ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিরনিন্দ্রায় ‘গুরুখ্যাত’ জালাল আহমেদ চৌধুরী

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

চিরনিন্দ্রায় ‘গুরুখ্যাত’ জালাল আহমেদ চৌধুরী

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত কয়েকদিনে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সবাইকে যদিও আশ্বস্ত করেছিলেন নিজে থেকে যে, ফিরে আসবেন। মানসিক শক্তি থাকলেও সৃষ্টিকর্তার ডাকেই সাড়া দিতে হয়েছে বরেণ্য ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব জালাল আহমেদ চৌধুরীকে। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভুগে অবশেষে ৭৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। তবে ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ, ক্রিকেটের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করা এ ক্রিকেটপ্রেমী জীবদ্দশায় ক্রিকেটের স্বার্থে, ক্রিকেটের জন্য যত কীর্তি রয়েছে তার সেটি নিশ্চিতভাবেই ঘোষণা দেয় ‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই’। বাংলাদেশের ক্রিকেটে খেলোয়াড়, কোচ, সংগঠক, সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে তার কীর্তি সমূহের নমুনা থেকে যাবে আজীবন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল তার মৃতু্যৃতে শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ছাড়াও শোক জানিয়েছে ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব, ক্রীড়া সাংবাদিকদের সংগঠন বিএসপিএ, বিএসজেএ ও এবং বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন ও ক্লাবসমূহ। চলতি মাসের প্রথম দিনই শ্বাসকষ্টের কারণে জালাল আহমেদ চৌধুরীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসা নিয়ে বাসায়ও ফেরেন। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আবারও তাকে হাসপাতালে নিতে হয়। গত ৫ দিন নিবিড় পরিচর্যায় (আইসিইউ) রাখতে হয়েছে ভেন্টিলেশনে। শেষ পর্যন্ত ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টে ভুগে চির বিদায় নিলেন জালাল আহমেদ। তিনি ছিলেন সত্যিকারের অলরাউন্ডার। একাধারে ক্রিকেটার, কোচ, সংগঠক, সাংবাদিক এবং দুর্দান্ত ক্রীড়ালেখক ছিলেন জালাল আহমেদ চৌধুরী। একজন অলরাউন্ডার হিসেবে তাকে তাই শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাই। ষাট দশকের মাঝামাঝি থেকে সত্তর দশকের মাঝ সময় পর্যন্ত জালাল খেলেছেন দেশের শীর্ষ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার মঞ্চ ঢাকা ক্রিকেট লীগে। খেলোয়াড় হিসেবে শুরু করেছিলেন উদিতি ক্লাবে। ওপেনিং এ ব্যাটসম্যান ছিলেন একজন উইকেটরক্ষক। তিনি পরবর্তীতে ইয়াং প্যাগাসাস, টাউন ক্লাব ও ধানমÐি ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন জালাল আহমেদ। ১৯৭৭ সালে যখন প্রথমবার দেশের বাইরে খেলতে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় দল, তখনও তিনি ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) বিপক্ষে খেলতে। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষে জালাল আহমেদ চৌধুরী কোচিংয়ে মনোনিবেশ করেন। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিকে উত্তীর্ণ হয়েও ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসায় ক্রিকেট মঞ্চ ছাড়েননি। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটি যেমন ‘সোনার হরিণ’ তেমনি অনেক বড় স্বপ্ন আমেরিকা গিয়ে থাকার সুযোগ পাওয়া। কিন্তু জালাল যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীন কার্ডের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য কাজ করতে মনোনিবেশ করেন। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, গোলাম ফারূক সুরু, জিএম নওশের প্রিন্স, তুষার ইমরান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ আশরাফুলদের গড়ে তোলার কারিগর ছিলেন কোচ জালাল আহমেদ। ১৯৭৯ সালে তিনি ভারতের পাতিয়ালা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস থেকে ক্রিকেট কোচিংয়ের ডিপ্লোমায় প্রথম স্থান লাভ করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলোতে কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। দেশের দুই ঐতিহ্যবাহী ও শীর্ষ ক্লাব আবাহনী ও মোহামেডানের পাশাপাশি ভিক্টোরিয়া, কলাবাগান, সাধারণ বীমা, আজাদ স্পোর্টিং, পিডবিøউডি ও ধানমÐি ক্লাবের কোচ ছিলেন তিনি। এভাবে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোচ হিসেবে সুনাম কুড়াতে থাকেন। তাই বিভিন্ন সময়ে জালাল আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে কাজ করেছেন।
×