ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাদুকরী নেতৃত্ব

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

জাদুকরী নেতৃত্ব

কাওসার রহমান ॥ দ্বিতীয় দফায় সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তার সুফল এখন দেশবাসীর দোরগোড়ায়। বছর ঘুরলেই শুরু হবে দেশবাসীর সেই স্বপ্নপূরণ। দেশের মানুষ গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে যে স্বপ্ন দেখেছে, সে স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। আর সে স্বপ্ন ডানা মেলেছে দেশের সব মেগা প্রকল্পে। প্রকল্পগুলো এখন মানুষের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এর মধ্যে বছর ঘুরলেই অন্তত তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করবে দেশবাসী। আগামী বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে তিনটি মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু করা হবে। এরপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং বছর শেষে ডিসেম্বরে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হবে। এই প্রকল্পগুলো এখন আর স্বপ্ন নয়। এগুলো এখন দৃশ্যমান-বাস্তবতা। স্বপ্নপূরণের পথে বাংলাদেশ। এছাড়া করোনার ভয়ঙ্কর থাবা মোকাবেলা করে দ্রæত এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র, দোহাজারি রামু ঘুমধুম রেল, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ। এসব প্রকল্পের মধ্যে সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে ঢাকার সঙ্গে সাভার, আশুলিয়া, নবীনগর ও ইপিজেডসংলগ্ন শিল্প এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০টি এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ছয়টি জেলার মানুষ আশুলিয়া-নবীনগর-বাইপাইল হয়ে সহজে ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে। আবার ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে বিমানবন্দর এলাকায় যুক্ত হবে। এতে করে সাভারের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগের সহজ পথ তৈরি হবে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সাভার ইপিজেড থেকে আশুলিয়া-বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর হয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। এর মূল দৈর্ঘ্য হবে ২৪ কিলোমিটার। সঙ্গে এতে ওঠা-নামার পথ (র‌্যাম) থাকবে আরও ১০ কিলোমিটার। এই এক্সপ্রেসওয়ে পুরোটা উড়াল পথে হচ্ছে না। মোট পথের ১৪.২৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে থাকবে সমতলে। এর দুই পাশে দুটি সার্ভিস লেনও থাকবে। প্রকল্পের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে পাঁচ হাজার ৯৫১ কোটি এবং চীন সরকার (জিটুজি) দেবে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুনে উদ্বোধন করা হবে পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়িত এই স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতুর সড়কপথের কংক্রিটের সø্যাব বসানো শেষ হবে সেপ্টেম্বরে। এরপর চাইলে হেঁটেই পার হওয়া যাবে স্বপ্নের এই সেতু। ১ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজের অগ্রগতি বিবেচনায় সেতু বিভাগ আশা করছে, সব কাজ ঠিকমতো এগোলে আগামী বছরের জুনে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য চালু করা যাবে। গত ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর সর্বশেষ বা ৪১তম স্টিলের স্প্যান জোড়া দেয়ার মাধ্যমে মূল সেতু দাঁড়িয়ে যায়। এতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার সঙ্গে শরীয়তপুরের জাজিরার সরাসরি সংযোগ তৈরি হয়। দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন আর ভেতর দিয়ে চলবে রেল। এখন সেতু পারাপারের জন্য কংক্রিটের সø্যাব জোড়া দিয়ে রেল ও সড়কপথ তৈরি হচ্ছে। ১ জুন পর্যন্ত যানবাহন ও রেলপথের সø্যাব বসানোর কাজ যথাক্রমে ৮৯ শতাংশ এবং ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। রেলের কাজও অনেক এগিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হতে পারে মাটি থেকে সেতুর সঙ্গে রেলপথের সংযোগ তৈরির কাজ। তখন রেলপথ ধরেও হেঁটে পার হওয়া যাবে সেতুটি। তবে একই দিন সেতুতে যানবাহনের সঙ্গে ট্রেন চালুর লক্ষ্য থাকলেও ট্রেন চালুর বিষয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, নক্সা জটিলতায় সেতুর বাইরে উড়ালপথের (ভায়াডাক্ট) একটি পিলার ভাঙতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এখন বাড়তি জনবল দিয়ে পদ্মা সেতুর সঙ্গে একই দিনে রেল চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এটি সম্ভব না হলেও সেতু উদ্বোধনের দিন মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালুর অগ্রাধিকার ঠিক করেছে রেলওয়ে ঠিকাদার। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত থাকলেও নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের জুনের মধ্যেই পুরো মেট্রোরেলের কাজ শেষ করা হতে পারে বলে আশাবাদী ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি- ডিএমটিসিএল। দেশের প্রথম মেট্রোরেল হচ্ছে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত। বর্তমানে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে এটি মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত নির্মাণের জন্য কাজ চলছে। এটি পরে কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৮.৪৯ শতাংশ। এই প্রকল্প চালু হলে উত্তরা-মতিঝিল রুটে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার ও দিনে ৫ লাখ যাত্রী চলাচল করবে। মোট ১৬টি স্টেশনে থামবে ট্রেনগুলো। উত্তরা-মতিঝিল রুট ছাড়াও ঢাকার যানজট নিরসন এবং দ্রæত ও আরামদায়ক যাতায়াত নিশ্চিত করতে আরও পাঁচটি রুটে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে ১২৮ কিলোমিটারের নেটওয়ার্ক হবে মেট্রোরেলের। আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে স্বপ্নের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল। দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলা নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে কাজের গতি কিছুটা মন্থর হয়ে গেলেও প্রকল্প এলাকার বর্তমান চিত্র পুরোটাই অন্যরকম। ২৪ ঘণ্টা বিরামহীনভাবে কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এরই মধ্যে বাড়তি জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক বিভিন্ন প্রকারের যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ। সবকিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে আগামী বছরই নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। আর এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম টানেল। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায় ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের দুই প্রান্তের যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি কক্সবাজারের সঙ্গে সড়কপথে দূরত্ব কমে আসবে। সেইসঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গেও আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। এসব মেগা প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, মেগা প্রকল্প দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এসব মেগা প্রকল্প দেশের অর্থনীতিতে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পগুলো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার গোড়াপত্তন ঘটাবে। গড়ে উঠবে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ যে উন্নয়নের সুফল পাওয়ার অপেক্ষায় আছে, সেটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে। অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে শেখ হাসিনা আজ তার দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার শীর্ষে নিয়ে এসেছেন। মানুষের ভালবাসা ও ভোটের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন। তারই প্রতিদানে তিনি দেশকে আজ উন্নয়নের এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শুধু দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেই নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেননি, দেশের দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তায় এমনভাবে বলয় সৃষ্টি করেছেন, যা আজ সারাবিশ্বে দৃষ্টি কেড়েছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান করছেন এবং বাংলাদেশের সকল অসহায়, গরিব মানুষের জন্য বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, গর্ভবতী ভাতা দিয়ে যাচ্ছেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের চলমান ৭৬তম অধিবেশনে ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছেন, যতদিন বেঁচে থাকবেন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশে পেরিয়ে বিশ্বের নেত্রী। তিনি বিশ্বের একজন সৎ প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা হলো মহামানব, তার কোন ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নেই। তিনি শুধু মানুষের কল্যাণে কাজ করেন। শেখ হাসিনা অতি সাধারণ জীবনযাপন করেন। তার কোন ভোগ-বিলাসিতা নেই।
×