ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিচাল

প্রকাশিত: ২০:৫৭, ১৪ অক্টোবর ২০২১

পুষ্টিচাল

দেশের গরিব অসহায় হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টির ঘাটতির বিষয়টি সুবিদিত। বাঙালীর প্রধান খাদ্য ভাত প্রধানত শ্বেতসার সমৃদ্ধ। সেই অনুপাতে দৈনন্দিন আমিষ, স্নেহ পদার্থ, ভিটামিন ও মিনারেলস তাকে আহরণ করতে হয় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ভোজ্যতেল, শাক-সবজি ইত্যাদি থেকে, যা প্রত্যহ মেলে না অনেকের। তিন বেলা পর্যাপ্ত খাবারও জোটে না হতদরিদ্রদের। ফলে দৈনন্দিন পর্যাপ্ত ক্যালোবি গ্রহণ ও প্রাপ্তিতে ঘাটতি থেকে যায় অনেকের, বিশেষ করে নারী ও শিশুর। প্রধানত তাদের কথা চিন্তা করে খাদ্যবান্ধব সরকার এবার পুষ্টি চাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা আপাতত দেয়া হবে গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষদের। পরে তা সম্প্রসারিত করা হবে সারাদেশে ২০২৫ সালের মধ্যে। এর জন্য ‘পুষ্টি চাল উৎপাদন বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নির্দেশিকা- ২০২১’ প্রণয়ন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এই চালে মেশানো থাকবে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি-১, ভিটামিন-১২, ভিটামিন-৯ (ফলিক এ্যাসিড), আয়রন ও জিঙ্ক। এই ৬টি ভিটামিন দৈনন্দিন ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করবে একজন বয়স্ক মানুষের। হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী, ভিজিডি কর্মসূচী ও স্কুল মিল কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত হবে পুষ্টিচাল। তাতে সহজে পূরণ হতে পারে দৈনিক পুষ্টির চাহিদা। গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার ইতোমধ্যে চালু করেছে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’, যা শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে। এতে দেশে হতদরিদ্রদের মধ্যে মাত্র ১০ টাকা কেজি ধরে চাল বিতরণ তথা বিক্রি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মোট ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার স্বল্পমূল্যে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন। এই কার্যক্রম চলবে টানা তিন মাস। উল্লেখ্য, মাত্র ১০ টাকা কেজি ধরে চাল বিতরণ বর্তমান দরিদ্রবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। এর পাশাপাশি দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকায় ৭৩৭ ডিলারের মাধ্যমে ওএমএস কর্মসূচীর আওতায় প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা এবং প্রতিকেজি আটা ১৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে, যা থেকে প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। চালের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে। বেসরকারী উদ্যোগেও শুরু হয়েছে চাল আমদানি। সরকারের খাদ্য মজুদও সন্তোষজনক। আমদানিকৃত চাল এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রিতে খোলাবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সহায়তা করেছে কৃষককে, যাতে তারা লাভবান হতে পারেন। ধান-চাল বেচাকেনার মাঠ পর্যায়ের খবর হলো কৃষক এবার খুশি। জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে যথেষ্ট ভর্তুকি, প্রণোদনা ও সহায়ক কর্মসূচী রাখা হয়েছে, যাতে কৃষকসহ গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার, ফুলফল-সবজি উৎপাদক- প্রায় সবাই উপকৃত হতে পারেন কমবেশি। করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি ছাড়াও সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। ন্যায্যমূল্যে চাল বিতরণের জন্য বর্তমানের ৫০ লাখ ওএমএসের কার্ডের অতিরিক্ত আরও ৫০ লাখ কার্ড দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি কার্ড থেকে সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় ৫ কোটি মানুষ। পুষ্টিচাল বিতরণের মাধ্যমে দৈনন্দিন পুষ্টির ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি চালের দাম সহনীয় হয়ে উঠবে বলেই প্রত্যাশা।
×