ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বের আদর্শ

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৪ অক্টোবর ২০২১

ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বের আদর্শ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যত ঝুঁকিই আসুক, তা মোকাবেলা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে, দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে। দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষকেও কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। তাদের নিজেদেরও কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের আদর্শ দেশ। বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর (সিপিপি) ৫০ বছর পূর্তি এবং আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উদযাপন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি সিপিপির নতুন চারটি ইউনিট উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভৌগোলিক অবস্থাই এমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই চলতে হয়। এজন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি দুর্যোগের ঝুঁকি এড়াতে সাধারণ মানুষকেও সচেতন থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবনসহ স্থাপনা করার সময় নিয়ম মেনে করতে হবে। আগুন লাগলে, ভূমিকম্প হলে যাতে উদ্ধার কাজসহ অন্য কাজগুলো করা যায়। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সরকার সব ব্যবস্থা নিয়েছে, অন্য কোন সরকার এগুলোর দিকে নজর দেয়নি। যতটুকু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, এগুলো জাতির পিতাই শিখিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, এখন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা বিশ্বের আদর্শ দেশ। এই মর্যাদা যেন ধরে রাখতে পারি। আমাদের যেন শুনতে না হয়, যত মানুষ মরার কথা ছিল, তত মানুষ মারা যায়নি। আমরা মনে করি, এই দেশ আমাদের। যত ঝুঁকি আসুক, উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে। করোনার মতো যেকোন দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই আপনি ঘর, বাড়ি, অফিস, আদালত বা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- যাই করেন না কেন সেটা করার সময় আপনাকে আগে মাথায় রাখতে হবে আগুন লাগতে পারে, ঝড় আসতে পারে, বন্যা আসতে পারে, বা যে কোন ক্ষেত্রে আপনাকে ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে সেই বিল্ডিং কোড মেনেই সব তৈরি করতে হবে। সেদিকেও সব রকম ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের তরফ থেকে যা যা করা দরকার, তা করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। কাজেই আজকে এটুকু বলব, যতটুকু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, যা জাতির পিতাই আমাদের শিখিয়েছিলেন, সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। তার ফলে বাংলাদেশ আজকে ঝুঁকি মোকাবেলায় একটা আদর্শ দেশ হিসেবে কিন্তু প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমাদের এই সম্মানটা যেন বজায় থাকে ভবিষ্যতে, সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা দুর্যোগ মোকাবেলায় সাবেক বিএনপি সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করেন। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের পর তখনকার প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তত মানুষ মরে নাই, যত মানুষ মরার কথা ছিল’- এই কথা যেন আর জীবনে কখনও শুনতে না হয়। তার জন্য সবাইকেই সচেতন থাকতে হবে, মানুষকে সচেতন করতে হবে। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের পাশে আছে। যেকোন দুর্যোগে আর কেউ না যাক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সব সময় পাশে থাকে। এবার করোনাভাইরাসের সময়ও আপনারা দেখেছেন যে আমাদের সেই ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগসহ প্রত্যেকটা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর কাউকে আমরা সামনে এগিয়ে আসতে দেখি নাই। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যত দুর্যোগই আসুক জাতির পিতা তার ঐতিহাসিক ভাষণে বলে গিয়েছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালীকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এটাই হচ্ছে আমাদের কথা। কাজেই সবকিছু মোকাবেলা করেও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাব। এই লক্ষ্যটা সামনে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। কাজেই আজ এতটুকুই বলব যে, যতটুকু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি তা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই নিয়েছি। ফলে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বে ঝুঁকি মোকাবেলায় একটি আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশের মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা কথা বলব, আমাদের দেশের মানুষকেই সতর্ক থাকতে হবে। তাদের নিজেরও কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। যখনই আপনি ঘর-বাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাই করেন না কেন, সেটা করার সময় আপনাকে আগে মাথায় রাখতে হবে আগুন লাগতে পারে, ঝড় আসতে পারে, বন্যা আসতে পারে। যে কোন ক্ষেত্রে আপনাকে ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, বিল্ডিং কোড মেনে সব করতে হবে। আর আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যা করার করে যাচ্ছি। ডেল্টা প্লানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে বদ্বীপ, আমরা ২১০০ সালের ডেল্টা প্লান করেছি। ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আমরা শুরু করেছি। এ ক্ষেত্রে নদী ভাঙ্গন রোধ এবং পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা; কারণ বন্যা আসবে, আর বন্যা আমাদের পলি দেয়, জমি উর্বর করে। কাজেই বন্যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা বা বন্যার সঙ্গ বসবাস করার অভ্যাস আমাদের করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বন্যার সঙ্গে বসবাস করবার মতো মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সম্পদ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেভাবে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে। প্রতিটি এলাকায় জলাধার থাকতে হবে, যেন বন্যার সময় পানির ধারণক্ষমতা বাড়ে বা বৃষ্টির পানি আমরা ধরে রাখতে পারি; যা আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন, ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন, জীবন-জীবিকার জন্য প্রয়োজন সেদিকে মাথায় রেখে আমাদের এই ব্যবস্থাটা নেয়া দরকার। পানির প্রবাহ ও ধারণক্ষমতা বাড়াতে নদী খননের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ২০২২ সালের মধ্যে ৫১০ কিলোমিটার নদীর ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। গ্রীষ্মকালে সেচের পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার নির্মাণ, ৪ হাজার ৮৮৬ কিলোমিটার খাল খনন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, সংস্কারসহ নানাবিদ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করতে ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র এবং ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে জানান প্রধানমন্ত্রী। দুর্যোগ মোকাবেলায় বিগত সময়ে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। বিভিন্ন দুর্যোগে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের জনগণের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে আছে। করোনার মতো যে কোন দুর্যোগে মানুষের পাশে থাকবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন। গণভবন থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সিপিপির চারটি ইউনিট উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন ও কক্সবাজারের মুক্তিযোদ্ধা মাঠ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবীরা গণভবনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন। পাটশিল্পে রুশ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে বাংলাদেশ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বাংলাদেশ পাট শিল্পে রুশ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভিকেন্তিয়েভিচ ম্যান্টিটস্কি সাক্ষাত করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান। খবর বাসসর। প্রেস সচিব আরও জানান, উভয়ে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি কৃষি খাতের সুযোগসমূহ অন্বেষণে সম্মত হন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধকালে যে দেশ আমাদের দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে তারা আমাদের হৃদয়ের বিশেষ জায়গায় রয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বাংলাদেশ সফরে এলে আমরা খুশি হব। রুশ রাষ্ট্রদূত ম্যান্টিটস্কি বলেন, তিনি ২০ বছর আগে ঢাকা এসেছিলেন। কিন্তু দেশের বর্তমান অগ্রগতি ও উন্নয়ন ‘ব্যাপক ও উল্লেখযোগ্য’। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
×