ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশেই তৈরি হচ্ছে ডলহাউস

শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় মানসিক বিকাশে সহায়ক

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় মানসিক বিকাশে সহায়ক

তাহমিন হক ববী ॥ করোনা মহামারী সবার জীবনেই বিপত্তি, বেদনা নিয়ে এসেছে। শিশুদের নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরাও। খেলাধুলা বা মাঠে গিয়ে শিশুটির মনকে প্রফুল্ল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। হাঁফিয়ে উঠছে তারা। তাদের মেধা বিকাশের উপায় খুঁজছেন অভিভাবকরা। ডেকোরেটিভ আর্টস শিশুদের মনকেও আকৃষ্ট করে। ঘরের ভেতর ‘খেলাঘর’। যাকে ইংরেজীতে বলা হয় ‘ডলহাউস’। এই ডলহাউস আকর্ষণ করে শিশুদের। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজাইনের ডলহাউস দেখা যায়। ফলে বিদেশ থেকে অনেকে এই ডলহাউস সংগ্রহ করছেন। অথচ এই ডলহাউস এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। করোনা সঙ্কটে চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টে প্রশিক্ষিত আনিকা নূর ডলহাউসের নিপুণ কারিগর হয়ে উঠেছেন। বিদেশ থেকে আনা আকাশচুম্বী দামের কারণে ডলহাউস বা খেলাঘর অনেকের কাছে আনন্দ অধরাই ছিল এতদিন। শিশুদের চাহিদা বুঝতে পারায় তাদের মনের মতো করেই উন্নতমানের ও কমমূল্যে ডলহাউস তৈরি করছেন তিনি। বিদেশ থেকে আনা ডলহাউসের চেয়ে আনিকা নূরের ডলহাউস অনেকগুণ উন্নত ও টেকসই। দামেও কম। করোনাকালে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গৃহবন্দী শিশুদের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসবিহীন সুন্দর সময় কাটাতে খুবই উপযোগী। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ডলহাউস দিয়ে খেলাচ্ছলে শিশুদের মোটর স্কিলস, সামাজিক দক্ষতা, মনোযোগী হওয়ার প্রবণতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। শিশুদের জন্য নিরাপদ ম্যাটেরিয়ালে তৈরি এসব ডলহাউস স্মার্ট ডিভাইস থেকে লম্বা সময় দূরে রাখছে শিশুদের, জোগাচ্ছে শিক্ষামূলক বিনোদন। নীলফামারী শহরের সবুজপাড়ায় জন্ম নেয়া আনিকা নুর এখন রাজধানীর বাসায় গড়ে তুলেছেন ফেসবুক ভিত্তিক অনলাইন উদ্যোগ ‘আর্টজেনিকস বাই আনিকা’ (ধৎঃমবহরপং নু ধহরশধ)। আনিকা নুর জানান, ডলহাউসগুলো আসবাব আর তৈজসের নিখুঁত মিনিয়েচারে সাজানো। অবিকল বাস্তব বাসাবাড়ির মতো খেলাঘর হিসেবে তৈরি করছি, যা দেখলে বড়রাও চমৎকৃত হন। স্বপ্নের এই খেলাঘর কেবল শিশুর ঘরের শোভাই নয়, হতে পারে ডিভাইসমুক্ত সৃজনশীল সময় কাটানোর অনন্য সঙ্গী। আনিকা আরও বলেন, স্বপ্নবিলাসী, সৃষ্টিশীল মনের শিশুদের জন্য খেলাঘর তৈরি করেন তিনি। আর এর মধ্য দিয়ে আশৈশব লালিত অধরা ডলহাউস, স্বপ্ন পূরণের পথ দেখায়। তিনি বলেন, শিশুর চাহিদা বুঝে তার উপযোগী ডলহাউস তৈরি করা হয়। খেলাঘরের কাঠামো তৈরি করতে ৫ মিমি আর আসবাবের ক্ষেত্রে ৩ মিমি পরিমাপের প্লাস্টিক উড ব্যবহার করা হয়। মিনিয়েচারের আসবাব, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী (ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন), এমনকি ওয়াশরুমের সামগ্রীও গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয়। অনেক সময় বিভিন্ন প্রিন্টেড স্টিকার ও রেডিমেড মিনিয়েচার সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাচ্চাদের উপযোগী ননস্টিক উপকরণ ব্যবহার করা, যাতে তা থেকে কোন রকম দুর্ঘটনা বা স্বাস্থ্যঝুঁকির অবকাশ না থাকে। দুই ফুট উচ্চতার একরঙা মৌলিক কিছু ডলহাউস আনিকা নুর এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করেন। আবার বহুতল ভবনের আদলে বানানো, সুইমিংপুল বা খুঁটিনাটি আসবাব নিয়ে নয়নাভিরাম লাইটিংয়ের ডলহাউসগুলোর দাম তিন হাজার টাকা থেকে শুরু। ডলহাউস দিয়ে শুধু মেয়েরা খেলবে, ছেলেরা বল বা গাড়ি নিয়ে সময় কাটাবে, এই ব্যাপারগুলো এখন ঘুণে ধরা, বাস্তবতা বিবর্জিত ধারণা বলে স্বীকৃত। ছেলেদেরও শৈশবে রান্নাবাটি খেলা, ডলহাউস ইত্যাদি দিয়ে খেলার বিষয়ে সমান স্বাধীনতা দেয়া উচিত। গাড়িপ্রেমী শিশুদের জন্য এই উদ্যোক্তা তৈরি করেন অসাধারণ কিছু বহুতল পার্কিং এরিয়া, গ্যারেজ ও কারওয়াশের আদলে খেলাঘর। এয়ারপোর্টের অবিকল মিনিরূপও তৈরি করেছেন উড়োজাহাজপ্রেমী শিশুদের জন্য। এক সময় ডলহাউস খেলার জন্য তৈরি করা হতো না। গৃহস্থালি কায়দাকানুন শেখানোর জন্যই ক্ষুদ্র রূপ দেয়া হয়েছিল। মেয়েদের ব্যবহার্য আসবাব, তৈজস, ঘরের নানা সামগ্রী অবিকলভাবে ছোট করে বানানো হতো। যাকে বলা হতো মিনিয়েচার। সতেরো শতকে ইংল্যান্ড, হল্যান্ড আর জার্মানিতে প্রচলন ঘটেছিল এই ডলহাউসের।
×