ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে অপরিবর্তিত

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমল

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ছয় বছর পর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমালো সরকার। সঞ্চয়পত্রে যাদের ১৫ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগ আছে তাদের মুনাফার হার দুই শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগের নিয়মেই তারা মুনাফা পাবেন। মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যারা নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনবেন, শুধু তাদের জন্য পরিবর্তিত এ হার কার্যকর হবে। আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি পুনর্বিনিয়োগ করলে তখন নতুন মুনাফার হার কার্যকর হবে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয়ের জন্য নতুন এ মুনাফার হার প্রযোজ্য হবে। প্রজ্ঞাপন নির্দেশনা অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এখন থেকে যারা সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করবেন তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ হারে। ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক তিন বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকার বেশি তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ৯ শতাংশ হারে। পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে এত দিন ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ হারে মুনাফা দেয়া হতো। এখন এ সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ ১৫ লাখ টাকার বেশি তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে। ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে এ হার হবে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। পাঁচ বছর মেয়াদী এ সঞ্চয়পত্রে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এখন এ সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার কমিয়ে করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ হার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবে বর্তমানে মুনাফার হার সাড়ে ৭ শতাংশ। এতে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে তিন বছর মেয়াদী হিসাবে বর্তমানে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে হবে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়। ওই সুদহারই এত দিন বহাল ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেটের আয়-ব্যয়ের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। প্রবাসীদের বন্ডের মুনাফাও কমেছে ॥ প্রবাসীদের বন্ডের মুনাফার হার কমিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রের মতো প্রবাসীদের বন্ডে যাদের ১৫ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগ আছে তাদের মুনাফার হার কমানো হয়েছে। যারা নতুন করে বিনিয়োগ করবেন, শুধু তাদের জন্য পরিবর্তিত এ হার কার্যকর হবে। আগের কেনা বন্ডে মেয়াদ পূর্তি না হওয়া পর্যন্ত পূর্ববর্তী হারে মুনাফা পাবেন প্রবাসীরা। মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি প্রবাসীদের বিভিন্ন বন্ডের মুনাফার হার কমানো হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরা ডলারে তিনটি ক্যাটাগরির বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এগুলো হলো : ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। এসব বন্ড বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউস, দেশী ব্যাংকের বিদেশী শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখায় পাওয়া যায়। এসব বন্ডের বিপরীতে দেশী ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন প্রবাসীরা। বিনিয়োগ করা অর্থ চাইলে আবার বিদেশেও ফেরত নেয়া যায়। এসব বন্ডে বিনিয়োগ করে সিআইপি সুবিধার পাশাপাশি আয়ে করমুক্ত সুবিধাও পাওয়া যায়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেসব প্রবাসী নতুন করে বন্ড কিনবেন, শুধু তাদের জন্য পরিবর্তিত এ হার কার্যকর হবে। আগের কেনা প্রবাসী বন্ডের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আগের হারে মুনাফা পাবেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, পাঁচ বছর মেয়াদী ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়া যায় ১২ শতাংশ। এখন থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার হবে ১১ শতাংশ। ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে ১০ শতাংশ। আর ৫০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার হবে ৯ শতাংশ। ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড তিন বছর মেয়াদী। এই বন্ডে বিনিয়োগে মুনাফার হার পরিবর্তন করা হয়নি। বর্তমানে এই বন্ডে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার সাড়ে ৭ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদী ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডেরও মুনাফার হার পরিবর্তন করা হয়নি। মেয়াদ শেষে এ বন্ডের মুনাফার হার ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
×