ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওবায়দুল কাদের এমপি

শেখ হাসিনা ॥ আস্থার সোনালি দিগন্ত

প্রকাশিত: ০০:২৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

শেখ হাসিনা ॥ আস্থার সোনালি দিগন্ত

আমাদের জাতীয় জীবনের স্মরণীয় দিন ২৮ সেপ্টেম্বর। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আমাদের আস্থার সোনালি দিগন্ত, প্রেরণার দীপ্যমান শিখা, আমাদের স্বপ্নময় অর্জনের কাণ্ডারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তাঁর শৈশব থেকে সুদীর্ঘ পথপরিক্রমা কখনই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে পৌঁছেছেন আজকের অবস্থানে। পিতার পথরেখা ধরে দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক অতন্দ্রপ্রহরী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে জানাই এদেশের গণমানুষের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা। মধুমতি তীরের সবুজ-শ্যামল বাংলায় বেড়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। গ্রামীণ জীবনের সারল্য তাঁর মানসগঠনে কতটা রেখাপাত করেছে, শৈশবের স্মৃতিচারণে তিনি নিজেই তা অনন্য লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন : ‘আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে... টুঙ্গিপাড়া গ্রামে আমার জন্ম। আমার শৈশবের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলো কেটেছে গ্রামবাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষায় কাদাপানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাকজ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝিঁর ডাক শুনে...।’ সময়ের পরিক্রমায় পিতা মুজিবের হাত ধরে যিনি দেশকে চিনেছেন, দেশের মাটিকে ভালবেসেছেন। ভালবেসে আঁকড়ে ধরেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ সবুজ-শ্যামল বাংলা। স্বজন হারানোর এক সাগর কষ্ট বুকে নিয়ে যিনি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কঠিন কাজ শুরু করেছিলেন। আজ সে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাঁর অনন্য নেতৃত্ব এবং সাহসী পদক্ষেপে। যে-দেশ এনে দিয়েছিলেন তাঁর পিতা, সে-দেশ সাজিয়ে তুলছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু এদেশের ভৌগোলিক মুক্তির রোল মডেল আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা এদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির রোল মডেল। উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধিতে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-কর্ণফুলীর জলধারা প্রবাহিত হবে, যতদিন আকাশ তার নীলিমা ছড়াবে, থাকবে পাখ-পাখালির কলকাকলি, ততদিন বঙ্গবন্ধু পরিবারের অবদান হিরণ¥য় আভা ছড়াবে এ বদ্বীপ বাংলায়। পিতার পাঠশালায় রাজনীতির পাঠ নেয়া কন্যা ইডেন কলেজের নির্বাচিত ভিপি হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে ধারাবাহিক পথপরিক্রমায় আজ হয়ে উঠেছেন পিতার ছায়া, আদর্শিক উত্তরাধিকার। এদেশের কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। মমতার আধার। এ অর্জিত আস্থাার গহীনে নেই কোন ম্যাজিক। সূত্র বলি আর উৎস বলি, এ অর্জনের পেছনের রয়েছে দেশের মানুষের প্রতি নিখাঁদ ভালবাসা আর দেশপ্রেম। তিনি ভালবাসেন দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি। তিনি অসহায়, দরিদ্র মানুষের নির্ভরতার ঠিকানা। উদার আকাশের মতো বিস্তৃত যার হৃদয়। সততা, পরিশ্রম, মানবিকতা আর পিতার মতো দেশের মানুষের প্রতি অপার ভালবাসাই তাঁর শক্তি। তাই তো তিনি আজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব নেতাদের কাতারে, মর্যাদার আসনে। বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলায় তাঁর দক্ষতা এবং দূরদর্শিতার প্রশংসা বিশ্বময়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে সীমান্ত খুলে দিয়ে মানবিক নেতৃত্বের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি। স্বীকৃতি পেয়েছেন ‘মাদার অভ হিউম্যানিটি’র। তাঁর উদাহরণ তিনি নিজেই। দেশরত্ন শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন রাজনীতির সর্পিল আর কণ্টকময় পথ মাড়িয়ে। মহান স্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে। শেখ হাসিনা আছেন বলেই ’৭৫-এর খুনীদের বিচার হয়েছে, জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। যুদ্বাপরাধীদের বিচার হয়েছে। জাতির বুক থেকে নেমেছে স্বৈরশাসনের জগদ্দল পাথর। ঘাতকের বুলেট তাকে বারবার তাড়া করেছে। জেল, জুুলুম, গৃহবন্দী জীবন কাটিয়েছেন তিনি। সময়ের কষ্টিপাথরে পরীক্ষিত এক নেতৃত্ব দেশরত্ন শেখ হাসিনা। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে এদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল ডিপ্লোমেটের নাম শেখ হাসিনা। গত ৪৫ বছরে এদেশের সবচেয়ে সৎ এবং সাহসী রাজনৈতিকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক ও দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। তিনি আছেন বলেই দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। তিনি আছেন বলেই দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে, আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে বিনিময় হয়েছে ছিটমহল। তাঁর হাত ধরেইে বিক্ষুব্ধ পার্বত্যাঞ্চলে বইছে শান্তির সুবাতাস। তিনি আছেন বলেই আমরা জয় করেছি আরেক বাংলাদেশের সমান সুনীল সমুদ্রসীমা, দ্বার খুলেছেন সম্ভাবনাময় ‘বøু ইকোনমি’র। তিনি আছেন বলেই আমাদের স্বপ্নের ডানা আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশে পৌঁছেছে, আমরা প্রবেশ করেছি স্যাটেলাইট যুগে। তিনি আছেন বলেই পারমাণবিক বিশ্বে নতুন সংযোজন বাংলাদেশ। তাঁর সাহসী এবং দক্ষ নেতৃত্বে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে বাংলাদেশ আজ নোঙর করেছে উন্নয়নশীল দেশের গর্বিত বন্দরে। দেশরতœ শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের সোনালি ফসল নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু। এ সেতু আমাদের সক্ষমতার প্রতীক। মেট্রোরেল, কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুুর রহমান টানেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুত প্রকল্পসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সাহস ও সক্ষমতা দেখিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মহাসাগরের জলপ্রাচীর ভেদি সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তিনি জেগে আছেন বলেই নিশ্চিন্তে ঘুমায় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা এক আজন্ম উন্নয়ন-যোদ্ধার অপর নাম। হতাশ ও অসহায় প্রাণে যিনি সঞ্চার করেন জীবনের জয়গান। তিনি আমাদের সাহসের সোনালি দিগন্ত উন্মোচন করে দিয়েছেন, বাড়িয়ে দিয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস। তাই তো আজ বিশ্বসভায় নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে মুজিবের সেই দুখিনী বাংলা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বমানচিত্রে অর্জনের সোনালি দিগন্ত পানে অদম্য গতিতে ছুটে চলা এক ধাবমান অশ্ব। শেখ হাসিনা নিছক কোন সরকার প্রধান নয়। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। যার ভাবনায় পরবর্তী নির্বাচন নয়, তাঁর ভাবনার আকাশ জুড়ে পরবর্তী জেনারেশন। তাই গ্রহণ করেছেন শত বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা। তিনি নিছক কোন শাসক নন, নিজেকে দেশের সেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি গৃহহীনদের বন্ধু, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পরম আত্মীয়, খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের আস্থার ঠিকানা। প্রতিক‚লতার স্রোত মাড়িয়ে গর্জে ওঠা বাংলাদেশের রূপকার। যিনি সঙ্কটকে সম্ভাবনায় রূপ দেন। ধ্বংসস্ত‚পের মাঝে থেকে ওড়ান সৃষ্টির পতাকা। যিনি মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে গেয়ে যান জীবনের জয়গান। স্বজন হারানোর কষ্ট ভুলে থাকেন অসহায় মানুষের মুখের হাসি ফোটানোর মধ্য দিয়ে। পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নকে যিনি করেছেনে জীবনের ব্রত। তিনি আমাদের প্রাণস্পন্দন, আমাদের ভাবনার নিউক্লিয়াস, উত্তাল সাগরে অমানিশার আঁধারে পথ দেখানো আস্থার বাতিঘর। এদেশের রাজনীতিতে সততা আর স্বচ্ছতার অনুপম উদাহরণ বঙ্গবন্ধু পরিবার। সরকার প্রধান হয়েও অতিসাধারণ জীবনযাপন তাকে করে তুলেছে অসাধারণ একজন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা লড়াই করেই এগিয়ে নিচ্ছেন জীবন। তাঁদের যাপিত জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা। তিনি একজন গর্বিত মাতা। তাঁর সন্তানরা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো প্রধানমন্ত্রীর সন্তান নন। পরিশ্রম, মেধা ও যোগ্যতায় তারাও দীপ্যমান। নির্মাণ করেছেন আন্তর্জাতিক মানের ক্যারিয়ার। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যার সন্তানরাও নিজ নিজ আসনে প্রতিষ্ঠিত। বারবার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এদেশের মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য। আজ এদিনে দেশের কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অগণিত নেতাকর্মী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছে। তিনি এ দেশের এগিয়ে যাওয়ার অফুরন্ত প্রেরণা। সাহসের বর্ণিল ঠিকানা। মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি তাঁর অব্যাহত সাফল্য, সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘজীবন।
×