ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুমেল খান

ক্রীড়া সংগঠক মোহনের কথকতা

প্রকাশিত: ০০:২২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ক্রীড়া সংগঠক মোহনের কথকতা

কে শুনিবে মুগ্ধভাবে/পাশে বসে মোর মোহন বাঁশি?/কে বলিবে মধুর স্বরে/আমি তোমায় ভালবাসি? ... বাঁশি ছয় প্রকার। তারই একটি মোহন বাঁশি। বাঁশির সুরে মন ভালো হয় না, এমন লোক খুব কমই আছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মোহন নামের একজন আছেন, যিনি তার কর্মপরিধির মাধ্যমে সবার মন জয় করতে প্রয়াসী। তিনি ক্রীড়াপাগল, তিনি ক্রীড়া সংগঠক। তবে পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে কেন যেন বড্ড অনীহা তার। খেলোয়াড় সৃষ্টি, ক্রীড়াবিদদের কল্যাণ, নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রতি অদম্য আকাক্সক্ষা তার। যার কথা বলছি, তিনি মুশফিকুর রহমান মোহন। অনেক পরিচয় তার। ক্রিকেট, ফুটবল, দাবা, স্কোয়াশ এবং ব্রিজ সংগঠক। ব্যবসায়ী এবং শৌখিন কবিও বটে। করেন রাজনীতিও। নির্লোভ এই সংগঠকের ক্ষমতার প্রতি মোহ ছিল না কোনকালেই। যতগুলো ফেডারেশনে কাজ করেছেন, কোনটাতেই তার বিরুদ্ধে ছিল না কোন তহবিল তছরূপের অভিযোগ। লোভ-লালসাকে সবসময়ই জয় করে কাজ করার চেষ্টা করেছেন, তার সেই চেষ্টা এখনও চলমান। অনেকেই জানেন না, বাংলাদেশের ফ্রাঞ্চাইঝিভিত্তিক পেশাদার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লীগ বিপিএল-এর ¯্রষ্টা তিনি। ছিলেন বিপিএল-এর দল ‘দুরন্ত রাজশাহীর’ চেয়ারম্যান। এছাড়া শেখ জামাল ধানমÐি ক্রিকেট ক্লাবের স্পোর্টস ডিরেক্টর ও ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্কোয়াশ র‌্যাকেট ফেডারেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের ক্রীড়া সম্পাদক, বাংলাদেশ গেম অন স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ফাউন্ডার এ্যান্ড ভাইস-চেয়ারম্যান, স্পোর্টস গিয়ার লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সদস্য ও বাংলাদেশ ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে নিজের কর্মপরিধির বিস্তার ঘটিয়েছেন। মোহন সবচেয়ে বেশি আলোচিত ফ্রাঞ্চাইঝিভিত্তিক পেশাদার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লীগ বিপিএল-এর ¯্রষ্টা হিসেবে। তখন বহুলোক নানা কথা বললেও এক দশক পর এসে দেখা যাচ্ছে তার বিপিএল ক্রিকেট শুরু করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। অনেক নবীন ও প্রতিভাবান ক্রিকেটারের উত্থানের নেপথ্য রূপকার মোহন। যেমন ন্যাটা স্পিনার তাইজুল ইসলামকে বলা যায় মোহনই আবিষ্কার করেছেন। এছাড়া ইংল্যান্ডের খ্যাতনামা মুসলিম ক্রিকেটার মঈন আলীকে দুরন্ত রাজশাহী দলে নিয়ে এসেছিলেন মোহন বিপিএল খেলাতে। এসব কারণেই অনেক ক্রীড়াবোদ্ধা মোহনকে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে মূল্যায়িত করার পক্ষে। ফুটবলেও আছে মোহনের অনেক অবদান। একজন খেলোয়াড় খেলা ছেড়ে দিলে কিংবা ইনজুরিতে পড়লে তার আর কোন মূল্য থাকে না। ফলে খেলা ছাড়ার পর তাদের আর্থিক ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়। এ কথা উপলব্ধি করেই মোহন তার নিজ উদ্যোগে মামুনুল ইসলাম, জাহিদ হাসান এমিলি, রায়হান হাসানসহ মোট ১৩ ফুটবলারকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে স্থায়ীভাবে চাকরি করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আট বছর ধরে ওই ফুটবলাররা চাকরিরত। কিন্তু এ নিয়ে কখনও বড়াই করেননি, আত্মপ্রচারও করেননি প্রচারবিমুখ মোহন। স্কোয়াশের প্রসঙ্গে আসা যাক। এই খেলাটিতে মোহন অবশ্য তেমন কিছু করতে পারেননি। তবে ছয় বছর স্কোয়াশ ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে সুষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করেন। দাবার কথা না বললেই নয়। একসময় বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনায় ভরা ছিল দাবা ফেডারেশন। দেশীয় টুর্নামেন্টে দেশের গ্র্যান্ডমাস্টারদের ৩/৪ জনই অংশ নিতেন না। সেই দুরবস্থা থেকে দাবাকে সুসংগঠিত করেছেন মোহন। এবং সবকিছু ঠিক করে দেয়ার পরই অপ্রত্যাশিতভাবে নিজেকে সরিয়ে নেন। ব্রিজের কথা না বললে মোহন-অধ্যায় অসমাপ্ত থেকে যাবে। ব্রিজ মানেই জুয়া ... এ ধারণাকে ভাঙার অন্তহীন প্রচেষ্টায় অনেকটাই সফল মোহন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচের মধ্যে শক্তিশালী ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে ২০০+ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ব্রিজ খেলুড়ে দেশ। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ব্রিজে দু’বার অংশও নিয়েছে বাংলাদেশ মোহনের সাংগঠনিক দক্ষতায়। কিংবদন্তি ফুটবলার এনায়েতুর রহমান অভিমান করে দেশ ছেড়ে প্রবাসী হয়েছেন বহু বছর হলো। আর কেউ না পারলেও মোহনই তাকে আবার দেশে নিয়ে আসছেন অক্টোবরে, যা এদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঝে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতি হয় দু’ভাবে। সরকারী ও বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতায়। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই আছেন, যারা খেলাধুলাকে ভালবেসে ক্রীড়া সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নের জন্য নিঃস্বার্থ ও নিরলসভাবে কাজ করে যান। মুশফিকুর রহমান মোহন তাঁদেরই একজন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী তিনি। সবকিছু ছাপিয়ে ক্রীড়া সংগঠক পরিচয়কেই যিনি বড় করে দেখতে ভালবাসেন, সেই মোহন বর্তমানে অসুস্থ। তবে এটাকে তিনি বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে নিরলসভাবে ক্রীড়ার উন্নয়নে কাজ করে যেতে বদ্ধপরিকর। একসময় ঠিকই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে মোহন সঠিকভাবে মূল্যায়িত হবেন, এমনটাই প্রত্যাশা ক্রীড়াবোদ্ধাদের।
×