ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪১১ রেলসেতুর অর্ধেক নড়বড়ে, ট্রেন চলে ঝুঁকি নিয়ে

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

৪১১ রেলসেতুর অর্ধেক নড়বড়ে, ট্রেন চলে ঝুঁকি নিয়ে

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ রেলের লালমনিরহাট বিভাগের আওতায় ৫শ’ দশমিক ৬১ কিলোমিটার রেলপথের ৪১১টি রেলসেতুর অর্ধেকের বেশি একেবারে নড়বড়ে। ধীরগতিতে ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজ অতিক্রম করতে হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৯২ সালে উত্তরবঙ্গে রেল লাইন স্থাপনের সময় রেলব্রিজগুলো নির্মিত হয়। সর্বোচ্চ আয়ুষ্কাল ছিল ৬০ বছর। মেয়াদ বহু আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের একাংশে এভাবেই রেল চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের উত্তরাঞ্চলের রেল ডিভিশন দুটি-লালমনিরহাট ও পাকশী। এর মধ্যে লালমনিরহাট বিভাগে বগুড়া,গাইবান্ধা,রংপুর,কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট,পঞ্চগড়,ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও নিলফামারী জেলার ওপর দিয়ে রেলপথ বয়ে গেছে। এই রেলপথের সেতুর গার্ডার খুবই দুর্বল। সেতুর নিচের মাটি ধসে গেলে অথবা বিচ্যুত হয়ে গেলে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়। এক কর্মকর্তা বললেন, দুর্ঘটনা না ঘটলে মেরামত হয় না। ২০১৮ সালের ২৩ জুন রাতে মৌলভীবাজারে ট্রেন দুর্ঘটনার পর দেশের নড়বড়ে রেলসেতু মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে একই বছর ২২ সেপ্টেম্বর সান্তাহার-লালমনিরহাট সেকশনে বগুড়ার সোনাতলায় চকচকিয়া সেতুর পিলার দেবে যায়। রেল বিভাগের দৃষ্টিগোচর হলে ৪৮ ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ রেখে মেরামত করা হয়। এর আগে গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ ও কুড়িগ্রামে একটি রেলসেতু দেবে যায়। পরে মেরামত ও সংস্কার হয়। তারপর হাতে গোনা কয়েকটি সেতুর সংস্কার ও মেরামত করা হয়। এদিকে কিছুদিন ধরে গাইবান্ধার ভেড়ামারা ও বগুড়ার করতোয়া রেলসেতুর গার্ডার খুবই দুর্বল হয়ে আছে। দ্রæত মেরামত ও সংস্কারের জন্য উপর মহলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী কোভিডের কারণে রেলসেতু সংস্কার কাজে গতি নেই। লালমনিরহাট রেল বিভাগের আওতায় বছর কয়েক আগে আপ ও ডাউনে আন্তঃনগর, মেইল ও এক্সপ্রেস এবং লোকালসহ ৬৪টি ট্রেন চলত। ইঞ্জিন ও রেলকোচ সঙ্কটের কারণে আপ ও ডাউনে ১৮ টি ট্রেন সাময়িক বন্ধ রেখে ৪৬ টি চালু রাখা হয়। এ বছর কোভিডের কারণে ট্রেনের সংখ্যা কমানো হয়। বর্তমানে নতুন পরিবর্তিত সময়ে ট্রেন চলাচল করছে। এর মধ্যে ১৪ টি আন্তঃনগর, ২২ টি মেইল ও এক্সপ্রেস এবং ১০টি লোকাল। এ ছাড়া সীমিতভাবে গুডস ট্রেন (মালগাড়ি) চলাচল করছে। ট্রেন ভ্রমণকারী কয়েকজন বললেন, সেতুর ওপর ট্রেন উঠলে ভেতরে বসেও মনে হয় ব্রিজ কাঁপছে। সান্তাহার থেকে দিনাজপুরগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক বগুড়া বিরতিকালে বলেন, সেতু কি অবস্থায় আছে তা দেখা যায় না। যাত্রা শুরুর সময় বলা হয়, কিছু ব্রিজ সাবধানে পার হতে। কোন্ ব্রিজ তা বলেন না রেল প্রকৌশলী ও স্টেশন মাস্টার। সময়মতো ট্রেন চলাচল করতে এক্সপ্রেস ট্রেন ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতিতে চালাবার নির্দেশ আছে। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পোঁছানোর তাগিদে সেতুর ওপর গতি কমানোর সুযোগ থাকে না। কোন চালক নিজ দায়িত্বে কখনও গতি কমে দেন। তবে খেয়াল রাখতে হয় গতি কমাতে গিয়ে যেন ট্রেন চলাচল বিলম্ব না হয়। রেলওয়ের এক সহকারী প্রকৌশলী জানান, রেলসেতুগুলো ব্রিটিশ শাসনামলে চুন, সুড়কির মিশ্রণে ইটের গাঁথুনিতে নির্মিত। আয়ুষ্কাল ৬০ বছর। যা বহু আগেই অতিক্রম করেছে। পুনর্নির্মিত আরসিসির গাঁথুনির সেতুর মেয়াদ একশ’ বছর। পুনর্নির্মিত সেতুর সংখ্যা কম। লালমনিরহাট রেল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, অর্ধেক রেলসেতু বহু আগেই মেয়াদউত্তীর্ণ হয়েছে। বেশ কিছু সেতুর সংস্কার ও মেরামত হয়েছে। চলমান প্রক্রিয়ায় বাকিগুলোর কাজ হবে। নতুন কয়েকটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কোভিডকালে কাজগুলো বাস্তবায়নে বাধা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই নতুন করে শুরু করা হবে।
×