ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মৃতদেহের সূত্র ধরেই ধরা পড়ল মেট্রোরেলের চোর চক্র

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

মৃতদেহের সূত্র ধরেই ধরা পড়ল মেট্রোরেলের চোর চক্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটি লাশের রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়েই ধরা পড়ল মেট্রোরেল প্রকল্পের চোর চক্র। জানা গেল, সেই মৃতব্যক্তিও ওই চোর চক্রের সদস্য। শুধু তাই নয়, চুরি করতে গিয়েই বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় ওই তরুণ। রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর মোঃ নাজমুল (১৮) নামে এক তরুণের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই তরুণের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে মালামাল চুরির তথ্য পায় পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব। তদন্তে র‌্যাব জানতে পেরেছে, তুরাগ এলাকা থেকে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় ওই তরুণ। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে। ওই প্রকল্পগুলো চলাকালে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ সাধারণত খোলা জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয়। একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্র সুকৌশলে সেই মালামাল চুরি করত। তিনি বলেন, নিহত নাজমুলও সংঘবদ্ধ এ চোর চক্রের সদস্য। চক্রটির আরও দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। গত সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর পল্লবী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ আশিক (১৯) ও মোঃ হারুন (৪০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চোরাইকৃত মালামালসহ একটি পিকআপ ও সিএনজি অটোরিক্সা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুলের মৃত্যু ও প্রকল্পের মালামাল চুরি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, মূলত এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়েছে নিহত নাজমুলের পরিবারের একটি সাধারণ ডায়েরি থেকে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর নাজমুল তার মিরপুরের বাসা থেকে কাজের সন্ধানে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর জানা যায়, ডিএমপির তুরাগ থানা এলাকায় একটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে মৃতদেহটি নাজমুলের বলে তার বাবা শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই র‌্যাবের একটি দল ছায়াতদন্ত শুরু করেন। গ্রেফতার দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানায়, নিহত নাজমুল ও তারা দুজন (আশিক ও হারুন) রাসেল এবং শামীম নামের আরও দুজনের সঙ্গে মিলে এ চোরাকারবারি করত। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাসেল ও শামীম নাজমুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। ওই রাতে আশিকও তাদের সঙ্গে চুরির কাজে যোগ দেয়। যদিও সেদিন তাদের সঙ্গে ছিলেন না হারুন। তুরাগে বিদ্যুতের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্টে ঘটনাস্থলেই নাজমুলের মৃত্যু হয়। পরে তারা নাজমুলকে সেখানে রেখেই পালিয়ে যায়। র‌্যাব বলছে, চক্রটি বেশকিছু দিন ধরে মেট্রোরেলের মালামালসহ অন্যান্য সরকারী কাজের মালামাল এবং বৈদ্যুতিক তার চুরির কাজ করে আসছিল। র‌্যাবের অভিযানে আশিক গ্রেফতার হলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। তারা ঢাকা মহানগরীর পল্লবী থানাধীন এলাকায় পরস্পরের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় লোহা, ইস্পাত, তার, মেশিন সুকৌশলে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে আশিক স্বীকার করেছে। র‌্যাব অধিনায়ক মোজাম্মেল হক আরও বলেন, এ চোরাই চক্রটিসহ এমন আরও কয়েকটি চোর চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে আইনানুগ কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতেও এরূপ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি দলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৪ এর জোরালো অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
×