ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার চরে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র

চরের মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ আসতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

চরের মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ আসতে যাচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ এখন স্বপ্ন নয়। বাস্তবতায় রূপ পেতেযাচ্ছে। তিস্তা মহা উন্নয়ন পরিকল্পনার মহাযজ্ঞ দৃশ্যমান হচ্ছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার অন্তরভূক্ত দুইশত মেগাওয়াট ক্ষমতার সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড স্থাপিত হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ মেগাওয়ার্ড উৎপাদিত সৌরবিদ্যুত জাতীয় মূলগ্রীডে যোগ হতে যাচ্ছে। সেনা কল্যান সংস্থা উৎপাদন করবে এক শত মেগাওয়ার্ড সৌর বিদ্যুত। নদীর পরিত্যক্ত বালু চরের বুকে এক খন্ড উপশহর এখন প্রায় দৃশ্যমান। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। উৎপাদিত সৌর বিদ্যুত সেচ কার্যক্রমে তিস্তার চরের উদ্ধার হওয়া প্রায় ১২ লাখ হেক্টর বালু চরকে চাষাবাদে ব্যবহার হবে। কমমুল্যে কৃষক সেচ সুবিধা পাবে। জ্বালানি তেল নির্ভর বিদুৎতের চাপ কমবে। সৌর বিদুৎ দিয়ে দিনের বেলা সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ছোট, বড়, মাঝারি, শিল্প কলকারখানা চলবে। সৃষ্টি হবে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের। একই সাথে সমৃদ্ধশালী দেশের মর্যাদা পেতে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ১০ ভাগ নবায়ন যোগ্য পরিবেশ বান্ধব বিদ্যুত উৎপাদনের শর্ত পুরনে দেশ একধাপ এগিয়ে যাবে। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের শৈলমারীর দূর্গম পরিত্যক্ত ধূ ধূ বালু চরে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লি: সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। প্রায় ১১০ একর বালু চরে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ মেগাওয়ার্ড সৌরবিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবছর ৩০ সেপ্টেম্বর উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারনে উৎপাদনে যেতে পারেনি। আগামী ফেরুয়ারি মাসে উৎপাদনের ডেট লাইন ঘোষনা করেছে। কোম্পানির সাফল্যের উপর কোম্পানির সমৃদ্ধি নির্ভর করছে। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লি: সৌর বিদ্যুত উৎপাদন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ করে ঝুঁকি নিয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে যাহা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সফল করতে ঝুঁকিপূর্ন বিনিযোগ মনে হচ্ছে। এই বিনিয়োগ ব্যক্তি কেন্দ্র ঝুঁকি হলেও সৌরবিদ্যুত কেন্দ্রের কারণে চরের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে। সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে । সামাজিক কুসংস্কার ও বেকারত্ব কমেছে। র্নিজন চর হতে বহু দুরের ৩টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ বিদ্যুত সেবার আওতায় এসেছে। প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলতে যাচ্ছে। প্রতিদিন বর্ষা মৌসুমে ৩-৪ শত শ্রমজীবি ও শুস্কমৌসুমে দৈনিক প্রায় দুই হাজার শ্রমিকের সোলার কেন্দ্রে কর্মসংস্থান হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও চরম মানবেতর জীবন যাপনে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল চরের মানুষ। বিগত স্বৈরশাসকরা তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন নানা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে রাজনীতি করেছে। চরবাসির ভাগ্যের উন্নয়নে যুগপোযুগী কর্মপরিকল্পনা ছিল না। বরং চরের দুর্দশার কথা দেশে -বিদেশে প্রচার করে ত্রাণ এনে তথাকথিত নেতা ও চ্যালারা লুটপাট করে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করেছে। জনকল্যাণে ও সরকারের ব্যয় হ্রাসে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড নিজ খরচে স্থাপিত দুই কিলোমিটার বৈদ্যুতি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করে নেসকো বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণে সহায়তা করেছে। ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার ৫৮টি সৌর প্লেট বসিয়ে তাদের দপ্তরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবহার করেছে। সেখানে সোলার বিদ্যুত দিয়ে তারা কর্মকর্তার দপ্তরে এসি চালাচ্ছে। চরে এসি। ভাবতে অবাক লাগে। ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিঃ সূত্রে জানা গেছে, সোলার কেন্দ্র যাতাযাতে ও নির্মাণ সামগ্রী, ভারী যন্ত্রপাতি, যানবাহন, শ্রমিক - কর্মচারী পরিবহনে ইন্ট্রাকো কয়েক কোটি টাকা নিজ ব্যয়ে চরে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা, দুটি ষ্টীলের বেইলি ব্রিজ, ১৮ টি কালভার্ট ও বক্সকালভার্ট নির্মাণ করেছে। সেতুর কাজ চলছে । নদী ভাঙন রোধে ৪ কিঃমিঃ সাই ওয়াল নির্মাণ করেছে। নোসকো যে ৩টি চরে বিদ্যুত সংযোগ দিতে যাচ্ছে। সরকারের বা নেসকোর কোন অর্থ ব্যয় হয়নি। রাষ্ট্রের কয়েকশত কোটি টাকা সঞ্চালন লাইন স্থাপনে ব্যয় হ্রাস হয়। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প ভাগ্য খুলছে। মানুষ হাতে সারা বছর কাজ থাকে। রাস্তা ঘাট থাকায় খুব সহজে এখন চরবাসি সড়ক যোগাযোগে দেশের নানা প্রান্তরে সহজে হবে। সৌরশক্তি নির্ভর সেচের দ্বি- স্তর কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বহুমুখী ব্যবহারে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে। এই সোলার পাওয়াওে উৎপাদিত বৈদ্যুতিক শক্তি জাতীয় গ্রীডে যোগ হয়ে ক্রমবর্ধমাণ বিদ্যুৎ চাহিদা নিরসন করবে। প্রাকৃতিক শক্তির আধার নবায়নযোগ্য সৌর শক্তি। দেশে সূর্যালোকের প্রাচূর্য্য সংরক্ষণ করে রাত্রিকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সাপেক্ষ। রাতে সৌরশক্তি নয়। সৌরশক্তি সরাসরি দিনের বেলায় ব্যবহার লাভজনক। সৌরশক্তির উৎপাদন খরচ কুইক রেন্টালের চেয়ে কম। দিনের বেলা সৌর শক্তি সেচ পাম্প সহ গৃহস্থালি চলবে। সৌরশক্তি শতভাগ পরিবেশ বান্ধব। বহুদেশ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ও পরিবেশগত ক্ষতি সম্পর্কে অগ্রীম চিন্তা করেনি। নগরায়ন পরিবেশের ক্ষতি করেছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্রতা রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সৌর বিদ্যুত প্লান্ট জোরালো ভুমিকা রাখবে। ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিঃ কেন্দ্রের প্লান্ট ইনচার্জ - প্রকৌশলী মোঃ আক্তারুজ্জামান জানান, জোগেন বানিয়ার ঘাট ও জামির বাড়ি ঘাট দুইটি এই পাওয়ার প্লান্টের খুব কাছে। এই ঘাট দুইটির মানুষ যাতাযাতে সুবিধা পাবে। কোম্পানির নিজ অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি এ্যাপরোজ লোহার ব্রীজ (দৈঃ ২৭.০৫ মিটার ও প্রঃ ৪ মিটার ) নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র পুরোদমে বিদ্যুত উৎপাদনে যাবে। ইরিগ্রেশন মৌসুমকে র্টাগেট করে জোরেসোরে ফিনিশিং কাজ চলছে। সোলার পাওয়ার প্যানেলের প্লেট গুলোর মাঝখানের ফাঁকা জায়গা মৎস্য, পশু পালন, ছোটছোট ফলের বাগান , নানা জাতের সবজি চাষ চাষ করা হবে। এখানে কার্বন নিঃসরণের হার শূন্য থাকবে। সোলার প্লান্টের চারিধারে ও আবাসিক চত্বওে সবুজের সমারহ থাকবে। যাহা পর্যটনকে আর্কষন করবে। তৈরি করা হবে রিসোর্ট। কর্মকর্তাদের বসবাসে বাংলোবাড়ি, কোয়াটার। চরের বুকে ছোটখাট শহর হবে। এই প্রজেক্টের পাশাপাশি সেনা কল্যাণ সংস্থান অধিনে ৪ শত একর জমির উপর ১০০ শত মেগাওয়ার্ড পৃথক আরেকটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সেনা কল্যাণ সংস্থা। তাদের দপ্তর ও সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে।
×