ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মমতাজ লতিফ

নির্বাচনকে বিতর্কিত করাই বিএনপির লক্ষ্য

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ১৪ অক্টোবর ২০২১

নির্বাচনকে বিতর্কিত করাই বিএনপির লক্ষ্য

প্রায়ই দেখা যায় শিক্ষিত সমাজ আশপাশের পরিবেশে, সমাজে নানা সমস্যা ঘটতে দেখেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় মূল সমস্যাকে বিবেচনা না করে সমস্যার আশপাশের বিষয়কে মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। এর ফলে দেখা দেয় নানা রকম বিপত্তি, বিতর্ক, অযৌক্তিক আলাপ-আলোচনা। এমনই একটি বিষয়- নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে স্বচ্ছতা বা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। সুতরাং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আগের প্রত্যেক নির্বাচনের মতই এবারও সিভিল সোসাইটির কিছু ব্যক্তিকে বিএনপির বিগত দুই নির্বাচনের সময় থেকে বারংবার বলা সমালোচনা বা বিতর্কটিকেই গ্রহণ করতে দেখা গেল। বিএনপি নেতাদের প্রিয় এবং মাসে শতবার উচ্চারিত যে বক্তব্যগুলো বিগত বছর দশেক যাবত শোনা যাচ্ছে- তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে- ‘নির্বাচনে ভোটার ভোট দেয়নি’, আগের রাতে ভোট বাক্স ভরিয়ে দেয়া হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের পক্ষে ভোটবাক্স ভর্তি করেছে, ‘ভোটারহীন নির্বাচন হয়েছে’, ‘নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়’, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না’, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না’।-ইত্যাদি। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির উপরোক্ত বক্তব্যগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি? এ বিষয়ে নিশ্চয় সুশীল সমাজের কেউ দ্বিমত করবে না যে, বিএনপি ২০০১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তারেক রহমান কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে, যার প্রধান পরামর্শদাতা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং লন্ডনে বাস করা জামায়াতের কিছু নেতা। এখন কথা হচ্ছে, তারেক এবং আইএসআই ও জামায়াতের বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারায় বিএনপিকে ফিরিয়ে আনার কোন ইচ্ছা বা সদিচ্ছা ২০০১ এ বা তার আগেও দেখা যায়নি। এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, আইএসআই ও জামায়াতের দুই ক্রীড়নক নেতা- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান অনেক দুর্নীতি, ফৌজদারি অপরাধের কয়েকটিতে দ-িত আসামি, অপর কয়েকটিতে অভিযুক্ত আসামি এবং দ-িত। সুতরাং নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ তারেকের কাছে অগ্রহণযোগ্যই হবে। এর সরল অর্থ একটি। শেখ হাসিনার প্রশ্নে সেটি আছে। তিনি বলেছেন- বিএনপির নেতা-নেত্রী কে? বিএনপির দুই নেতা- নেত্রী তো দ-িত আসামি। তাহলে তাদের দলকে নেতৃত্ব কে, কারা দিচ্ছে? তাদের পক্ষে তো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সম্ভব নয়। জনগণ ভুলে যায়নি নিশ্চয়ই, ’৯৬-এর নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীর কয়েকটি সেনানিবাসে ক্যু সঙ্ঘটিত হবার আলামত দেখা দেয়ায় কয়েকটি সেনানিবাস থেকে সেনা সদস্যের দল বের হয়ে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছিল। সে সময় সেনাপ্রধান জেনারেল নূরুদ্দিন খালেদা জিয়ার চাপ, নানা কূটনৈতিক চাপ এড়িয়ে শাহাবুদ্দীন সাহেবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সঙ্ঘটিত করতে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। সেই ’৯৬-এর নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ’৭৫-এর পর দীর্ঘ একুশ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। খালেদা-তারেক অবশ্যই সেই শক্তির কথা ভাবছে! অথবা, জামায়াত-হেফাজতের লগি-বৈঠার জঙ্গী মিছিল, তা-বে ছাত্রলীগের কর্মী হত্যার কথাও ভাবছে কিনা, জানি না। জনগণ যদি পেছনের, ’৭৫-এর বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকা-ের অপঘটনাগুলোর পরবর্তী সময়ের নির্বাচনগুলোর প্রতি নজর দেয়, যেগুলো জিয়া ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল, তাহলে তারা একটি বৈশিষ্ট্য দেখতে পাবে। সেটি হচ্ছে- - জিয়া ও খালেদা জিয়ার কখনই সংসদীয় গণতন্ত্র পছন্দ ছিল না। তারা প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্মে ডিক্টেটরশিপ অনুশীলন করেছে। - এদের সরকারের আমলে যে কটি নির্বাচন নামে পাতানো খেলা হয়েছে, তার হাস্যকর ফল স্মরণে এলে নিজের ভোট দেয়ার একগুঁয়েমির কথা মনে পরে হাসি পায়। জিয়ার ‘ইয়েস-নো’- ভোট এর দিন ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাদের খাবার প্রস্তুত করে নিজে সামান্য নাস্তা খেয়ে স্বামীকে নিয়ে পাড়ার উদয়ন স্কুলের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ! স্কুল ঘর, মেইন গেট বন্ধ, জনহীন! বিষয় কি? দুই একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ঘোরাঘুরি করছিলেন। আমার স্বামী ঘরে ফিরতে ইচ্ছুক। আমি তো ভোটকেন্দ্র খুঁজে বের করে একটা ‘না’ সিল না দিয়ে ফিরতে পারি না। সুতরাং বহুকষ্টে জানলাম, এটাতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সুতরাং এখানেই ‘না’ ভোট পড়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই ভোটকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে বহুদূরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পার হয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে। আমার স্বামী এত বিশাল মাঠ হেঁটে পার হয়ে একটা ‘না’ ভোট দিতে যেতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু আমি ঐ মাঠের দিকে রওনা হয়েছি। দেবই ভোট, যত কষ্টই হোক না কেন। রোদে হেঁটে ঘর্মাক্ত ক্লান্ত আমাদের দু’চারজনকে দেখে ব্যালট বাক্সে ‘ইয়েস’ সিলদানরত প্রৌঢ়, হয়ত পিয়ন, বিস্মিত হয়ে বলল, ‘ভোট দেবেন?’ আমি বল্লাম ‘তা তো দেবই, ব্যালট পেপার দ্যান।’ বিষণ্ণ বদনে লোকটি ব্যালট পেপার এগিয়ে দিয়ে স্বগতোক্তির মতো বলল, ‘কি হবে ভোট দিয়ে।’ তখনও পুরো বিষয়টি বুঝে উঠিনি, ভাল করে ‘না’ ভোটের সিল মেরে বাক্সে ফেললাম। যে যাই বলুক ভোট দিয়ে কিন্তু একটা সান্ত¡না হয়, তবু তো আমরা কজন ‘না’ ভোট দিয়েছি! কষ্ট করে ফিরে গেলাম। পরে এই ভোট ও নির্বাচন খেলার কথা জেনেছি। নির্বাচনী খেলার কিন্তু সেই শুরু। এরপর তো রাজনীতিকেই বন্দুক, পেশি, অর্থের খেলায় পরিণত করে ‘ডিফিকাল্ট’ করার জিয়ার খেলা দেখেছি ক্যাম্পাসে! আর্টস বিল্ডিং-এ গোলাগুলি শুরু হলেই মায়ের দলের সঙ্গে ছুটতে ছুটতে মেয়েদের স্কুল থেকে আনতে গিয়েছি বহুবার! তখন আমরা একসঙ্গে উচ্চারণ শুনতাম গোলাগুলিরতদের নাম- অভি-নিরু-বাবলু! অথচ তারা ছিল মেধাবী তিন তরুণ! রাজনীতিতে এভাবেই চোখের সামনে শিক্ষা, মেধার স্থলে গু-ামি, খুনোখুনি, বন্দুক, কাটা রাইফেল আর বিপুল অর্থ ভোটের-নির্বাচনকে রাজনীতির মাঠ থেকে হটিয়ে দিতে দেখলাম! আজ ভাবলে বিস্মিত হই। এরপর শুরু হলো, সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের, অধিকাংশই মুক্তিযোদ্ধা, তাদের গুম হওয়া ও ফাঁসি হওয়ার এক ভয়ঙ্কর খেলা জিয়ার দ্বারা। নিরপরাধ জীবন কেড়ে নিয়ে গুম করার নির্মম হত্যাকা-েরও সূচনা হয় জিয়ার দ্বারা। রাঘঢাক না করেই জিয়া বন্দী ও পলাতক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে নিজের যুদ্ধাপরাধী সমর্থকও অবস্থান প্রকাশ করেছে! তেমনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার বন্ধ রাখার আইন করেও সে তার মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুবিরোধী অবস্থান সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে। এবার আসা যাক খালেদার আমলের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অগণতান্ত্রিক ঘটনার বিষয়ে। সে সময় বিচারপতি আবদুর রউফ, নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান পর্যন্ত বলেছেন, মাগুরায় উপ-নির্বাচনকে গুঁড়া গুঁড়া করা হয়েছে! এরপর ২০০১-এর অক্টোবর নির্বাচনে তো নির্বাচন শব্দটিই সীমাহীন তা-ব, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ দ্বারা নির্বাসিত হয়েছিল! একেবারে ’৭১-এর খানসেনাদের পাড়ায় পাড়ায় হিন্দু ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর চালানো তা-বের হুবহু পুনরাবৃত্তি জাতি দেখল ২০০১-এ যখন তারেক রাজনীতি শুরু করেছিল! ’৭১-এর সেই বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি ২০০১-এ প্রমাণ করে খালেদা-তারেক, তাদের দোসর হামলাকারীরা ও যুদ্ধাপরাধীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বিশ্বাসী! নতুবা, ’৭১-এর খানসেনা ও বাঙালী যুদ্ধাপরাধীদের অনুসরণে তারাও কেন ঐ একই হিন্দু এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর একই রকম ভয়াবহ হামলা-তা-ব-মানবতাবিরোধী অপরাধ করল? সুতরাং নির্বাচন খালেদা-তারেক ও জামায়াতের হাতে পড়ে হয়ে গেল ভয়-ভীতি, ধর্ষণ, লুটপাট, হত্যা, নির্যাতনের মাধ্যমে ভোটারবিহীন, ক্যাডার দিয়ে ব্যালট বাক্স ভরার প্রহসন মাত্র। গায়ের জোরে খালেদা জিয়া বেআইনীভাবে যেমন পুতুল এমএ আজিজকে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান করেছিল, তেমনি দলীয় প্রেসিডেন্ট ইয়াজদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে গ্রাস করে প্রহসনের নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে উঠে পড়ে লেগেছিল! সেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে চেয়ে সক্ষম হয়নি। সে অবস্থা থেকে জাতিকে নতুন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এম. ইউ আহমদ রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন। নতুন নির্বাচন কমিশন প্রধান ড. শামসুল হক একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করলেন ২০০৮ এর ডিসেম্বরে। এর আগে, ২০০৪-এ খালেদা-নিজামী-তারেক তাদের চিরশত্রু-আওয়ামী লীগ নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সহকর্মীসহ হত্যার পরিকল্পনা করে বাংলাদেশে পাকিস্তানী ধারার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে ২১ আগস্ট ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলা চালায়! সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়াকে চার স্বজন ও সহকর্মীসহ বোমা হামলা করে হত্যা করে। তাছাড়াও আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ বহু গ্রেনেড, বোমা হামলা করা হয়েছে ঐ সময় এবং ’৯৮, ৯৯, ২০০০ সালে! ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, সিপিবির সভায়, উদীচীর অনুষ্ঠানে, রাজনীতিক কাজী আরেফসহ বহু গায়ক, বাদক, শ্রোতা, প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক, সংস্কৃতিসেবীরা নিহত হয়েছেন। তারেকের প্রত্যক্ষ মদদে, কৌশলে, অর্থে বহু প্রগতিবিরোধী জঙ্গী-জেহাদীর জন্ম দেয়া হয়েছিল, যারা রাজশাহী অঞ্চলে প্রকাশ্য দিবালোকে নিরীহ মানুষের বিচার করে হত্যা করেছে। বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনকালে খালেদা জিয়ার বিএনপি রাজপথে ট্রাক, বাস, গাড়ি, সিএনজিসহ সবরকম যানে, এমনকি ট্রেনে জলযানেও পেট্রোল বোমাবাজি করে নিরীহ যাত্রী-নারী-পুরুষ-কিশোর হত্যায় মেতে উঠেছিল নির্বাচন করতে দেয়া হবে না- এই লক্ষ্যে! সেই সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণাও দিয়েছিল! সেই থেকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অবস্থান গ্রহণ করেছে। তখন থেকে বিএনপি, খলেদা-তারেক যারা নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনে কখনও বিশ্বাসী ছিল না, তারা নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করল। বারবার বলতে লাগল- ‘নির্বাচনে ভোট হয় না, সরকারী দল ভোটবাক্স পূরণ করে, সুতরাং তারা বর্তমান সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বা সার্চ কমিটির দ্বারা মনোনীত নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।’ কথা হচ্ছে, যাদের অতীত ইতিহাস অপরাজনীতি, দুর্নীতি, ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধপন্থী সম্প্রদায়, রাজনীতিক হত্যার কলঙ্কে কলঙ্কিত, তাদেরকে জনগণ কি দেখে ভোট দেবে? এটা ওদেরকেও ভাবাচ্ছে নিশ্চয়ই। সেজন্যই বলছি আসল সমস্যা হলো, নির্বাচন নয়, বরং বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ভীতি প্রদর্শন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হবেই যখন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে না, প্রতিযোগিতা থাকবে না শক্ত বিরোধী প্রার্থী থাকলে, সব দলের পোলিং এজেন্ট উপস্থিত থাকলে, নির্বাচনে ফল বদল করা সম্ভব হয় না। খালি ব্যালট বাক্স তো পোলিং এজেন্ট শুরুতেই দেখতে পায়। তাই বলতে চাই, সমস্যা হলো বিএনপির প্রচার-প্রচারণা না করে প্রার্থী দিলেও শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেয়া অর্থাৎ নির্বাচনে অংশ না নেয়া। এটাও নির্বাচন বানচালের একটা অসৎ কৌশল, যা অবশ্যই তারেকের ফাঁকা মস্তিষ্ক উদ্ভূত। ওর পিতা ছয় বছরে যত অপরাধমূলক অপকৌশল উদ্ভাবন করেছে, বাস্তবায়ন করেছে, তারেক তার যোগ্য উত্তরাধিকারী প্রমাণ করেছে! ছলে, বলে, অপকৌশলে ভোট ডাকাতি করে নির্বাচনে বিজয়ী হবার সুযোগ যতক্ষণ না পাবে, ততক্ষণ তারেক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের রীতি মেনে নেবে না, এটাই হলো সত্য এবং বাস্তবতা। সবশেষে বলব, গোয়েবলসীয় নীতিটি অক্ষরে অক্ষরে মানে তারেক। সেই লক্ষ্যে তার নির্দেশে গত পাঁচ বছর যাবত নির্বাচন কমিশনকে দোষ দেয়া, ভোটার কম আসাকে নির্বাচন কমিশনের দোষ গণ্য করা, ব্যালট বাক্স আগেই ভরে দেয়া, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ না হওয়ার ধুয়া তুলতে তুলতে এখন সুশীল সমাজের একটি দলও বিএনপি বা তারেকের বারবার বলা কথায় বিশ্বাস করে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করছে। সত্য হলো, বিএনপি নির্বাচন করতে চায় না। তারেক-খালেদা নির্বাচনে বিশ্বাসী নয়, ওরা ক্ষমতা দখলে বিশ্বাসী। যদি ফেরেশতা দিয়েও নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়, তাহলেও ফল দখলের সুযোগ না থাকলে তারেকের নির্দেশে চলা বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। যেভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক না কেন, বিএনপিপন্থী ব্যক্তিদেরও সদস্য করা হোক না কেন, যে নির্বাচনে ফল দখলের সুযোগ থাকবে না বা সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে রানী ও রাজপুত্রকে সিংহাসন দেবে না, ততক্ষণ ওরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, এটা বলে দেয়া যায়। বিএনপির নেতা-নেত্রীদের এসব ব্যাকগ্রাউন্ড ভুলে সুশীল সমাজ ভাবছে, তাইতো, নির্বাচন কমিশন গঠন আইন করলে বোধ হয় সবচেয়ে ভাল। ফেরেশতাদের মতো ব্যক্তি দ্বারা নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে! তা হবে না। আমলা, শিক্ষক, আইনজীবী, পেশাজীবীদের দ্বারাই নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটি দিয়ে গঠিত হবে। ওরাও তাদের মতোই দোষে-গুণে মানুষ। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন দোষে-গুণে মেলানো মানুষরাই সম্পাদন করে। চেক এ্যান্ড ব্যালেন্স তো আছেই। সেটা নিশ্চিত করুন। বিএনপিকে শক্ত, গু-া নয়, এমন পোলিং এজেন্ট দিতে বলুন, দক্ষ প্রার্থীদের ভাল প্রচার চালাতে বলুন এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে বলুন। কোন কেন্দ্রে কখনও কোন কমিশনার উপস্থিত থাকেন না। আসল কথা হলো, গণতন্ত্রে আস্থা প্রদর্শন করুক তারা এবং নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র না করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। ফল যাই হোক, তা গ্রহণ করুক, প্রার্থীরা তা-ব, গোলাগুলি বাদ দিলে, অবস্থার ক্রমে পরিবর্তন হতে পারে। তবে সুশীল সমাজকে দেখতে হবে, দল যেটাই হোক, যুদ্ধাপরাধী দলকে, যুদ্ধাপরাধীদের আদর্শে বিশ্বাসীদের নির্বাচনে নিষিদ্ধ রাখতে হবে। এটি যেন, ভুলে না যান। কোন দেশেই তাদের দেশবিরোধীদের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। সে রীতি বাংলাদেশেও বলবত করতে হবে। লেখক : শিক্ষাবি
×