ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

এশিয়ার তিন যুদ্ধ আরোপিত দেশান্তরের কথা

প্রকাশিত: ২০:২১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

এশিয়ার তিন যুদ্ধ আরোপিত দেশান্তরের কথা

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালের বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা এবং ১৯৬২ সালের নাগরিক অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের সনদ অমান্য করে এশিয়ায় ৩টি যুদ্ধ আরোপিত দুঃসহ দেশান্তরণের ঘটনা ঘটেছে। এর প্রথমটি ঘটেছে ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলীয় হুংনাম বন্দর থেকে ৯১ হাজার উদ্বাস্তুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরীয় জাহাজ দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে এসে নিরাপত্তা ও মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়ায়। ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়ান ও চীনা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ান, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ বাহিনী পিছু হটে আসে। ডিসেম্বরে প্রবল ও অসহনীয় শৈত্যপ্রবাহের মধ্য দিয়ে জাংগজিন হ্রদের যুদ্ধে চীনা সৈন্য ও উত্তর কোরীয় কমিউনিস্ট বাহিনীর কাছে পরাভূত হয়ে ১ লাখ মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় সেনা পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। এই পশ্চাদপসরণ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী হুংনাম বন্দর দিয়ে ৯১ হাজার গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতা সমর্থক উদ্বাস্তু ১৯০টি জাহাজে তুলে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে আসে। এই জাহাজগুলো মূলত পাঠানো হয়েছিল মার্কিন ও দক্ষিণ কোরিয়ান সৈন্যদের হুংনাম বন্দর থেকে ফেরত নিয়ে আসার জন্য। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সর্বশেষ জাহাজ ছিল মেরিডিথ ভিক্টরী। এই জাহাজ মালপত্রের অতিরিক্ত মাত্র ৫৯ জন যাত্রী পরিবহনের জন্য উপযুক্ত ছিল। ১৯৫০-এর ২৩ ডিসেম্বর মেরিডিথ ভিক্টরী এতে পরিবহনের জন্য আগ থেকে উঠানো ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সাগরে ফেলে দিয়ে ১৪ হাজার উদ্বাস্তু নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ উপকূলের গিউজ দ্বীপে নিয়ে যায়। ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সাগরে ফেলে উদ্বাস্তুদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার তাৎক্ষণিক মানবিক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন এই জাহাজের ক্যাপ্টেন লিউনার্ড লারোয়ে। তাকে পরে মার্কিন বিশপদের সম্মেলনে ধর্মযাজক হিসেবে গ্রহণ ও সম্মান করা হয়। এই জাহাজে ১৪ হাজার দেশান্তরী উদ্বাস্তুর বেশি স্থান দেয়া ও নিরাপদে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। জাহাজে ভ্রমণকালীন এসব উদ্বাস্তুর মধ্যে ৫ জন নারী সন্তান প্রসব করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার এই শতাব্দীর ২য় দশকের রাষ্ট্রপতি মুন জাইনের মা-বাবা এই জাহাজে করেই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার গিওজ দ্বীপে পৌঁছেছিলেন। এসব দেশান্তরী উদ্ধাস্তু তাদের মুক্তি ও সুরক্ষার জন্য মার্কিন সরকার ও জনগণের কাছে কৃতজ্ঞ থেকে নীতিগতভাবে সকল দেশ ও সমাজে ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন যুগিয়েছিলেন। মুক্ত পৃথিবীর ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সকল মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই দেশান্তরণে উদ্বাস্তুদের সহায়তা প্রদানকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। হুংনাম বন্দর হতে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সহায়তায় আশ্রয়প্রাপ্ত ৯১ হাজার উদ্বাস্তু উত্তর কোরিয়ায় কমিউনিস্ট মতাবলম্বী সরকার, বাহিনী ও জনগণ থেকে পরিত্রাণ চেয়েছিলেন। তারা গণতন্ত্রী, মুক্ত ও উদার বাণিজ্যে আস্থাশীল, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সম্পত্তির ব্যক্তি মালিকানায় বিশ্বাসী ছিলেন। এসব বাস্তুত্যাগীর সকল জায়গা সম্পত্তি উত্তর কোরীয়রা বাজেয়াফত করেছিলেন। মানবাধিকার ও ব্যক্তি নিরাপত্তার প্রতিকূলে এই ধরনের সংঘবদ্ধ অভিযান ও অত্যাচার কোরিয়ান যুদ্ধ সমাপ্তি এবং ৩৮ অক্ষরেখা ধরে কোরিয়ার উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্তির পরও সংশোধন হয়নি। যেসব পলায়নপর উদ্বাস্তু হুংনাম থেকে আনা সম্ভব হয়নি তারা পরে সকলেই উত্তর কোরীয় ও চীনা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূতভাবে নিগৃহীত বা নিহত হয়েছিলেন। (দ্রষ্টব্য: নিউইয়র্ক টাইমস, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১) এশিয়ার দ্বিতীয় যুদ্ধ আরোপিত দুঃসহ দেশান্তরণের ঘটনা ঘটেছে ভিয়েতনামে। ১৯৬০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামের জনগণের বিপ্লবী নেতা হোচি মিনের নেতৃত্বে ও আদর্শে অনুপ্রাণিত ভিয়েতনামের কমিউনিজম ভাবধারায় উজ্জীবিত জনগণ সেখানকার দক্ষিণপন্থী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। ভিয়েতনামের সামরিক জান্তাকে সমর্থন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থনের বলিষ্ঠতায়, কমিউনিস্ট সহায়তায় ও নিঃস্বার্থ নেতা হোচি মিনের ত্যাগে উত্তর ভিয়েতনামের স্বাধীনতা ও জনতার অধিকারের আন্দোলন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থনপুষ্ট হয়ে দক্ষিণ ভিয়েতনামের মার্কিন সমর্থন ও সাহায্যপুষ্ট সামরিক শাসনকে ১৯৭৩ সালে উৎখাত করে। এই সংগ্রামে দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন সেনাবাহিনী ও সরকারকে সমর্থন করে। কথিত আছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী ও সামরিক শাসনের সমর্থনে ২ লক্ষাধিক মার্কিন সৈন্য ও ৩ লাখ ২০ হাজার দক্ষিণ কোরীয় সৈন্য সাধারণ জনগণের সমর্থিত উত্তর কোরীয় বাহিনীর কাছে পরাভূত হয় এবং ফলত সবশেষে দক্ষিণ কোরীয় সৈন্যগণ ও মার্কিন সেনাবাহিনী দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন থেকে স্ব স্ব দেশে ফিরে যান। এই প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ ভিয়েতনামে বসবাসরত ডানপন্থী ভিয়েতনামীরা ১৯৭৩-এর মার্চ মাসের মধ্যে তাদের বাস্তুভিটা ত্যাগ করে উদ্বাস্তু হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহে চলে যেতে বাধ্য হন। যুক্তরাষ্ট্র একাই এক লাখ ৩০ হাজার দক্ষিণ ভিয়েতনামী উদ্বাস্তুকে সায়গন ও নিকটবর্তী বন্দরসমূহ থেকে উদ্ধার করে এবং পরবর্তী ৩ বছর পর্যন্ত আরও কয়েক লাখ লাও ও কম্বোডিয়ান ডানপন্থী উদ্বাস্তুকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রদান করে। উত্তর ভিয়েতনামী কমিউনিস্ট বাহিনীর হাতে কয়েক লাখ ডানপন্থী ভিয়েতনামী প্রাণ হারান। এর চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ উত্তর কোরিয়ার সংশোধনী কার্যক্রমের আওতায় অত্যাচারিত, জেলবন্দী হন এমনকি মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হন। উল্লেখ্য, কোরিয়ার জনগণের ৭০% এখনও ধর্মে অবিশ্বাসী। উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম একত্রিত হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৫ সালে ভিয়েতনাম সরকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং তার পুনর্গঠনে ব্যাপক অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে। ১৯৯২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া একীভূত ভিয়েতনামকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুন (যার পিতা-মাতা ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় উদ্বাস্তু হয়ে এসেছেন) আগেকার সায়গন আর এখনকার হোচি মিন নগর পরিদর্শন করে ভিয়েতনামের দুর্ভাগ্যকবলিত অতীতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কোরিয়া ও ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও সেসব দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থনের বাইরে তথাকথিত মুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম কিংবা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। এই দুই দেশের জনগণ তাদের প্রথাগত ধর্ম বিশ্বাসের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের সেনাবাহিনী বা তাদের দক্ষিণপন্থী সরকার সমর্থন বা রক্ষাকরণে এগিয়ে আসেননি। এই দুই দেশেই মার্কিন হস্তক্ষেপবিরোধী জনগণ ধর্ম বিশ্বাস, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারকে তাদের সংগ্রামে তেমন কোন স্থান বা পরিচালনার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেননি। এশিয়ার তৃতীয় যুদ্ধ আরোপিত দেশান্তরণের ঘটনা ঘটেছে আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান ও সে দেশ থেকে মার্কিনীদের সরে আসার কারণে। ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে রাশিয়ান বাহিনী প্রত্যাহারের পর ১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থান ঘটে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবানরা পাকিস্তানের সামরিক সহায়তায় আফগানিস্তানের তিন-চতুর্থাংশ এলাকা কার্যত দখল করে নেয়। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর ১১ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আল-কায়েদার সন্ত্রাসী অভিযানের পর সেই বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযান চালিয়ে আফগানিস্তানকে হামিদ কারজাইয়ের শাসনের আওতায় নিয়ে আসে। এতদসত্ত্বেও ধর্মীয় গোঁড়ামিকে আশ্রয় করে তালেবানরা ক্রমান্বয়ে আফগানিস্তানের সকল এলাকা তাদের কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে আফগানিস্তান গোঁড়া ধর্মীয় শাসনের আওতায় গণতন্ত্র, নারী-পুরুষের সমতা, সর্বজনীন বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা ও ধর্মীয় সহনশীলতা থেকে দূরে সরে আসে, মুক্ত সংবাদ ব্যবস্থা দেশ ও সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, দেশের সংখ্যালঘিষ্ট হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধদের ওপর অত্যাচার ও নির্বাসন আরোপিত করে। ১৯৯৬ সালে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ওসামা বিন লাদেন সুদান থেকে আফগানিস্তানে এসে ক্রমান্বয়ে আল-কায়েদা বাহিনীর সঙ্গে তালেবান সৈন্য ও সমর্থকদের একীভূত করে। ১৯৯৮ সালে আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি দূতাবাস আক্রমণ এবং ২২৪ জন আমেরিকান ও আফ্রিকানকে হত্যা করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের তালেবান কর্তৃপক্ষের কাছে বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের জন্য সোপর্দ করার দাবি জানায়। তালেবানরা এই অভিযোগ ও দাবি প্রত্যাখ্যান এবং ক্রমান্বয়ে আফগানিস্তানের লৌকিক সরকারকে কার্যত দূরে সরিয়ে সারাদেশে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আল-কায়েদাকে বাদ দেয়ার শর্তে তালেবানদের সঙ্গে পরবর্তী ১৪ মাসে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারের চুক্তি করেন এবং এই চুক্তির আবরণে ২০২১-এর ৩০ আগস্টের আগে মার্কিন বাহিনী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাগমন করেন, আফগান সরকারের তালেবানের কাছে পতন ঘটে এবং ঐ সরকারের অপেক্ষাকৃত উদার প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি দেশ থেকে পলায়ন করে জান বাঁচান এবং তার সরকারের সমর্থক দেড় লক্ষাধিক আফগান দেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন এবং তাদের চেয়ে ৪ গুণ বেশি আফগান দেশব্যাপী গোঁড়া ও প্রগতিবিরোধী শাসন ও সমাজ ব্যবস্থার নিগড়ে বস্তুত বন্দী হয়ে যান। ফলত আফগানিস্তান থেকে দেশান্তরণের ঘটনা একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ও মর্মান্তিক মানবতা হন্তক ঘটনা হিসেবে মুক্ত পৃথিবীকে মর্মাহত করে। কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তান থেকে যুদ্ধ আরোপিত দেশান্তরণের নিদারুণ ঘটনা পিছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলে ৩টি সত্যান্বেষী প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। এক, জনগণের সংগ্রামের মোড়কে এই তিন দেশে যেসব নেতা ও সহযোগী যুদ্ধ করে মানবতার বিনাশ ঘটিয়েছিলেন তারা পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে এরূপ দুঃখজনক নিদারুণ দেশান্তরণ কি পরিহার করতে পারতেন না? দুই, যারা গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষাকরণের জন্য সাগর ও মহাদেশ পার হয়ে এ তিন দেশে সৈন্য পাঠিয়েছিলেন বা মোতায়েন করেছিলেন এবং যারা সেসব দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিজেদের দেশের গণতন্ত্র ও সামাজিক মূল্যবোধের সমর্থক বা যথার্থ মনে করেছিলেন তারা কি সেসব সমাজের গ্রহণ ক্ষমতা যথার্থভাবে ও মাত্রায় বিশ্লেষণ বা সমাপ্ত করেছিলেন? যদি করতেন তাহলে সেসব দেশের জনগণের জন্য তাদের সহায়তা সেসব দেশের সংস্কৃতি ও কাঠামো অনুকূল হতো এবং ফলত সার্বিকভাবে পৃথিবীব্যাপী গণতন্ত্রের মৌল অবদান ও প্রয়োগ অধিকতর নিরাপদ ও সফল হতো। তিন, গণতন্ত্রের মোড়কে এই তিন দেশান্তরণের প্রক্রিয়া শেষ বিশ্লেষণে সাহায্যদাতা গণতান্ত্রিক দেশসমূহের সামরিক শৈল্পিক যৌগিকাকে কি প্রসারণ করেনি? এ প্রক্রিয়ায় এই তিন দেশান্তরণভোগী দেশের জনগণ তাদের রক্ষণ ও পোষণে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বিনিয়োগের বা সহায়তার সর্বাত্মক উপযোগ পেয়েছেন কি? জাতিসংঘের আওতায় পৃথিবীর অন্যান্য দেশান্তরই সঙ্কুল এলাকায় কিংবা যেখানে দেশান্তরণ অবশ্যাম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে এসব অভিজ্ঞতাপ্রসূত প্রশ্ন ও তার উত্তর বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সকল দেশের তরফ থেকে শান্তিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেয়া অধিকতর ফলপ্রসূ হবে বলা চলে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের যুক্তি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্ভবত এই প্রেক্ষিতেই বলেছেন, অন্য দেশের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সেই দেশের জনগণ না নামলে বা না থাকলে যোগ দেবে না। লেখক : এমপি ও সাবেক মন্ত্রী
×