাদক ঢুকছে। ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোর ৪টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনায়। বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ভারতের অসম, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের ৪টি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এবং ফেনীতে। এছাড়াও ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেনসিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ডিএনসি। এসব রুট দিয়ে দেশে হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা ঠেকাতে বাংলাদেশের আহ্বানে ভারত ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ফেনসিডিল ও তৈরির উপকরণ সরবরাহ এবং বহন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত।
×