ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২০ হাজার বিদেশীর অবৈধ বসবাস, লাপাত্তা ৩ হাজার

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ১৪ অক্টোবর ২০২১

২০ হাজার বিদেশীর অবৈধ বসবাস, লাপাত্তা ৩ হাজার

আজাদ সুলায়মান ॥ বিদেশী নাগরিকদের জাল ভিসা ও জাল আমন্ত্রণপত্র নিয়ে বাংলাদেশে এসে লাপাত্তা হয়ে যাবার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় হাজার তিনেক বিদেশী নাগরিক ঢাকায় এসে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নাইজিরিয়াসহ আফ্রিকান নাগরিক। আবার অবৈধভাবে জাল ভিসা ও আমন্ত্রনপত্রে ঢাকায় এসে বসবাস করছেন আরও প্রায় ২০ হাজার বিদেশী নাগরিক। নিরুদ্দেশ হওয়া ও অবৈধ এসব নাগরিককে বার বার তলব করেও তাদের কোন সাড়া না পাওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে তিনটি নির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে সম্প্রতি এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকেও এ বিষয়ে তৎপর থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশে এসে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ও অবৈধ নাগরিকদের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আগের চেয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বিদেশী নাগরিকদের ওপর। যারা লাপাত্তা হয়ে গেছে আর ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশী যেসব নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাদের বিষয়েও সক্রিয় রয়েছে গোয়েন্দারা। তবে তাদের অনেকেই ফের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হবে। তবে কেউ যাতে সমাজবিরোধী কোন কর্মকা- চালাতে না পারে, সেজন্য তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। তারা যেন কোন অপরাধমূলক কাজেও জড়াতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে সরকার। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে বিদেশী নাগরিকদের তথ্যের পরিসংখ্যানে হয়ত গরমিল থাকতে পারে। তবে এখন সেটি সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হচ্ছে। কারা কখন দেশে ঢুকছেন বা বের হচ্ছেন সে তথ্য ডাটাবেজে সংরক্ষণ থাকবে। তখন অবৈধভাবে অবস্থান করার সুযোগ থাকবে না। জানা গেছে, জাল ভিসায় এসব বিদেশীর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে- সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানে কমর্রত বিদেশী নাগরিকদের বিদ্যমান ভিসার মেয়াদ শেষের আগেই তা বৃদ্ধির সুপারিশ করে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোন বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশে ভিসার মেয়াদের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে সংশ্লিষ্ট আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের (বেসরকারী) বিরুদ্ধে ভিসার বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী অর্থদ- আরোপের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধভাবে বসবাসকারী সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের বিধি মোতাবেক চলে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে, একই ইস্যুতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন এলাকা কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির সিনিয়র সচিব, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো মহাপরিচালক, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের পরিপ্রেক্ষিতে নাইজিরিয়াসহ অন্য আফ্রিকান দেশ থেকে বিদেশী নাগরিকরা জাল ভিসা ও জাল আমন্ত্রণপত্র নিয়ে বাংলাদেশ এসে থাকেন। বাংলাদেশে প্রবেশের পর তারা ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি না করে অবৈধ হয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করেন এবং এটিএম কার্ড জালিয়াতি, মাদক ব্যবসা, জাল মুদ্রা তৈরি ও প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। আফ্রিকান দেশগুলো থেকে কোন যাত্রী বাংলাদেশী ভিসা নিয়ে ইমিগ্রেশনে এলে ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসার সঠিকতা যাচাইয়ের পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ভিসা ইস্যু করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম যাচাইসহ তাদের দেশে আগমনের যৌক্তিকতা যাচাই করে থাকে। এতে আরও বলা হয়, যাচাইয়ে জাল ভিসা শনাক্তের পাশাপাশি দেখা যায়- যাত্রীদের ভিসা ঠিক থাকলেও আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নামসর্বস্ব অর্থাৎ তাদের কোন কার্যক্রম ও ঠিকানা সঠিক থাকে না। এ অবস্থায় কালো তালিকাভুক্ত বাণিজ্যিক, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর নাম, ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানের তালিকা স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হবে। জানা গেছে, এত বিদেশী নাগরিক দেশে বসবাসের মূল কারণ নজরদারি না থাকা। অনেক বিদেশী পর্যটন ভিসায় এসে পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে থেকে যাচ্ছেন বাংলাদেশে। ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন বেশ কয়েক হাজার বিদেশী। এদের মধ্যে প্রায় ১৬টি দেশের নাগরিক রয়েছেন। তবে এসব বিদেশী কখন, কীভাবে কী উদ্দেশে এ দেশে ঢুকছে- তার সঠিক তথ্য নেই সরকারের কাছে। এদের সঠিক সংখ্যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কোন কর্মকর্তারও জানা নেই।
×