ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুস্তফা কামাল ক’ওয়েলথ অর্থমন্ত্রী সভার পরবর্তী সভাপতি

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১৪ অক্টোবর ২০২১

মুস্তফা কামাল ক’ওয়েলথ অর্থমন্ত্রী সভার পরবর্তী সভাপতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী বছরের জন্য কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রী সভার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মালয়েশিয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব ও ব্রুনাইয়ের সমর্থনে তিনি পরবর্তী সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। করোনা মহামারী মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমান সঙ্কট মোকাবেলায় কমনওয়েলথ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পারে। বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এই অর্জন অত্যন্ত গৌরব ও দেশের জন্য সম্মানের বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ মর্যাদার জন্য বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রী কমনওয়েলথ নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার সাইড লাইনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রীদের ভার্চুয়াল সভা হয়। ওই সভায় কমনওয়েলথভুক্ত ৫৪টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। ওই সভায় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অর্থমন্ত্রীর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ তৈরি হলো বাংলাদেশের। সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এক দশকে গড়ে ৭.৪ শতাংশ অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। এমনকি অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯ মহামারীকালে গত বছর যেখানে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ শতাংশ সংকোচন হয়েছে, তখনও কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচটি সহনশীল অর্থনীতির মধ্যে ছিল।’ তিনি আরও বলেন, গত মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে এসডিজি প্রোগ্রেস এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে। কমনওয়েলথের একটি গৌরবময় অতীত আছে। ১৭৬৯ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বাষ্প ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্পবিপ্লবের যাত্রা, যা সত্যিই বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের শিখা জ্বালিয়েছিল। ১৭৭১ সালে সত্যিকারের কারখানা বলতে যা বোঝায়, সেটি প্রথম যুক্তরাজ্যের ডার্বিশায়ারের ক্রমফোর্ড নামক গ্রামে নির্মাণ হয়েছিল। সর্বজনবিদিত একটি সত্য হচ্ছে, সপ্তদশ শতাব্দীতে কমনওয়েলথভুক্ত ভারত উপমহাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল। অর্থমন্ত্রী বলেন, সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্ঞান, প্রযুক্তি ও উত্তমচর্চা শেয়ারের মাধ্যমে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো অধিকতর আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে। ওই সভায় এ্যান্টিগুয়া এ্যান্ড বারবুডার প্রধানমন্ত্রী গ্যাস্টন ব্রাউন সভাপতিত্ব করেন। এতে কমনওয়েলথ সচিবালয় মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ব নেতারা এ সভায় টেকসই এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ঋণ, বৈশ্বিক ন্যূনতম ট্যাক্স চুক্তি এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে এর প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকি মোকাবেলায় ঋণ এবং কমনওয়েলথ ক্লাইমেট ফাইন্যান্স এ্যাক্সেস হাবসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জোর দেন। করোনা মোকাবেলায় সহযোগিতা চান অর্থমন্ত্রী ॥ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর কাছে করোনা মোকাবেলায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, মহামারীজনিত কারণে গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি যেখানে ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, সেখানে কমনওয়েলথভুক্ত অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। বাণিজ্য সম্পর্কিত কমনওয়েলথের বিদ্যমান নীতি এবং কৌশলগুলো কমনওয়েলথ দেশগুলোর জন্য সন্তোষজনক নয়। এ কারণে করোনা মহামারীর প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি মোকাবেলায় কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথ খোঁজার জন্য তিনি তাগিদ দিয়েছেন। জাতিসংঘের বাণিজ্যবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে ৪২ শতাংশ। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কমনওয়েলথ অর্থনীতি ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা মহামারীর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জিডিপির ৬.২৩ শতাংশের সমান ২২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ এর সুফল ভোগ করে চলেছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের আইএমএফের অক্টোবরের রিপোর্ট অনুযায়ী, মহামারীর মধ্যে অল্প কয়েকটি ইতিবাচক অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, মহামারী প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচটি সহনশীল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। বিশ্ব জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব অর্থনীতিতে কমনওয়েলথ দেশগুলোর অবদান মাত্র ১৩ শতাংশ, বৈশ্বিক সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের মাত্র ২০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের ১৪ শতাংশ। আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্যে ৫৪টি দেশের মোট বাণিজ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ। আবার যুক্তরাজ্যের মোট বাণিজ্যের মাত্র ৯.১ শতাংশ রয়েছে কমনওয়েলথ দেশগুলোর। তিনি বলেন, এই পরিসংখ্যানগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বাণিজ্য সম্পর্কিত কমনওয়েলথের বিদ্যমান নীতি এবং কৌশলগুলো কমনওয়েলথ দেশগুলোর জন্য সন্তোষজনক নয়।
×