ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক সদস্যের মৃত্যুতে বিচার বন্ধ

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল শীঘ্রই পুনর্গঠন করা হবে

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল শীঘ্রই পুনর্গঠন করা হবে

বিকাশ দত্ত ॥ এক সদস্যের (বিচারপতি) মৃত্যুর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শীঘ্রই নতুন সদস্য নিয়োগের পর ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরু হবে। এখন ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের অপেক্ষায়। চলতি বছরের ২৪ আগস্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আমির হোসেন মারা যান। এরপর থেকেই বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর তারকা খচিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বিচারে ৪২টি মামলায় মোট ১১৬ জন আসামির মধ্যে ১০৩ জন রাজাকারকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল বন্ধ থাকায় তার ছন্দপতন ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শীঘ্রই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নতুন বিচারপতি পেতে যাচ্ছে। ফলে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ হবে। বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ চলছে না। এক সদস্যের মৃত্যুর কারণে বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে লকডাউনের কারণে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। যখন বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো তখন বিচারপতি আমির হোসেন মারা গেলেন। যার ফলে বিচারকাজ চলছে না। তিন জন বিচারপতি না থাকলে ট্রাইব্যুনাল বসতে পারে না। যা আইনেই রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এখন গঠিত হয়নি। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হলেই পুনরায় বিচারকাজ শুরু হবে। করোনার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল দফতর থেকে আদেশ দিয়েছেন। তারিখ নির্ধারণ করেছেন। ট্রাইব্যুনাল প্রকাশ্যে বসেনি। আশা করছি শীঘ্রই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হবে। অন্যদিকে আরেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আমির হোসেনের মৃত্যুর পর বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। তদন্ত এবং প্রসিকিউশনের যত কাজ আছে তা চলমান আছে। কিন্তু বিচারিক কার্যক্রম এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হলেই বিচারকাজ শুরু হবে। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। এই অবিস্মরণীয় বিজয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে মহাজোটের অঙ্গীকার, যা তরুণ প্রজন্মেও নির্বাচকমÐলীকে আকৃষ্ট করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দ্রæত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার বিষয়ে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং দ্রæত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তারকা খচিত আসামিদের বিচার শেষে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা দুটি থেকে একটিতে রাখা হয়েছে। মামলার সংখ্যা পরবর্তীতে বাড়লে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ ও বানচাল করার দেশী-বিদেশী প্রোপাগান্ডা সত্তে¡ও দেশীয় আইনে বিচারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪২টি মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল গঠন হবার পর গত ১১ বছরে ৪২টি মামলায় মোট ১১৬ জন আসামির মধ্যে ১০৩ জন রাজাকারকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী মামলায় এ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে ৬৯ জনকে, আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে ২৮ জনকে। আর ৫ জনকে যাবজ্জীবন করাদণ্ড প্রদান, একজনকে ৯০ বছরের দণ্ড, দুইজনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। রায় হবার পূর্বে কেন্দ্রীয় কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১০ জন। আর রায় হবার পূর্বে পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন ২ জন। জামিনে আছেন ৪ জন। স্বেচ্ছায় ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়েছেন ৩ জন।
×