ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোপালগঞ্জ ও চাঁদপুরে দুই শিশুসহ আক্রান্ত ৫

করোনায় মানিকগঞ্জে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

করোনায় মানিকগঞ্জে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা এবং করোনা উপসর্গে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মানিকগঞ্জে মারা গেছে এক মেধাবী স্কুলছাত্রী। অন্যদিকে, গোপালগঞ্জে করোনা শনাক্ত হয়েছে দুই শিশু-শিক্ষার্থীর দেহে। এ ছাড়া চাঁদপুরের কচুয়ায় ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো। জানা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেল মানিকগঞ্জ এসকে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী ছাত্রী সুবর্ণ ইসলাম রোদেলা। বুধবার সন্ধ্যায় ৭টার দিকে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত রোদেলা মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বেউথা এলাকার বশির উদ্দিন মোল্লার একমাত্র সন্তান। পারিবারিক সূত্র জানায়, গত তিন দিন ধরে রোদেলার জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে সে ওষুধও খাচ্ছিল। কিন্তু বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মারাত্মকভাবে শ্বাসকষ্ট, গলা ও বুকে ব্যথা উঠে অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে দ্রুত মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার সিটি স্ক্যান করানোর পর রিপোর্টে করোনার উপসর্গ মনে হয়। রোদেলার শরীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রæত রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে গাবতলী এলাকায় সে এ্যাম্বুলেন্সেই নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের উপপরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, রোগীর সিটি স্ক্যান করানোর পর তার করোনার উপসর্গ মনে হওয়ায় তাকে দ্রæত রাজধানীর কুর্মিটোলা বিশেষায়িত হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, বুধবার দুপুরের পর তাকে মুন্নু মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড হাসপাতালের নেয়া হয় এবং সেখান থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে সে মারা যায়। সে করোনায় আক্রান্ত ছিল কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মানিকগঞ্জ এসকে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সুবর্ণ ইসলাম রোদেলার খ শাখার রোল নম্বর ছিল ১। সে আইসিটি প্রতিযোগিতায় সারা বাংলাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করে। এ ছাড়াও সে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অসংখ্য পুরস্কার লাভ করে। তার মৃত্যুতে মানিকগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে আসে। বুধবার রাত ১০টার পর বেউথা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। গোপালগঞ্জ ॥ পৃথক দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’শিশু-শিক্ষার্থীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরা হলো গোপালগঞ্জ শহরের ১০২ নং বীণাপাণি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোনালিসা ইসলাম (১০) এবং কোটালীপাড়া উপজেলার ৪নং ফেরধরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিনা খানম (৮)। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ওই দুটি বিদ্যালয়ে ওই দুটি শ্রেণীর পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন-ওয়ার্ডে ভর্তি মোনালিসার মা মিতু খানম জানিয়েছেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে তার মেয়ের মাথাব্যথাসহ হালকা জ¦র অনুভূত হয়। পরবর্তীতে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় একপর্যায়ে ২১ সেপ্টেম্বর তার করোনা পরীক্ষা করে পজিটিভ পাওয়া যায়। পরে ২২ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা শহরের শিশুবন এলাকার বাসিন্দা। অপরদিকে, ৪নং কোটালীপাড়ার ফেরধরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহেলী পারভীন পান্না জানিয়েছেন, স্কুল খোলার প্রথমদিনই তাদের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তিনা খানম বিদ্যালয়ে আসে; কিন্তু তখন তার মধ্যে করোনার কোন উপসর্গ দেখা যায়নি। পরে তার বাড়িতে বসে জ¦রে অসুস্থ হলে ১৬ সেপ্টেম্বর তার নমুনা দেয়া হয় এবং পরদিনই তার রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর থেকে স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর পাঠদান ১৪ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন ওই শিক্ষার্থী হোম-আইসোলেশনে আছে। শিক্ষার্থীর মাও করোনা পজেটিভ। সে তার পরিবার থেকেই করোনায় আক্রান্ত বলে তারা ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা জানিয়েছেন, প্রতিটি স্কুলে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিদিন পাঠদান চলছে। স্কুলে প্রবেশের সময় প্রতিটি শিক্ষার্থীর তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোন শিক্ষার্থীর করোনা-উপসর্গ দেখা দিলে তার নমুনা পরীক্ষা করা হবে। রিপোর্ট পজিটিভ পেলে ওই শ্রেণী বা বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হবে। তিনি আরও জানান, দু’এক দিনের মধ্যে করোনা প্রতিরোধ-সংক্রান্ত কমিটির সভায় এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কচুয়া, চাঁদপুর ॥ উপজেলার ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হচ্ছে, দ্বাদশ শ্রেণীর ২০২১ সালের পরীক্ষার্থী আকলিমা আক্তার, একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাত আক্তার ও ফাতেমা আক্তার নিশি। বুধবার ৩ শিক্ষার্থীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার পর অভিভাবক ডেকে তাদের বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, সরকারী নির্দেশনা মেনে আমরা প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপে কলেজে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাচ্ছি। কারও তাপমাত্রা একটু বেশি হলেই ওই শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিন শিক্ষার্থীর দ্বাদশ শ্রেণীর আকলিমা যে শাখায় পড়ত সে ক্লাসের একটি শাখা ও মানবিক বিভাগে অধ্যয়নরত জান্নাত আরা ও ফাতেমা আক্তার যে শাখায় পড়ত সেই শাখাসহ মোট দুটি শাখা ১৫ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান পরিচালনা করা হচ্ছে। কলেজছাত্রী নিবাসে উঠতে ইচ্ছুক এমন ৪০ জন শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তন্মধ্যে বুধবার ৩ শিক্ষার্থীর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার আমরা সর্বোচ্চ সচেতনতা রক্ষা করে পাঠদান কার্যক্রম চালু রেখেছি। বাগেরহাট ॥ এক শিক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় ওই স্কুলের সব শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের করোনা পরীক্ষা করতে বলেছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার স্কুল পরিদর্শন করে মোংলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার এ পরামর্শ দেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের ৩১৯টি স্কুলের সবই খুলে দেয়া হয়। মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ওই সহকারী শিক্ষকের স্ত্রীর করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। তিনি একটি সরকারী হাসপাতালের সেবিকা। মঙ্গলবার র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় জানিয়ে ইউএনও বলেন, তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষকের পরীক্ষা করালে তারও পজিটিভ আসে। এরপর থেকে তারা হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ওই শিক্ষক স্কুলে আসায় সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী ও আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর সবার পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কারও উপসর্গ দেখা দিলে তাকে স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে। তাছাড়া কর্তৃপক্ষকে স্কুল চলাকালে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষকে সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এক শিক্ষকের পজিটিভ হওয়ার খবর পেয়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে পরিদর্শন করে পরবর্তীতে যাতে আর কেউ আক্রান্ত না হতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদের পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রথমদিন শিক্ষক ও কর্মচারীদের পরীক্ষা করা হয়। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা করা হবে।’ তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
×