ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শোকজ সন্তোষজনক না হলেও বহাল তবিয়তে প্রধান শিক্ষক

শেরপুরে শিশু শিক্ষার্থীকে দিয়ে ইট ভাঙ্গানোয় তোলপাড়

প্রকাশিত: ২১:৩০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

শেরপুরে শিশু শিক্ষার্থীকে দিয়ে ইট ভাঙ্গানোয় তোলপাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে নাজমুল ইসলাম (৯) নামে এক শিশু শিক্ষার্থীকে দিয়ে ইট ভাঙ্গানোর ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওই ঘটনা ঘটে। নাজমুল ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও স্থানীয় আলকাছ আলীর ছেলে। এ নিয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিক মোহাম্মদ রফিকুল্লাহকে শোকজ করে সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। বরং ২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার পর্যন্ত তিনি বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। কেবল তাই নয়, তোলপাড় সৃষ্টি করা ওই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেও নানা অপতৎপরতা চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। জানা যায়, সম্প্রতি এলজিইডির আওতায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের পশ্চিম বাকাকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পে বাথরুম না থাকায় সম্প্রতি বার্ষিক বরাদ্দের ৪০ হাজার টাকায় বাথরুম নির্মাণের কাজ হাতে নেন প্রধান শিক্ষক আশিক মোহাম্মদ রফিকুল্লাহ। যেনতেনভাবে সেই কাজটি করতে গত ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর বাথরুমের নির্র্মাণ কাজে ব্যবহারে খোয়া তৈরির জন্য পাকা ইট ভাঙ্গানোর কাজে লাগান একই স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজমুলসহ ৪/৫ জনকে। ওই অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থী নাজমুলের হাতুড়ি দিয়ে ইট ভাঙ্গার ভিডিও চিত্র ধারণ করে স্থানীয় একাধিক উৎসুক যুবক। পরে ওই ভিডিওটি মোবাইল থেকে মোবাইলে এলাকায় বিভিন্নজনের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়। খবর পেয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নূরুন্নবী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই প্রধান শিক্ষককে ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য শোকজ করেন। পরে প্রধান শিক্ষক ২৬ সেপ্টেম্বর ওই শোকজের জবাব দিলেও তা সন্তোষজনক না হওয়ায় একইদিন ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহরিয়ার পারভেজ ও সহকারী ইন্সট্রাক্টর আবু সাঈদের সমন্বয়ে ২ সদস্যের একটি কমিটির উপর দায়িত্ব অর্পণ করেন। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিক মোহাম্মদ রফিকুল্লাহ প্রথমে বলেন, এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে কথা বলুন। পরে সরাসরি তার বক্তব্যই জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ঘটনার দিন রাজমিস্ত্রি শ্রমিক দোকানে চা-পান খেতে গেলে কয়েকজন সহপাঠীকে নিয়ে একজন ছাত্র হাতুড়ি পিটিয়ে কয়েকটি ইট ভেঙেছে মাত্র। আর ওই ইট ভাঙার ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে এলাকায় ছড়িয়েছে কেউ কেউ। ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে প্রধান শিক্ষক ইতোমধ্যে দোষ স্বীকার করে স্কুল কমিটির কর্মকর্তা ও ছাত্র অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এজন্য তা নিয়ে আর এগোতে চাই না। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. নূরুন্নবী বলেন, ঘটনাটি শুনে ও শিশু শিক্ষার্থীর ইট ভাঙ্গার ভিডিও দেখে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ওই ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়। কিন্তু জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ঘটনার বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২ সদস্যের একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
×