ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নামিদামি অফিসই ছিল তাদের টার্গেট

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

নামিদামি অফিসই ছিল তাদের টার্গেট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নামিদামি অফিস, বহুতল ভবন ও মার্কেটে চুরির জন্য টার্গেট করে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র। প্রথমে দলের নারী সদস্যদের পাঠিয়ে টার্গেট করা অফিস বা ভবনে দুই থেকে তিনদিন সবকিছু রেকি করা হতো। এভাবে চুরির কৌশল রপ্ত করতো। এরপর রাতে বা সুবিধামতন সময়ে টার্গেট করা এসব অফিসের তালা, সিকিউরিটি লক, ডিজিটাল লক ও অফিস কক্ষের ড্রয়ার ভেঙে মূল্যবান মালামাল ও টাকা-পয়সা চুরি করে সুকৌশলে বের হয়ে যেতো তারা। নিরাপত্তা ও দ্রুত সটকে পড়ার স্বার্থে শুধু নগদ টাকাই চুরি করতো চক্রটি। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা প্যারাডাইস টাওয়ারে চুরির ঘটনায় সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, জামাল উদ্দিন, শফিক ভূঁইয়া ওরফে বাছা, তার স্ত্রী মুক্তা আক্তার, জসিম উদ্দীন, কাদের ওরফে কিবরিয়া ওরফে বাবু, মোঃ শাকিল ও আলামিন। এই চক্রের রেকির কাজে নিয়োজিত ছিল শফিকের স্ত্রী মুক্তা আক্তার। সোমবার রাজধানীর ডেমরা ও কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরির কাজে ব্যবহৃত হাতুড়ি, লোহার রেঞ্জ, হ্যাক্সো ব্লেড, পায়ার্স, স্ক্রু ড্রাইভার, ক্রু ড্রাইভার ও ২০টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম এসব তথ্য জানান। ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার জানান, গত ১১ জুন ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার প্যারাডাইস টাওয়ারের আটতলায় গোল্ডেন টাচ ইমপোর্ট আইএনসি অফিসে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার ছায়া তদন্তকালে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রযুক্তির সহায়তায় চুরির ঘটনায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এই চক্রের হোতা জামালের বিরুদ্ধে ১৪টি চুরির মামলা রয়েছে। তারা চট্টগ্রাম বন্দর থানা এলাকা কেন্দ্রিক চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা চট্টগ্রাম বন্দরে চুরির সঙ্গে জড়িত ও হাতেখড়ি সেখানে। সেখানে তারা তিন-চার বছর ধরে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা চট্টগ্রাম থেকে করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকায় আসে ও সুউচ্চ ভবন, মার্কেট, অফিস ও টাওয়ারে চুরি শুরু করেন। যেসব অফিসে বা মার্কেটে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই কিংবা থাকলেও মনিটরিং নেই সেসবই তারা টার্গেট করে। ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার জানান, অফিস টাইম শেষ হলে প্রথমে চক্রের সদস্যরা সুউচ্চ ভবনে খোলা থাকা অফিসে গিয়ে রিসিপশনে সময় কাটাতে থাকেন। পাশের বন্ধ থাকা অফিস রেকি (পর্যবেক্ষণ) করেন। এরপর ভবনের প্রায় সব অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অফিসের তালা, সিকিউরিটি লক, ডিজিটাল লক ও অফিস কক্ষের ড্রয়ার ভেঙে মূল্যবান মালামাল ও টাকা পয়সা চুরি করে পালিয়ে যান। চক্রের সদস্যরা আদাবর টাওয়ারের চতুর্থ তলার এক্সপার্ট গ্রুপে, কাকরাইল নাসির উদ্দিন টাওয়ারের দশম তলায় আমিন গ্রুপে, গুলশান জব্বার টাওয়ারের ১৯তলায় অ্যাসিউর গ্রুপে, বাড্ডার রূপায়ন টাওয়ারের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত সফট লিংক কোম্পানিতে ও সপ্তম তলায় অবস্থিত এক্সজিবল কোম্পানির অফিসে চুরি করেন। যারা ব্যবসায়ী কিংবা নামিদামি অফিস করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম জানান, অনেক অফিসে সিসি ক্যামেরা থাকলেও নজরদারির অভাবে চুরি হলেও চোর শনাক্ত করা যায় না। সিসি ক্যামেরা নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য একজন কর্মকর্তাকে নিয়োজিত করার পরামর্শ দেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে ডিবির যুগ্ম কমিশনার জানান, সাতজন ছাড়াও এই চক্রের আর কারা কারা জড়িত তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়া বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) কাজী শফিকুল আলমের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আছমা আরা জাহানের তত্ত্বাবধানে উত্তরা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) বদরুজ্জামান জিল্লুর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয় বলেও জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম।
×