ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ ও ভারতের জঙ্গীরা সংগঠিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ ও ভারতের জঙ্গীরা সংগঠিত হচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ বা ‘হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ সামনে রেখে সংগঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের জঙ্গীরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও জামা’আতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া-জেএমআই একজোট হয়ে এই অপতৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশে। মঙ্গলবার রাজধানীর মীরহাজিরবাগ এলাকা থেকে জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য মোঃ নাহিদ হাসান নামে এক জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ বলেছে, ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল সে ও তার সহযোগীরা। অনলাইনে নিজেদের মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষে সদস্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। নাহিদ হাসান উগ্রবাদী বিভিন্ন বই ও বক্তৃতা অনলাইনে পোস্ট করে দলীয় লোকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাসহ সাধারণ মানুষকে তাদের কার্যক্রমে যুক্ত করত। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার ও আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নাশকতার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সিকিউরড চ্যাট গ্রুপ খুলে অন্য সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল বলে পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের দাবি। শুধু তাই নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া চার জঙ্গীর কাছ থেকে এ তথ্য পেয়েছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, সম্প্রতি ভারতে বড় মাপের তিন জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। তাদের সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। এ ধরনের তথ্য আমরা আদান-প্রদান করে থাকি। ওই তিনজন জিহাদের জন্য বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে। তথ্যটা আমরা জানতাম, যা যথাযথ সময়েই ভারতকে জানিয়েছিলাম। সম্প্রতি জঙ্গী তৎপরতা বৃদ্ধি ও জঙ্গীদের সক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে ঢাকার শীর্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরাও কিন্তু বসে নেই। জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে আমাদের যারা কাজ করছে তারা খুব এক্সপার্ট। ঘটনা ঘটার আগেই আমরা তথ্য পাচ্ছি। যেখানে যতটুকু পাচ্ছি, সেখানেই কাজ করছি। পুলিশ কমিশনারের কথার প্রমাণ মিলল গত মঙ্গলবার পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট জঙ্গীবিরোধী অভিযানে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য মোঃ নাহিদ হাসানকে (২৩) গ্রেফতার করেছে পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট। গ্রেফতার হওয়া নাহিদ হাসান রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকার বাসিন্দা। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন ও ৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া নাহিদ হাসান জানায়, সে ও তার সহযোগীরা ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এছাড়া অনলাইনে নিজেদের মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষে সদস্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। নাহিদ হাসান উগ্রবাদী বিভিন্ন বই ও বক্তৃতা অনলাইনে পোস্ট করে দলীয় লোকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাসহ সাধারণ মানুষকে তাদের কার্যক্রমে যুক্ত করত। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার ও আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নাশকতার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সিকিউরড চ্যাট গ্রুপ খুলে অন্য সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল বলে পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের দাবি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, জঙ্গীবাদ দমনে তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে এ অপতৎপরতা বন্ধে একসঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশ-ভারত গোয়েন্দারা। ঢাকার কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পশ্চিমবঙ্গের ওই চার জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতার স্পেশাল টাস্ক ফোর্স-এসটিএফ। গত বছরের শেষ দিকে ঢাকার মগবাজার, ইস্কাটন ও রাজাবাজার এলাকায় কয়েকটি সিরিয়াল ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে জঙ্গী সম্পৃক্ততা পেয়েছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় কয়েকজন জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় শীর্ষ এক জঙ্গী নেতার মোবাইল ফোন। সেই মোবাইল ফোন থেকেই ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’-এর জন্য বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের একজোট হয়ে কাজ করা সম্পর্কিত কিছু নথি উদ্ধার হয়। সেসব কাগজপত্রে কীভাবে একজোট হয়ে কাজ করা হবে তা নিয়ে কয়েক পাতার একটি নির্দেশিকা ছিল। মোবাইল ফোনটি যে শীর্ষ জঙ্গী ব্যবহার করতেন, তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম হৃদয়। যাকে ‘হিন্দ অঞ্চল’-এর সামরিক শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পলাতক এই শীর্ষ জঙ্গীর সঙ্গে একদিকে যেমন বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে থাকা জঙ্গীদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, তেমনি তিনি মাঝে-মধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করতেন। ভারতের স্পর্শকাতর অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত কাশ্মীরে গিয়ে জঙ্গীবাদের সামরিক প্রশিক্ষণও নিয়েছেন হৃদয়। ঢাকার সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের বরাত দিয়ে এসটিএফ বলেছে, বারাসাত থেকে লালু সেন বা রাহুল নামে যাকে তারা গ্রেফতার করেছে, গ্রেফতারের আগে তার বাসায় এই হৃদয় অবস্থান করেছিল। রাহুলের বাসা থেকে এসটিএফ হৃদয়ের ব্যবহার করা কয়েকটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসও উদ্ধার করেছে। রাহুল অর্থের বিনিময়ে জঙ্গীদের অস্ত্র-বিস্ফোরক সরবরাহ এবং ভারতে সংগঠিত হতে সহযোগিতা করত। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে ভারতে গ্রেফতার হওয়া রাহুল ও পাভেল ওরফে জোফের নামও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়া রাহুলও অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন। বাংলাদেশের একজন মহিলা যিনি আইনজীবী তাকে বিয়েও করেছেন তিনি। ডাকাতি করে তহবিল গঠনের চেষ্টা ॥ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গাজওয়াতুল হিন্দ সামনে রেখে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করা জঙ্গীরা কোটি টাকার তহবিল গঠনের চেষ্টা করে আসছে। ঢাকা অন্তত ছয়টি ডাকাতির ঘটনায় জঙ্গী সম্পৃক্ততা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভারতেও তারা স্বর্ণের দোকান, বাসা-বাড়ি ও ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। এজন্য বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১৫-২০ জন ভারতে গিয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হওয়া তিন জঙ্গী। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের জঙ্গীরা ভারতে গিয়ে সংগঠনের কাজ করছে।
×