ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়া এখন আগের চেয়ে বেশ ভাল

প্রকাশিত: ২৩:১০, ৯ অক্টোবর ২০২১

খালেদা জিয়া এখন আগের চেয়ে বেশ ভাল

শরীফুল ইসলাম ॥ ভালই কাটছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সময়। শারীরিক পুরনো কিছু সমস্যা থাকলেও গুলশানের বাসায় অবস্থান করে স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের সার্বিক তত্ত¡াবধানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি আগের চেয়ে কিছুটা ভাল আছেন। তবে শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সুবিধাজনক সময়ে তিনি হাসপাতালে যেতে পারেন। সূত্র জানায়, বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি আপাতত বাদ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তাই নিজ বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসকদের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করছেন। ছোটখাট কিছু পরীক্ষা বাসায় থাকা যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চিকিৎসক ও ব্যক্তিগত নার্সই করেন। আর তিনি কখন কি খাবেন সে বিষয়টা দেখেন তাঁর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত গৃহকর্মী ফাতেমা। বাসায় রান্না করা খাবারের পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ও মেঝ বোন সেলিমা ইসলামের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার পছন্দের খাবার পাঠানো হয়। তাঁর খাবার রুচিও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় আসার পর প্রথম দিকে খালেদা জিয়ার খাওয়ার রুচি ছিল না। কিন্তু এখন খাওয়ার রুচি আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশে অবস্থান করা স্বজনদের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে খালেদা জিয়ার। স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত কুশল বিনিময় করতে পেরে তিনি স্বস্তিতেই আছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক পুরনো কিছু সমস্যা থাকায় আমরা তাঁকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার সে সুযোগ দেয়নি। তবে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই খালেদা জিয়া আপাতত ভালই আছেন। উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর গত বছর ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় অবস্থান করেন। পরে তাঁর মুক্তির মেয়াদ ৬ মাস করে আরও ৩ দফা বৃদ্ধি করা হয়। গৃহকর্মী ফাতেমাসহ গুলশানের বাসা ফিরোজায় ৮ জন করোনাক্রান্ত হওয়ায় এ বছর ১০ এপ্রিল খালেদা জিয়ারও করোনা পরীক্ষা করা হয়। ১১ এপ্রিল রিপোর্ট প্রকাশিত হয় তিনি করেনাভাইরাসে আক্রান্ত। এর পর থেকে অধ্যাপক ডাঃ এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত ৪ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত¡াবধানে বাসায় থেকেই খালেদা জিয়া চিকিৎসা নেন। ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য খালেদা জিয়াকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করানো হয়। ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভাল না আসায় ওইদিনই তাঁকে ভর্তি করা হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার হঠাৎ শ্বাস কষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ৩ মে তাঁকে ওই হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ৩ জুন তাঁকে সিসিইউ থেকে কেবিনে নেয়া হয়। ৫৪ দিন এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর ১৯ জুন গুলশানের বাসায় ফিরেন খালেদা জিয়া। তবে বাসায় ফিরলেও ব্যক্তিগত চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যরা নিয়মিত বাসায় গিয়ে তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যান। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার এক মাস পর ১৯ জুলাই মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে করোনার প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। মডার্নার টিকা নেয়ার পর জ্বরে আক্রান্ত হলেও ২দিন পর তা ভাল হয়ে যায়। ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ করোনার টিকা গ্রহণ করেন। তবে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর তাঁর কোন শারীরিক সমস্যা হয়নি। নতুন করে আর মুক্তির মেয়াদ না বাড়লেও আগামী বছর ২৪ মার্চ পর্যন্ত খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় অবস্থান করতে পারবেন। তবে এর পরও যাতে মেয়াদ বাড়ানো যায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই সাময়িক মুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তাঁকে যে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়া হয় সেগুলো হচ্ছে, বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে এবং বিদেশে যাওয়া যাবে না। এ দুই শর্ত মানা ছাড়াও খালেদা জিয়া দলীয় কোন কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন না এবং ঘনিষ্ঠ স্বজন ছাড়া কাউকে বাসায় আসতে দিচ্ছেন না। বিগত দেড় বছরেরও বেশি সময়ে ঘনিষ্ঠ ক’জন আত্মীয় ও বিএনপির ক’জন সিনিয়র নেতা বাসায় প্রবেশ করে তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করার সুযোগ পান। তবে এ সময় তিনি দলীয় রাজনীতি নিয়ে কোন কথা বলেননি। দলীয় রাজনীতি থেকে তিনি সম্পূর্ণ বিরত রয়েছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদিনই লন্ডনপ্রবাসী ছেলে তারেক রহমান, ছেলের বউ ডাঃ জোবাইদা রহমান, তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, তার দুই মেয়ে জাসিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান কথা বলেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তাই ৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পুরনো বিভিন্ন রোগের কারণে অসুস্থ থাকলেও অনেকাংশে ভাল আছেন। দীর্ঘদিন ধরে রিউমেটিক আর্থ্রারাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। চলাফেরায় অন্যের সাহায্য নিতে হয়। তাঁর শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে যে ব্যথা তাও পুরোপুরি কমেনি। তাঁর হার্টের সমস্যাও রয়ে গেছে। রয়েছে চোখের সমস্যাও। তবে এসব সমস্যা আগের চেয়ে এখন কিছুটা কমেছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি কারাবন্দী হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এক পর্যায়ে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজন সেলে নেয়া হয়। দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর বয়স ও মানবিক বিবেচনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারের কাছে আবেদন করে তাঁর স্বজনরা। এর পর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার, বোন সেলিমা ইসলাম ও তার স্বামী রফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। এ পরিস্থিতিতে গত বছর ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া।
×