ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চায়না দুয়ারী জাল মৎস সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

চায়না দুয়ারী জাল মৎস সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক

অনলাইন ডেস্ক ॥ চায়না দুয়ারী জাল বাংলাদেশের মৎস সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন এক ধরণের জালের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে, যা নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের মত মিহি ও হালকা, এবং এই জাল একবারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে মাছ ধরতে সক্ষম। জেলেদের অনেকে এই জাল ব্যবহার করে খুশী। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন যে এ জাল মাছসহ জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য কারেন্ট জালের চাইতেও ক্ষতিকর। নতুন এই জালের পরিচিতি চায়না দুয়ারী নামে। শুরুর দিকে মূলত পদ্মা নদীর তীর ধরে এই জালের ব্যবহার হলেও এখন সারা দেশেই, বিশেষত বড় নদীর ধারে, চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করা হচ্ছে। চায়না দুয়ারী জাল কী? এই জালের বুননে একটি গিঁঠ থেকে আরেকটি গিঁঠের দূরত্ব খুব কম, যে কারণে এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। একে চায়না জাল, ম্যাজিক জাল এবং ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয়। রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানিয়েছেন, " বাংলাদেশে যে কারণে কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ, ঠিক একই কারণে চায়না দুয়ারীও নিষিদ্ধ," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন এই মৎস কর্মকর্তা। তবে এক্ষেত্রে একটি ফাঁক থেকে যাচ্ছে। মি. সাহা নিশ্চিত করেছেন যে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জালের তালিকায় চায়না দুয়ারীর উল্লেখ নাই, যদিও আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ। "সেই সুযোগটিই অনেক জেলে নিচ্ছেন।" নাম চায়না দুয়ারী বলা হলেও এই জাল উৎপাদিত হয় বাংলাদেশেই। তবে জালের সুতা সূক্ষ্ম আর মিহি বলে অনেকের ধারণা এ সুতা চীন থেকে আমদানি করা হয়। জালের দুই মাথা খোলা বলে একে দুয়ারী বলা হয়। কেমন দেখতে চায়না দুয়ারী জাল? সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে এই জাল। প্রস্থ হবে এক থেকে দেড় ফুট, আর এর গিঁঠ হবে খুবই ক্ষুদ্র। লোহার চারকোনা রড দিয়ে অনেকগুলো ফ্রেম বানানো হয় জালের মধ্যে দেয়ার জন্য। এটি নদীর একেবারে তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং তলদেশের মাটির সাথে মিশে থাকে। ফলে কোন মাছ একবার জালে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। কেন জেলেদের মধ্যে জনপ্রিয়? এক রাতে এই জালে যে পরিমাণ মাছ উঠে তা অন্য কোন জালে উঠে না, সেই তুলনায় পরিশ্রম তেমন করতে হয় না। কিন্তু বাজারে প্রচলিত অনেক জালের তুলনায় এই জালের দাম বেশি, তাই এখনও অনেক জেলেই আবার চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহার করছেন না। কেন বিপজ্জনক এই জাল? যেহেতু এই জালে একবার ধরা পড়লে আর বের হতে পারে না, তাই অনেক বিপন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মারা পড়ে। সেগুলো আর ওইসব প্রাণীর বংশ বৃদ্ধিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই কারণে জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবার আশঙ্কা রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎসবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বিজয়া পাল বলেন, যে প্রক্রিয়ায় চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরা হয়, তার কারণে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুই ধরণের ক্ষতিই হয়। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, নদীতে চায়না দুয়ারী জাল একবার পাতা হলে তাতে মাছ, মাছের বাচ্চা বা পোনা, এবং এমনকি মাছের ডিমও উঠে আসে। আবার যত মাছ ধরা পড়ে তার সবই 'টার্গেটেড' মাছ নয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মাঝেমধ্যে কারেন্ট জালের সাথে চায়না দুয়ারী জাল আটক করে ধ্বংস করা হলেও এর ব্যবহার দিনে দিনে বেড়েই চলছে। সূত্র : (সাইয়েদা আক্তার, বিবিসি বাংলা)
×