ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৈশ্বিক নেতৃত্বের পরিচায়ক

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

বৈশ্বিক নেতৃত্বের পরিচায়ক

বরাবরের মতো আবারও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত বক্তৃতা এবং সাহসী উচ্চারণ ধ্বনিত হয়েছে। আগের মতোই তাঁর বক্তৃতায় রয়েছে বিশ্ব নেতাদের প্রতি চিন্তার খোরাক। সাধারণ পরিষদে নিজের ১৭তম ভাষণে শেখ হাসিনা সমসমায়িক বিশ্বের এমন কিছু সমস্যা তুলে এনেছেন, যা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং জরুরী সমাধানের দাবি রাখে। তিনি শুধু সমস্যা তুলে ধরেই দায়িত্ব শেষ করেননি, সমাধানের পথও বলে দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এবং আতঙ্কের বিষয় করোনা। রোহিঙ্গা ইস্যুকে তিনি শুধু দ্বিপক্ষীয় সঙ্কট হিসেবে না দেখে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে করেছেন। জলবায়ু নিয়ে ধনী-দরিদ্র রাষ্টগুলোর সম্পর্কের বিষয়টি তিনি চিহ্নিত করেছেন যথাযথভাবে। বিশ্বের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে তিনি ছয়টি প্রস্তাব রাখেন। এগুলো নিশ্চয়ই আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনা হবে। করোনা মহামারীতে বিশ্বের ক্রান্তিকাল উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সকলকে হাতে হাত মিলিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। মতভেদ ভুলে অভিন্ন মানবজাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। কোভিডমুক্ত বিশ্ব গড়তে সকল রাষ্ট্রের জন্য টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে সাশ্রয়ী মূল্যে। কমাতে হবে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা বৈষম্য। বেশিরভাগ মানুষকে টিকা থেকে দূরে রেখে কখনই মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ক্যান্সার রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, পাঁচ বছর ধরে আমরা এই সঙ্কটের মধ্যে রয়েছি। সঙ্কট উত্তরণে মিয়ানমারকে অবশ্যই সে দেশের নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সঙ্কটের সৃষ্টি মিয়ানমারে, সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারের হাতে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব উদ্যোগ নিলে আমরা যে কোন সহযোগিতার জন্য তৈরি রয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ধনী অথবা দরিদ্র দেশ কেউ নিরাপদ নয়। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। কোভিড পরিস্থিতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের উন্নয়ন আকাক্সক্ষাকে বিপন্ন করেছে। স্বল্পোন্নত দেশের টেকসই উত্তরণ ত্বরান্বিত করতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রণোদনাভিত্তিক অবকাঠামো আমরা প্রত্যাশা করি। মহামারীকালে প্রবাসীরা সম্মুখসারীর যোদ্ধা। তবু তাদের অনেকে চাকরিচ্যুত বা বেতন বঞ্চিত হয়েছেন। অভিবাসীদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার জন্য অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আফগানিস্তান নিয়ে তিনি বলেন, বিনির্মাণ এবং ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ সেই দেশের জনগণকেই করতে হবে। আফগানিস্তানের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সেই দেশের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। তিনি তার দীর্ঘ বাংলায় দেয়া বক্তৃতায় বাংলাদেশের গত ১২ বছরের উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্রও তুলে ধরেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রধানমন্ত্রী যেসব আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বক্তব্য রেখেছেন তার সবকিছুতেই সম্পর্কযুক্ত বাংলাদেশ। কোভিড কিংবা জলবায়ু, রোহিঙ্গা কিংবা আফগানিস্তান, সবই আঞ্চলিক সহযোগিতার জায়গা। সঙ্কটের এই জায়গাগুলোর যথাযথ পরিচর্র্যা না হলে বিশ্বে যেমন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না, তেমনি এই অঞ্চলের রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও থাকবে ঝুঁকির মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রস্তাবগুলো এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এমন একটি আন্তর্জাতিক ফোরামে নিজ দেশের সমস্যার কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য রেখেছেন, নিঃসন্দেহে সেটি তার বৈশ্বিক নেতৃত্বের পরিচায়ক।
×