ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০০:৩৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ সন্তান জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। এমন এক পরিবেশে শেখ হাসিনার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, যে পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল বাঙালীর ভবিষ্যত। সেই মহান পিতার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নাম শুনলে গর্বে ফুলে ওঠে বুক। বাংলার দুঃখী মানুষের মুক্তির জন্য জীবনপণ সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু জেলেই কাটিয়েছেন এক যুগেরও বেশি সময়। যখন জেল থেকে মুক্তি পেতেন সন্তানরা বাবাকে ঘিরে ঘিরেই থাকত; বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৬৬ সাল। বাঙালীর জাতীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই অঞ্চলের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলার পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা ছয় দফা প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু। ছয় দফা হচ্ছে বাঙালীর মুক্তিসনদ, বারবার চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধু তা একই বছরের ৫ ও ৬ইং ফেব্রæয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের সম্মেলনে উত্থাপন করতে পারেননি। তার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলন বর্জন করে ফিরে আসেন। ছয় দফার আন্দোলনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রের রোষানলে পড়তে হয়। বঙ্গবন্ধু দমার পাত্র নন। প্রতিরক্ষা আইনে মে মাসে তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে বন্দী করে রাখে। ছয় দফা আন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় চলতে থাকে। সে সময় বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ছাত্র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন এবং বঙ্গবন্ধুর বার্তা ছাত্রনেতৃবৃন্দের কাছে পৌঁছে দিতেন। ছয় দফা আদায়ের দাবি এবং বঙ্গবন্ধুসহ গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক হরতাল পালন করে। বঙ্গবন্ধু ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইতে ২ জুলাই তারিখে লিখেছেন, ‘আজ যারা ৬ দফার দাবি যথা স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে আলাদা করার দাবি বলে উড়াইয়া দিতে চায় বা অত্যাচার করে বন্ধ করতে চায় এই আন্দোলনকে, তারা খুবই ভুল পথে চলেছে। ছয় দফা জনগণের দাবি। পূর্ব পাকিস্তানের বাঁচা মরার দাবি। এটাকে জোর করে দাবান যাবে না। দেশের অমঙ্গল হবে একে চাপা দেয়ার চেষ্টা করলে।’ বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সেই হুঁশিয়ারি সে সময়ের সরকার উপলব্ধি করতে পারেনি। আন্দোলন চলতে থাকে। বাবার আদর্শে অনুপ্রাণিত শেখ হাসিনার সেই কৈশোরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। ১৯৬৬ সালে ঢাকার ইডেন কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে কলেজ সংসদের ভিপি নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতির মহাসড়কে সরব পদার্পণ তাঁর। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক হন। বাঙালীর ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা তখন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। এমনকি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও শেখ হাসিনা আগে থেকে জানতেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিনটিতেও পিতার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় বেঁচে গিয়েছিলেন দুবোন- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, দশের বাইরে থাকার কারণে। আজ পিতার অবর্তমানে তাঁর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব প্রত্যয়ের সঙ্গে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে হাল ধরেছিলেন আওয়ামী লীগের। আমি একটি কবিতায় বলেছিলাম- ‘তুমি এলে ত্রাতারূপে এই বাংলায়/ বাঙালীর কপাল থেকে কলঙ্কতিলক মুছে দিতে/ তুমি কন্যারূপিণী হয়ে এলে/ তুমি ভগ্নিরূপিণী হয়ে এলে/ তুমি মাতৃরূপিণী হয়ে দাঁড়ালে সম্মুখে;/ সহসা বাড়িয়ে দিলে তোমার দু’হাত মানুষের দিকে।’ এভাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার ফিরে-আসাকে নিয়ে একটা রূপ এঁকেছিলাম। শেখ হাসিনার ফিরে-আসা বাঙালী জাতির জন্য ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি না- হলে এ জাতির কলঙ্ক কোনকালেই মোচন হতো না। তিনি এসে দেখলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর নেই! সংবিধানও পরিবর্তন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশী হয়েছে। শুরু হয় শেখ হাসিনার আন্দোলন। পিতার আদর্শ ও সাহসকে পুঁজি করে নেমে পড়েন আরেক সংগ্রামের পথে। সইতে হয় নানা নির্যাতন, হত্যার নানা হুমকি। কিছুকেই পরোয়া না করে বাবার মতো দৃঢ়চেতা, দূরদর্শী ও আদর্শের সংগ্রামে প্রত্যয়ী নেত্রী এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে। কোন বাধাই তখন আর বাধা হয়ে থাকল না। দীর্ঘ একুশ পর ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আবার ক্ষমতায় আসেন ২০০৯ সালে। দায়িত্ব নিয়ে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তখন দৃঢ় অবস্থান নিলেন শেখ হাসিনা। সে সময় ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠন করা হলো ট্রাইবুনাল। বিচার হলো মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর, সাজা হলো। শেখ হাসিনা ব্যতীত এই বিচার করা আর কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। এরপর দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আত্মনিয়োগ করেন তিনি। তাঁর কর্ম-সাফল্য আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য-পরিবর্তনের আলোর দিশারী শেখ হাসিনা এখন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মুক্তকণ্ঠ। বিশ্বের দারিদ্র্য বিমোচন, আঞ্চলিক হানাহানি বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বকে জলবায়ু বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে এখন তিনি বিশ্বনন্দিত নেত্রী। তাঁর সুদূরদর্শী প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের মহাসড়কে দাঁড়িয়ে যে সুচিন্তিত প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেছেন- তার সুফল অচিরেই জাতি পাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
×