ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এক বিদ্যালয়ে ৮৫ শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ে উপস্থিতি কম, শিক্ষকরা হতাশ

কুড়িগ্রামে কোন ক্রমেই থামছে না বাল্যবিয়ে

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

কুড়িগ্রামে কোন ক্রমেই থামছে না বাল্যবিয়ে

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৫ জন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ে সম্পন্ন। বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশ। তারা কম বয়সেই এখন স্বামীর বাড়ীতে ঘর-সংসার করছে। সচেতন মহলের দাবী দারিদ্রতা, যোগাযোগ বিচ্ছন্নতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য এউপজেলায় বাল্যবিয়ের হার হু-হু করে বেড়েই চলেছে। কোন ক্রমেই ঠেকানো যাচ্ছে না বাল্যবিবাহ। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মোঃ মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৩৪৫ জনের মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিয়ে হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে-৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২, সপ্তম শ্রেণীতে ১১, অষ্টম শ্রেণী ১৭, নবম শ্রেণীতে ২৮, দশম শ্রেণী ১৪ ও চলতি বছরের এস এস সি পরীক্ষার্থী ১৩ জন। করোনা মহামারীর কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে এই বিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৭০- থেকে ৯০ শতাংশ হলেও এখন উপস্থিতি হচ্ছেন ৪০-৫০ শতাংশ। ঐ প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুপুর ,আশামনি,নাছিমা ও আতিকা খাতুনসহ অনেকেই জানান, তারা ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনেই তাদের ১৭ জন বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার খবর শুনে তাদের সবার মন খারাপ হয়ে যায়। তারাও খুব দুচিন্তায় ভুকছেন।একই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমী আক্তার বলেন, অনেক পরস্কুল খুললো সব বান্ধবীর সঙ্গে মজা করবো,আনন্দ করবো কি আনন্দ। কিন্তুসেটা আর হলো না। স্কুল এসে দেখলা আমার ২৮ জন বান্ধবী স্কুলে আর আসলে না। খুবেই খুবেই মন খারাপ হলো। পরে জানতে পারি আমার ২৮ জন বান্ধবীসহ আমার স্কুলের ৮৫ থেকে ৯০ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। জানি না আমার ভাগ্যে কি হবে। ঐ প্রতিষ্ঠানের বাল্যবিয়ের শিকার নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিথী খাতুনের বাবা ভ্যান চালক বাদশা মিয়া জানান, বাহে আমরা গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে জীবন-জীবিকা করি। জানেন তো গরীব মানুষের দোষ বেশি। ভাল বর পেয়েছি তাই বিয়ে দিয়েছি। একই প্রতিষ্ঠানের বাল্যবিয়ের শিকার নিলুফা ইয়াসমিনের বাবা সাইকেল মেকার বাবলু মিয়া জানান,দেখতেছেন তো কোন রকম মানুষের সাইকেল ভাল করেই যা পাই তা দিয়েই কোন রকমেই চলে সংসার। দেশে করোনা আসিয়া আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। কোন সহযোগীতা পাইনি। দেখতে দেখতে মেয়েটাও বড় হয়ে গেল দুশ্চিন্তায় যেন শেষ নেই।তাই ভাল বর পেয়েছি সাথে সাথে মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি। বাল্যবিয়ে দেওয়াটা আমরা ভুল করেছি। এ ব্যাপারে বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মতিউর রহমান খন্দকার জানান, বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় আমরা শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেছি। যে সব শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে আমরা তাদের বাড়ীও যাচ্ছি। ঐ সব শিক্ষার্থী যাতে স্কুলে আসে সে ব্যাপারে তাদের অভিভাকদের সচেতন করছি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা পড়াশুনা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে পরিবার তাদের বাল্যবিয়ে দিয়েছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় মূখি করার জন্য কাজ করছি। প্রধান শিক্ষক করোনার আগেই গত দেড় বছরেই তার স্কুলের ২৫ থেকে ৩০ জন্য শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন। কিন্তু করোনা কালে খবর না পাওয়ায় গোপনে তার প্রতিষ্ঠানের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের শিকার হন। ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.খয়বর আলী জানান করোনার কারণে আমার ইউনিয়নে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। আমরা এজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। যাতে প্রশাসনের সহযোগী আমরা পাড়ায় মহল্লায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মতবিনিময় সহ সচেতন মূলক প্রচার চালানো হবে। ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আব্দুল হাই জানান বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের তথ্যটি পেয়েছি। এ উপজেলায মোট ৭৩ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। বাল্যবিয়ের প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষকদেও নিদের্শ দেয়া হয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান,তিনি বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি শুনেছেন। বাল্যবিয়ে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সেবিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরণে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাছ শুরু করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজর প্রতিনিধিকে নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় মুখি করার কাজ করা হচ্ছে বলে জানান।
×