ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়ার পথে গার্মেন্টসের কাপড় চুরি করত ওরা

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়ার পথে গার্মেন্টসের কাপড় চুরি করত ওরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে করে দেশীয় কারখানায় তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানির জন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়ার পথে চুরি করত একটি চক্র। পরে চালানটি বিদেশে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পেত বিদেশী ক্রেতারা। বহুবার এমন ঘটনা ঘটায় বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশী পোশাক পণ্য আমদানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত। বিশ্বে শীর্ষ রফতানিকারক বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ঘিরে চোর চক্রের কারণে সুনাম নষ্ট হয়ে আসছিল। ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে সংঘবদ্ধ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে দেশীয় পোশাক খাতকে হুমকির মুখে ফেললেও বরাবরই ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে সাতজনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে চক্রের লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতাররা হলো- চক্রের হোতা সাইদ, রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আলামিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল। তাদের কাছ থেকে চার হাজার ৭০৫ পিস তৈরি পোশাকসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা এবং কুমিল্লার বুড়িচং এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি তেজগাঁও বিভাগ। সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ১১ মে জয়ন্তি নিট ওয়্যার লিমিটেড তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০ পিস পণ্য শিপমেন্ট করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এজন্য বিদেশী বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ হয়। অন্যদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামক গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক ১৪৩১ কার্টুনে মোট ১৭ হাজার ১৫২ পিস বিদেশে রফতানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গণনাকালে ৫০০০ পিস মাল কম পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় পৃথক মামলা হয়। ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে গ্রেফতারকৃত চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এসব করে আসছিল। মামলা দায়েরের পর চক্রের এক কাভার্ডভ্যান চালকের ফোন নম্বর পর্যালোচনার পর চোর চক্রকে শনাক্ত করা হয়। এর হোতা সাহেদ ওরফে সিলেটী সাঈদ। তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা রয়েছে। চট্টগ্রামে ছয়টি মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছে সাঈদ। চোর চক্রের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন সময় চার থেকে পাঁচ হাজার চুরির ঘটনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য। হাফিজ আক্তার বলেন, সিলেটী সাঈদের স্ত্রী-সন্তান লন্ডনে বসবাস করেন। তার মালিকানাধীন বিশাল অট্টালিকা রয়েছে মৌলভীবাজারে। রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ। এসব যানবাহন তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করতেন গার্মেন্টস পণ্য শিপমেন্টের কাজে। নিজের ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করে ও এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের সহায়তায় সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন সাঈদ। এমনকি পণ্য চুরি করে ফের তা কোম্পানিকে পাইয়ে দিতে কৌশলে ৩/৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিত সাঈদ। তিনি কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছেন। সর্বশেষ এক মামলায় আট মাস কারাভোগ করেন। বেরিয়ে আবার জড়িয়ে পড়েন গার্মেন্টস পণ্য চোরাই কারবারে। চোরাই গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি ও ক্রয় বিষয়ে হাফিজ আক্তার বলেন, চোরাই পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। দেশের ছোট ছোট কিছু বায়িং হাউসে চোরাই গার্মেন্টস পণ্য যেত। আর ওই সব পণ্য ছোট বায়িং হাউসগুলো বিদেশী ছোট ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মার্কেটেও বিক্রি হতো চোরাই পণ্য। পোশাক পণ্য চুরি ঠেকাতে নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার, এজেন্সির ট্রাক/কাভার্ডভ্যান ভাড়া করলেও চালকের পরিচয়পত্র/ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি ও ছবি তুলে পোর্টে সিএ্যান্ডএফ এজেন্টকে পাঠানো, সম্ভব হলে এস্কট করে পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান পোর্টে পৌঁছানো, ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান কোথাও থামল কিনা, তা দেখার জন্য জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার ও মনিটরিং করা, বৈধ ও প্রতিষ্ঠিত ট্রান্সপোর্টের গাড়ি ব্যবহার, পোর্টে পৌঁছানোর পর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট যাতে লাগাতার কয়েকটা কার্টুন চেক করার এবং স্কেলে ওজন পরিমাপ করার সুপারিশ করেছে ডিবি।
×