ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা ॥ কঠোর অবস্থানে সরকার

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৪ অক্টোবর ২০২১

কুমিল্লায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা ॥ কঠোর অবস্থানে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাউকে আইন হাতে তুলে না নেয়ার ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার রাতে রাজধানীর কেআইবি প্রাঙ্গণে শারদীয় দুর্গাপূজা মহাঅষ্টমীর শুভেচ্ছা প্রদান অনুষ্ঠানে বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে, কেউ ছাড় পাবে না। তিনি কুমিল্লার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাজ উল্লেখ করে বলেন, যারা হিন্দুদের মন্দিরে হামলা চালায় তারা দলীয় পরিচয়ের হলেও ছাড় দেয়া হবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যারা নষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ঘটনার পর পরই ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খান এ ঘটনায় কাউকে আইন হাতে তুলে না নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিমন্ত্রীর বরাত দিয়ে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কুমিল্লায় পবিত্র কোরান অবমাননা সংক্রান্ত খবর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। এতে বলা হয়, সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কুমিল্লায় পবিত্র কোরান অবমাননা সংক্রান্ত খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খবরটি খতিয়ে দেখার জন্য ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। প্রতিমন্ত্রীর বরাত দিয়ে এতে আরও বলা হয়, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে কেউ এ ঘটনা সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। সবাইকে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো। এর আগে বুধবার সকালে একটি মহল কুমিল্লা নগরীর একটি পূজাম-পে পবিত্র কোরান অবমাননার খবর ছড়িয়ে দেয়। ফলে নগরজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, গুলি, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের ৩ কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছিল। নগরীর মোড়ে মোড়ে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার টহল জোরদার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানায়, ধর্মগ্রন্থ অবমাননার এ বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে লোকজনের মুখে মুখে জানাজানি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়লে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সেখানে জড়ো হতে থাকে এবং সেখানে ক্ষুব্ধ জনতার ঢল নামে। একপর্যায়ে হাজার হাজার জনতা নানুয়া দীঘির পাড়ে পবিত্র কোরান অবমাননার প্রতিবাদে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান শুরু করে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে যান এবং ক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু এতেও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হতে থাকলে পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি চালায়। এসময় এলাকাটি অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুপুরের পর থেকে শহরজুড়ে আতঙ্ক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় নগরীর কান্দিরপাড়, রাজগঞ্জ, চকবাজার, টমছম ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ সময় কয়েকটি পূজাম-পের গেটে ভাংচুর হয়। দুপুরের পর নগরীতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মহড়া বের করা হলে পরিবেশ শান্ত হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওই এলাকার সিসি ফুটেজ পরীক্ষা ও তদন্ত করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ৩ ॥ বুধবার সকালে কুমিল্লা নগরীর ঘটনার পর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে। হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে। খবর ওয়েবসাইটের। সংঘর্ষের পর হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিনজনের লাশ আসার কথা জানিয়েছেন কর্তব্যরত এক চিকিৎসক। তবে সংঘর্ষে কারও নিহত হওয়ার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। দুপুর নাগাদ কুমিল্লার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও পাশের জেলা চাঁদপুরে সন্ধ্যার পর মন্দিরে হামলা হয় বলে হাজীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি রুহিদাস বণিক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাত ৮টার পর উপজেলার মনিনাগ এলাকা থেকে একটি মিছিল এসে মন্দিরে (লক্ষ্মীনারায়ণ জিওর আখড়া) হামলা চালায়। আরও কয়েকটি স্থানে মন্দিরে হামলা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
×