ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নয়

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নয়

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপির ‘তত্ত¡াবধায়ক সরকার’ দাবি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ কেন্দ্রীয় নেতারা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে আর কোনদিন তত্ত¡াবধায়ক সরকার হবে না। অসাংবিধানিক কোন দাবি মেনে নেয়া হবে না, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত রয়েছে যে কোন বিশৃঙ্খলা-সহিংসতার জবাব দিতে। অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বা বিতর্কিতদের আগামীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হবে না। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারা এসব কথা বলেন। নৃত্য, গান ও কবিতা আবৃত্তির মধ্যদিয়ে শুরু হয় দলীয় সভানেত্রীর এই আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আজ একটি ব্রান্ডের নাম। শেখ হাসিনা নিজেই একটি ইতিহাস। ইতিহাসের প্রয়োজনে শেখ হাসিনার জন্ম হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে উঠে এসেছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব নেতার কাতারে পৌঁছেছেন শেখ হাসিনা। তাই তো শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব ও জাতিসংঘে প্রদত্ত বক্তব্যের কারণে বিশ্বে প্রসংশিত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকল নেতাকর্মীকে শপথ নিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। ত্যাগী কর্মীদের দিয়ে দল সাজাতে হবে। যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা আগামীতে আওয়ামী লীগের টিকেট পাবেন না। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আরও আধুনিক স্মার্ট আওয়ামী গড়ে তুলতে চাই। এজন্য দলের মধ্যে কোন বসন্তের কোকিল নয়, ত্যাগীদেরই জায়গা করে দিতে হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘গতবারতো কামাল হোসেনকে এনে আপনারা নির্বাচনে নেতা বানিয়েছেন। আমি আমার দলের পক্ষে, জোটের পক্ষে বলতে চাই- আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কে? নির্বাচন করলে নির্বাচনে আপনাদের নেতা কে? টেমস নদীর পর থেকে পলাতক দণ্ডিত ব্যক্তি যদি নির্বাচনে নেতা হয়, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর পরিচয় বহন করে, তবে বাংলাদেশে আপনাদের (বিএনপি) অপ্রাসঙ্গিক রাজনীতি আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। জনগণ এই দণ্ডিত পলাতক নেতাকে (তারেক রহমান) কোনদিনই এদেশের নির্বাচনে নেতা হিসেবে মেনে নেবে না।’ পৃথিবীর অন্যান্য সব গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সময় মতো সংবিধান অনুযায়ী ঠিক সেভাবেই নির্বাচন হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে আজকে মাঠ গরম করবেন, পানি ঘোলা করবেন, দেশে বিশৃঙ্খলা করবেন, পরিবেশ নষ্ট করবেন, অগ্নিসন্ত্রাস করবেন, জ্বালাও-পোড়াও করবেন? পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত রয়েছে যে কোন বিশৃঙ্খলা-সহিংসতার জবাব দিতে। এজন্য আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুল রাজ্জাক বিএনপির তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, বিএনপি আবারও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত¡াবধায়ক সরকার বলে কোন সরকার নেই। বাংলাদেশে আর কোনদিন এ সরকার হবে না। পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশে তত্ত¡াবধায়ক সরকার হয় না, কোন নিরপেক্ষ সরকার হয় না। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের সময়েই নির্বাচন হয়। আর তা পরিচালনা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাদের কাজ হলো সুষ্ঠু নির্বাচন করা। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি, পরাজিত অপশক্তি ও দেশবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের কলিজা যেন পানি হয়ে যায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুতী² ক্ষুরধার নায়কোচিত নেতৃত্বের বিজয় কেতন দেখে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেখিয়ে দিয়েছেন যে, দেশদ্রোহীদের এই বাংলার মাটিতে কোন ঠাঁই নেই। মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স নীতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক, লড়াকু এবং সম্প্রীতিময় বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকারকে প্রতিষ্ঠা করতে সংকল্পবন্ধ। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে। তার জীবনে কোন লোভ বা মোহ নাই। কোন কিছু পাওয়ার আকাক্সক্ষা নেই। অত্যন্ত সাদা-মাটা জীবন-যাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি লড়াই করে যাচ্ছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। হতে হয়েছিল অনেক মিথ্যা মামলার আসামি। কিন্তু কোন কিছু তাকে দমাতে পারেনি। অশুভ শক্তির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তিনি অবিচল লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখান এবং তা বাস্তবায়নও করেন। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। যে স্বপ্নে আমাদের পূর্বসূরিরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের এই বাংলাদেশ রচনা করে গেছেন, বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে গেছেন, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে হলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার দরকার। কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তার সফল নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের মন জয় করে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিমÐলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খানসহ কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ।
×