ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ ফেব্রæয়ারি

নতুন ইসি গঠনে জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

নতুন ইসি গঠনে জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি

অপূর্ব কুমার ॥ সার্চ কমিটির মাধ্যমেই আগামী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পথে হাঁটছে সরকার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সাড়ে পাঁচ মাস মেয়াদ রয়েছে। তাদের মেয়াদ শেষে নতুন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন হচ্ছে জানুয়ারি মাসে। সেই কমিটির বাছাই করা নামের তালিকা থেকেই সাংবিধানিক সংস্থা ইসিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ দেয়ার জন্য আইন করার কথা বলা আছে। কিন্তু ইসি গঠনের আইনটি সরকার এখনও করতে পারেনি। এছাড়া আইন করে ইসি গঠনের পর্যাপ্ত সময়ও সরকারের হাতে নেই। তবে আগামীতে দ্রæত সময়ের মধ্যেই আইন প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। এই আইন প্রণয়নে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আইন না থাকায় ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করে থাকেন। এটাও আইনসিদ্ধ। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। কমিশনের গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন”। সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রপতি সবসময় সিইসি ও ইসি নিয়োগ দিলেও গত ২০১২ সালে কমিশন হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। ওই সময় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশন গঠনের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির; সংবিধানে বলা আছে, একটি আইনের অধীনে তিনি এই নিয়োগ দেবেন। সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঠিক করে দেবে না, তারা রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করতে কিছু নাম বাছাই করে দেবে। রাষ্ট্রপতি তা থেকে নিয়োগ দেবেন। স্বাধীনতার পর ১২ জন সিইসি ও ২৭ জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পেয়েছেন। গত সময়ের মতো এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য আগামী জানুয়ারিতে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এরপরে গঠন হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে ইসি গঠন নিয়েই আলাপ-আলোচনা চলছে। বিশেষ করে কোন্ প্রক্রিয়ায় ইসি গঠন হবে সেটি আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনের মাধ্যমে না গত দুই মেয়াদের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমেই সেটি নিয়েও জোর আলোচনা চলছে। বিভিন্ন দলের নেতারা ইসি গঠন নিয়ে মতামত দিচ্ছেন। সরকারী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত বারের মতো এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এবারও সবরকম গ্রহণযোগ্য পন্থায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। সেতুমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা জানেন, গতবারও রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। সার্চ কমিটি গঠন করার পর সেখানে বিএনপির প্রতিনিধি ছিল। তাদেরও কিন্তু এখন একজন আছে। এবারও সবরকম গ্রহণযোগ্য পন্থায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি এখনও ইসি গঠন নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে না আসলেও বর্তমান পদ্ধতিতে ইসি গঠনের সমালোচনা করেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি এখন ইসি গঠনের বিষয়ে ভাবছে না। তবে আগের পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই আমরা এ বিষয়ে সুর্নিষ্ট প্রস্তাব দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেব। আমরা আগেরবারও রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছিলাম। বর্তমানে বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচন কিভাবে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে করা যায় সেই বিষয়েই ভাবছে। ইসি গঠনে সার্চ কমিটির বিষয়ে জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করবে সরকার। তবে এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বাধ্যবাধকতাসহ সর্বজন স্বীকৃত ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে যে রীতি চালু আছে সেটি হলো, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সার্চ কমিটি গঠন। আমি মনে করি, আইনগত কাঠামোর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব। আর নির্বাচন কমিশনে যারা থাকবেন, তারা যেন সমালোচনার উর্ধে থাকেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ২০১২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন নির্বাচন কমিশন। এরপরে ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদও একই পদ্ধতি অনুসরণ করেন। তবে ২০১২ সালে চার সদস্যের সার্চ কমিটির পরিবর্তে ছয় সদস্যের গঠন করা হয়। গত ২০১২ সালে নতুন ইসি গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেন, ২২ জানুয়ারি গঠন করা হয় সার্চ কমিটি। সে সময় সার্চ কমিটির আহŸানে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল নতুন কমিশনের জন্য তাদের পছন্দের ব্যক্তির নামের তালিকা দিলেও বিএনপি দেয়নি। ২২ জানুয়ারি গঠনের পর ৭ ফেব্রæয়ারি ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছিল। তার মধ্য থেকে পাঁচজনকে ৮ ফেব্রæয়ারি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপ্রধান। কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে যে সুপারিশ জমা দেয়, তাতে সিইসি ও চার কমিশনার নিয়ে পাঁচটি পদের জন্য ১০টি নাম আসে। তার মধ্য থেকেই পাঁচজনকে বেছে নেন রাষ্ট্রপতি। পরবর্তীতে নতুন ইসি গঠন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। অধিকাংশ দলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের সুপারিশ তৈরির জন্য ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করার সময়সীমা দেয়া হয় সার্চ কমিটিকে। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করার পরে ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের হাতে সেই তালিকা তুলে দেয় সার্চ কমিটি। এরপরে ওইদিন নতুন ইসি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। পরে ১৫ ফেব্রæয়ারি শপথ নেন সিইসি কে এম নুরুল হুদাসহ নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদস্যরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। সেই হিসেবে আগামী ১৫ ফেব্রæয়ারি তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। তাদের জায়গায় সার্চ কমিটির সুপারিশে নতুন ইসি গঠন করা হবে। আপাতত দেশের রাজনৈতিক দলগুলো জানুয়ারিতে গঠন করতে যাওয়া সার্চ কমিটির দিকেই নজর রাখছে।
×