ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবনের নতুন ইনিংস সাজালেন সিমোনা

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

জীবনের নতুন ইনিংস সাজালেন সিমোনা

বিশ্ব টেনিসের অন্যতম সেরা তারকা সিমোনা হ্যালেপ। নামের পাশে ইতোমধ্যেই যোগ করেছেন দুটি গ্র্যান্ডস্লাম। তবে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক শীর্ষ তারকার চলতি বছরটা খুব একটা ভাল কাটেনি। গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের ধারেকাছেও যেতে পারেননি রোমানিয়ান টেনিসের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। সদ্য সমাপ্ত ইউএস ওপেনেও নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। ছিটকে গেছেন শেষ ষোলো থেকেই। তবে কোর্টের এসব দুস্মৃতি অবশ্য কোর্টেই ফেলে আসেন হ্যালেপ। ২৯ বছর বয়সী রোমানিয়ান তারকা বাইরের জীবনটা কাটান নিজের মতো করে। গত সপ্তাহে তো নিজের জীবনটাকে আরও পূর্ণতায় ভরিয়ে দিলেন তিনি। দীর্ঘদিন চুটিয়ে প্রেম করার পর ভালবাসার মানুষটিকেই বিয়ে করলেন সিমোনা হ্যালেপ। তাঁর স্বামী টনি ইউরুক একজন ধনকুবের। শুভকাজ সম্পন্ন করতে নিজ শহর কন্সতান্তাকেই বেছে নিয়েছেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। কৃষ্ণ সাগর পাড়ের শহরটিতে বেশ জাঁকালো পরিবেশেই হয়েছে নবদম্পতির বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। যেখানে উপস্থিত ছিলেন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব থেকে শুরু করে পরিচিত সাংবাদিকরাও। জীবনের নতুন ইনিংস সাজিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত ২২টি শিরোপার মালিক। জীবনের অনুভূতি জানাতে গিয়ে সিমোনা হ্যালেপ বলেন, ‘এটা সুন্দর মুহূর্তগুলোর একটি। আমি সত্যিই আবেগাপ্লুত। এই আবেগ গ্র্যান্ড¯øাম জয় থেকে একদম আলাদা। টেনিস আমার জীবনের অংশ, বিয়েটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সেটা হওয়ায় খুব খুশি।’ সিমোনা হ্যালেপের টেনিসের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল শৈশব পেরুতে না পেরুতেই। খুব অল্প বয়স থেকেই টেনিসের প্রতি ছিল তার বাড়তি টান। ছয় বছর বয়সে তো টেনিস কোর্টে নিয়মিতই অনুশীলন শুরু করে দেন রোমানিয়ার এই প্রতিভাবান বালিকা। সেই হ্যালেপই গত কয়েক মৌসুম ধরে টেনিস বিশ্বের আলোচিত নাম। ২০১০ সালে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০০ জনের তালিকায় উঠে এসেছিলেন তিনি। পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন ২০১৪ সালে। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে রাশিয়ান তারকা মারিয়া শারাপোভার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় হ্যালেপের। তারপরও ধমে যাননি পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার এই এ্যাথলেট। তার জীবনের আরেকটি স্মরণীয় বছর ছিল ২০১৭। আবারও ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালের টিকিট কেটেছিলেন তিনি। কিন্তু এবারও সেই পুরনো চিত্রনাট্য। তবে হারলেও সে বছরে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানটি দখল করে নিয়েছিলেন হ্যালেপ। ২০১৮ সাল তো স্বপ্নের মতোই কেটেছিল। সব আফসোস মিটিয়ে যে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ড¯ø্যাম জয়ের স্বাদ পান সিমোনা হ্যালেপ। নারী এককের ফাইনালে সেবার যুক্তরাষ্ট্রের ¯েøায়েন স্টিফেন্সকে হারিয়ে দেন রোমানিয়ান তারকা। প্রথম সেটে ৬-৩ গেমে হারলেও, দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে, পরের দুই সেট ৬-৪ ও ৬-১ গেমে জিতে নেন তিনি। এর আগে ৩বার গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনালে উঠেও ছোঁয়া হয়নি ট্রফিটা। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালের মঞ্চ থেকেই দুইবার খালি হাতে ফিরেন তিনি। এই এক আফসোস হয়তো তাড়িয়ে বেড়াতো রোমানিয়ান তারকাকে। অনুভূতিগুলো ধরা বা ছোঁয়া গেলে হয়তো তা জমিয়ে রাখতে চাইতেন সযতেœ। আক্ষরিক অর্থে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু জীবনের প্রথম ফ্রেঞ্চ ওপেনের রূপালী ট্রফি জয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তে মনের স্পন্দন আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভালবাসাও জমা পড়েছিল এই টেনিস সুন্দরীর সিন্দুকে। তার পরের বছরে উইম্বল্ডনেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রোমানিয়ান তারকা। এরপর থেকেই অবশ্য নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন সিমোনা হ্যালেপ। করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় ঘরবন্ধী ছিলেন সাবেক এই শীর্ষ তারকা। এই সময়ে অনেক খেলোয়াড় জীবনের ঝুকি নিয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করলেও হ্যালেপ কোর্টে নেমেছিলেন একটু বেশি সময় নিয়েই। তথাপি, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। করোনা থেকে মুক্ত হয়ে আবার কোর্টে নামলেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি হ্যালেপ। সর্বশেষ ইউএস ওপেনেও ব্যর্থ ছিলেন তিনি। চোট আর পারফর্মেন্সের নিঃষ্প্রভার প্রভাব পড়েছে তার র‌্যাঙ্কিংয়েও। সর্বশেষ সোমবার প্রকাশিত বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন ধাপ অবনতি হয়েছে তার। এর ফলে র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৪ নম্বরে নেমে গেছেন সিমোনা হ্যালেপ। নতুন প্রকাশিত এই র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ চারে কোন পরিবর্তন নেই। এ্যাশলে বার্টি, এ্যারিনা সাবালেঙ্কা, পিসকোভা, সিতোলিনারা যথাক্রমে শীর্ষ চারের অবস্থান ধরে রেখেছেন। কিন্তু শীর্ষ পাঁচ থেকে ছিটকে গেছেন নাওমি ওসাকা। তিন ধাপ অবনমন হওয়ায় আটে নেমে গেছেন জাপানি তারকা। উন্নতি ঘটেছে বারবোরা ক্রেসিকোভার। দুই ধাপ এগিয়ে পাঁচে উঠে এসেছেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের চ্যাম্পিয়ন। এক ধাপ এগিয়ে ক্যারিয়ার সেরা র‌্যাঙ্কিংয়ের ২২ নম্বরে উঠে এসেছেন এমা রাদুকানু। বর্তমান বিশ্ব টেনিসে আলোচনার শীর্ষে অবস্থান এখন এই ব্রিটিশ তারকারই। কেননা, সদ্য সমাপ্ত ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতেই যে বাজিমাত করেছেন ১৮ বছরের এই তরুণী। ইতিহাসের প্রথম কোয়ালিফায়ার হিসেবে মেজর কোন শিরোপা জয়ের নজীর গড়েন তিনি। এর ফলেই এক লাফে শীর্ষ ২৫ এ ঢুকে যান ব্রিটিশ তরুণী। টেনিস ইতিহাসেই যা বিরল ঘটনা! এ বছর র‌্যাঙ্কিংয়ে ঢুকেছিলেন রাদুকানু। জানুয়ারিতে ছিল ৩৪৫। উইম্বলডনে নাম লেখানোর পর ৩৩৮। সেখানে চতুর্থ রাউন্ডে ওঠায় ১৭৯। এরপর ইউএস ওপেনে খেলার যোগ্যতা অর্জন করায় র‌্যাঙ্কিং দাঁড়ায় ১৫০। সবশেষে ইউএস ওপেন জিতে এক লাফে ২৩ নম্বরে চলে উঠে যান তিনি। সোমবার সেখান থেকে একধাপ এগিয়ে উঠে যান ২২ নম্বরে। এরপর থেকেই বোদ্ধারা মনে করছেন তাহলে কী টেনিসে আরেক নতুনের পদধ্বনি? প্রশ্নটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এখন থেকে ২২ বছর আগে এই ইউএস ওপেনের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই অবাছাই সেরেনা উইলিয়ামস ও মার্টিনা হিঙ্গিস। সেই ম্যাচ জেতেন সেরেনা। এরপর তারা দু’জন তরতর করে টেনিসের তারকা বনে যান। এবার লেইলা আর রাদুকানু খেললেন ফাইনাল। তারাও ছিলেন অখ্যাত।
×