ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যশোরে একসঙ্গে ৪ সন্তানের জন্ম

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

যশোরে একসঙ্গে ৪ সন্তানের জন্ম

অনলাইন রিপোর্টার ॥ যশোরে লাক্সমিয়া খাতুন (৩০) নামে এক নারী একসঙ্গে চারটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে লাক্সমিয়া চার সন্তান প্রসব করেন। চার সন্তানের মধ্যে দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে। একদিকে বিয়ের দীর্ঘ আট বছর সন্তান না হওয়া; অন্যদিকে পরপর চারটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ায় শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একসঙ্গে চার সন্তান জন্মের খবরে হসপিটালে আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন রোগীর স্বজনেরা ভিড় করছেন। বর্তমানে ওই চার নবজাতক ও তাদের মা পুরোপুরি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বজনেরা জানান, ২০১৪ সালে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় জামদিয়া ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামের আব্দুর রহমান গাজীর ছেলে আবুল বাশারের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের চাড়াভিটা গ্রামের ইমামুল খা’র মেয়ে লাক্সমিয়া খাতুন (৩০) বিয়ে হয়। বিয়ের আট বছর পার হলেও পরিবারের কোন অতিথি আসেনি। এনিয়ে উভয় পরিবারে হতাশা আর অশান্তি বিরাজ করছিলো। সন্তানের প্রত্যাশায় তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অবশেষে হতাশার অবসান ঘটিয়ে সোমবার সকালে শান্তির বার্তা বয়ে আনে চার নবজাতক। এদিন সকালে যশোর শহরের বেসরকারি ক্লিনিক কুইন্স হসপিটালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে পরপর চারটি সন্তান জন্ম দেন। যশোর মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নার্গিস আক্তার তার তার সিজার করেন। এদিকে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল জুড়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। একদিকে বিয়ের দীর্ঘ আট বছর সন্তান না হওয়া অন্যদিকে পরপর চারটি সন্তান। হাসপাতালে কর্মকর্তা কর্মচারী থেকে শুরু করে দম্পতির স্বজন ও উপস্থিত লোকজনের মধ্যে অন্যরকম অনুভুতি লক্ষ্য করা গেছে। আনন্দের আতিশয্যে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় প্রণোদিত হয়ে অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বরত সেবিকা ও দম্পতিকে এবং তাদের স্বজনের মিষ্টি মুখ করান। নবজাতকদের চাচা বাহারুল ইসলাম বলেন, সন্তান না হওয়াই ভাই ভাবীদের সংসারে শান্তি ছিলো না। প্রায় সাংসারিক ঝগড়া লেগেই থাকতো। যশোর-নড়াইল বিভিন্ন জায়গায় কবিরাজ ডাক্তারের চিকিৎসা করানো হয়েছে। তাতেও কোন সুফল মেলেনি। আল্লাহ ইচ্ছায় দীর্ঘদিন পর প্রথমবারের মতো আমাদের বংশরের প্রদীপ আসলো। আমাদের পরিবার ও ভাবীদের পরিবারেই এখন ঈদের চেয়ে খুশি খুশি লাগছে। সন্তান না হওয়া যন্ত্রণায় দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন নওয়াপাড়া বন্দর এলাকার জাহাজ শ্রমিক আবুল বাশার। আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, সন্তান না হওয়া যন্ত্রণা যে কতো কষ্টের তা বুঝাতে পারবো না। আজ জীবনের অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। আপনারা সবাই সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। নবজাতকের মা লাক্সমিয়া খাতুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার কোনো সন্তান হতো না। চিকিৎসায় আল্লাহর রহমতে আমাদের ঘর আলো করে সন্তান দিয়েছে। করোনার মধ্যে সন্তান পৃথিবীতে আসবে এটা ছিলো আমাদের কাছে বড় টেনশনের ব্যাপার। কিন্তু সব টেনশন দূর করে আনন্দের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে চারটি সন্তান। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। পাশাপাশি ধন্যবাদ জানাই সিজারিয়ান অপারেশনের গাইনি চিকিৎসক নার্গিস আক্তার ম্যাডামকেও। যশোর মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নার্গিস আক্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই দম্পতির কোন সন্তান হয় না। জেলার বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েও তাদের কোনো বাচ্চা হয় না। দেড় বছর আগে আমার কাছে চিকিৎসার পরামর্শ নিতে আসে। এই দম্পতির দুই জনেই কিছু সমস্যা ছিলো। চিকিৎসায় তিন মাসেই এই গৃহবধূর বাচ্চা কনসেপ্ট করে। তার দুই মাস পরেই জানতে পারি ওই নারীর চারটা বাচ্চা হবে। অনেক সময় একাধিক বাচ্চা হলে ২-১ মারা যায়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এই নারীর কোন সমস্যা হয়নি। রবিবার তাকে সিজারের মাধ্যমে দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে সন্তান হয়েছে। তারা সবাই ভালো রয়েছে। নবজাতকদের আলাদা আলাদা ফুল ছিলো, চারটা বাচ্চাই একই রকমের ওয়েট হয়েছে।
×